ডিএসইর প্রধান সূচকে রেকর্ড

প্রকাশ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বেশকিছু দিন থেকেই সুবাতাস বইতে শুরু করেছে দেশের শেয়ারবাজারে। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে মূল্য সূচক। সেই সঙ্গে হচ্ছে মোটা অঙ্কের লেনদেনও। দফায় দফায় সূচক বেড়ে বৃহস্পতিবার পাঁচ হাজার পয়েন্টের মাইলফলক স্পর্শ করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক। এর মাধ্যমে এক বছরের মধ্যে সূচকটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে এসেছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা আর তারল্য সংকটে দীর্ঘদিন ধরেই ধুঁকছিল দেশের শেয়ারবাজার। এ পরিস্থিতিতে মার্চে মহামারি করোনার প্রকোপ শুরু হলে বড় ধরনের ধস নামে শেয়ারবাজারে। ঘটতে থাকে একের পর এক বড় দরপতন। এতে চলতি বছরের ১৮ মার্চ ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৩৬০৩ পয়েন্টে নেমে আসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে টানা ৬৬ দিন শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখা হয়। এর মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিউকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয় সরকার। সেই সঙ্গে পুরোনোদের বাদ দিয়ে নতুন তিন কমিশনারও নিয়োগ দেয়া হয়। নতুন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন দায়িত্ব নিয়ে শেয়ারবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নেন। আইন লঙ্ঘন করায় কিছু ব্যক্তি ও কোম্পানিকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়। সেই সঙ্গে বাতিল করা হয় বেশকিছু দুর্বল কোম্পানির আইপিও, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিএসইসির একের পর এক পদক্ষেপের কারণে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে মুখ ফিরিয়ে নেয়া অনেক বিনিয়োগকারী আবার সক্রিয় হয়। ফলে আগস্টে বিশ্বের মধ্যে পারফম্যান্সের দিক থেকে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার শীর্ষ স্থান দখল করে। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ইপিএলের প্রতিবেদনে এমন তথ্য ওঠে এসেছে। একই ধরনের তথ্য ওঠে এসেছে বস্নম্নমবার্গের প্রতিবেদনেও। দুই প্রতিবেদনের তথ্যেই দেখা গেছে, আগস্টে দেশের শেয়ারবাজারে ১৫ দশমিক ৮০ শতাংশ উত্থান হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ভিয়েতনামের শেয়ারবাজারে উত্থান হয়েছে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ। ৭ দশমিক ৪০ শতাংশ উত্থানের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রোমানিয়া। এ বিষয়ে বুধবার জাগো নিউজে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। পরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বসহকারে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে। শেয়ারবাজার নিয়ে এমন সুখবর আসার পর বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরুতেই উত্থানের আভাস পাওয়া যায়। তবে লেনদেনের শেষ দিকে সূচকের উত্থান বেশি হয়। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৯ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ১১ পয়েন্টে উঠে এসেছে। এর মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বরের পর সূচকটি আবার পাঁচ হাজার পয়েন্ট স্পর্শ করল। ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বরের পর সূচকটি সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সূচকটি পাঁচ হাজার ১৩ পয়েন্টে ছিল। প্রধান মূল্য সূচকের সঙ্গে বেড়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচক। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ১৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৭৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসই শরিয়াহ্‌ সূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ১৫৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে অংশ নেয়া ১৯০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ১১৭টি এবং ৪৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দিনভর বাজারে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় এক হাজার ৭৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো ফার্মার। কোম্পানিটির ৫৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ৪৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৪২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ওরিয়ন ফার্মা, ওরিয়ন ইনফিউশন, ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং, ফু-ওয়াং ফুড, গ্রামীণফোন, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১০০ পয়েন্ট। বাজারে লেনদেন হয়েছে ২৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৭৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪৭টির দাম বেড়েছে। কমেছে ৮৩টির এবং ৪৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।