পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক তুলে নিতে এনবিআরকে চিঠি

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ভারতে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির খবরে দেশের বাজারেও নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মাত্র তিন দিনে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩০ টাকা। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ আমদানির ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআরকে) চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, পেঁয়াজ আংশিক আমদানিনির্ভর একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। নিকট অতীতে এই পণ্যটির বাজার বেশ কয়েকবার অস্থিতিশীল হয়েছে। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে এই সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। বর্তমান বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, পণ্যটির মূল্য সম্প্রতি অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মূলত আমদানি মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া এর একটি অন্যতম কারণ। চিঠিতে আরও বলা হয়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে পেঁয়াজের ওপর কোনো আমদানি শুল্ক আরোপিত ছিল না। তারপরও এ সময় নানা কারণে আমদানির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ায় এই সমস্যা দীর্ঘতর হয়েছে। এদিকে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছর, তথা গত ১ জুলাই থেকে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এর ফলে পেঁয়াজের অনুৎপাদন সময় হিসেবে পরিচিত সেপ্টেম্বর-মার্চ সময়ে বাজারে এর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড?ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় স্বার্থে পেঁয়াজের ওপর আরোপিত ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আপাতত প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উৎপাদন সংকটে পড়ে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় ভারত। প্রায় পাঁচ মাস পর ফেব্‌রুয়ারির শেষে পেঁয়াজ রপ্তানিতে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় দেশটির সরকার। নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চের শেষ দিকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে প্রায় দুই মাস পেঁয়াজ আমদানি সম্ভব হয়নি। পাঁচ মাস ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং করোনার কারণে আরও দুই মাস, মোট ৭ মাস আমদানি করা সম্ভব হয়নি। আর এ সাতসহ গত জুন পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানিতে কোনো শুল্কো আরোপ ছিল না। তাই শুল্ক না থাকলেও সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি আমদানিকারকরা। এদিকে বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়া শুরু হয়। এরপর শনি ও রোববার দুই দিনেই খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। প্রথম দফায় শুক্রবার কেজিতে পেঁয়াজের দাম বাড়ে ১০ টাকা। শনিবার বাড়ে ১৫ টাকা এবং রোববার কেজিতে আরও ৫ টাকা বাড়ে। তবে সোমবার ও মঙ্গলবার নতুন করে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুক্রবারের আগে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের কেজি ছিল ৪০-৪৫ টাকা। যা শুক্রবার বেড়ে ৫০-৫৫ টাকা হয়। শনিবার ও রোববার দাম বেড়ে তা এখন ৬৫-৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি শুক্রবারের আগে ছিল ২৫-৩০ টাকার মধ্যে। এখন তা ৬০ টাকা হয়েছে। এদিকে পেঁয়াজের এ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে শুল্কহার পুনর্র্নিধারণের পাশাপাশি সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, পেঁয়াজ আমদানি ও বিক্রয়ের জন্য এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে টিসিবি। এদিকে রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠকে দেশের চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সভায় পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে বলা হয়, পেঁয়াজের সংকট বা মূল্যবৃদ্ধির কোনো সঙ্গত কারণ নেই। পেঁয়াজের অবৈধ মজুত বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করা হলে সরকার আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করছে। এদিকে মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা বেড়ে বর্তমানে ৬০ থেকে ৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এই সেপ্টেম্বরেই ভারত প্রথমে পেঁয়াজের রপ্তানিমূল্য বৃদ্ধি এবং পরে রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। ৫০ টাকার পেঁয়াজের দাম ওঠে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। এবারও ঠিক সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে বাড়ছে। তাই পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে জনমনে আশঙ্কা দেখা দিয়েছেু এবারও কি পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠবে? তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জনগণকে আশ্বস্ত করে বলেছে, এবার দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাজার যাতে কোনোভাবেই অস্থির না হয় সেজন্য আগামী সপ্তাহ থেকে নতুন পেঁয়াজ না ওঠা পর্যন্ত কম দামে টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশের বাজারে হঠাৎ লাফিয়ে দাম বাড়ার কারণ, ভারতে মূল্যবৃদ্ধি। ভারতীয় গণমাধ্যম তাদের প্রতিবেদনে জানায়, দেশটিতে বৃষ্টিতে মজুত থাকা পেঁয়াজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই কারণে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ উঠতেও বিলম্ব হবে। বাংলাদেশের বাজারেও এই নিত্যপণ্যটির দাম বেড়েছে।