অটোমোবাইল শিল্প নীতিমালার পুনঃমূল্যায়ন দাবি

প্রকাশ | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত প্রস্তাবিত 'অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২০'-এর পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। শনিবার রাজধানীর পল্টনের ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে (ইআরফ) 'প্রস্তাবিত অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা (খসড়া) ২০২০ প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি আব্দুল হকের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট হাবিব উলস্নাহ ডন এবং আব্দুল হামিদ শরীফ। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম সম্রাট। অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে বারভিডার সভাপতি আব্দুল হক বলেন, 'অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা ২০২০' প্রণয়নের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। বারভিডা সবসময়ই দেশে খাতভিত্তিক নতুন শিল্প স্থাপনের পক্ষে বলে উলেস্নখ করে বলেন 'মেড ইন বাংলাদেশ' ব্র্যান্ডের মোটরকার বা বাংলাদেশের 'ন্যাশনাল কার' বারভিডার জন্যও অনেক গর্বের বিষয় হবে। তবে যেকোনো শিল্প স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট খাতের বিদ্যমান শিল্পগুলোর অবস্থান, বিশ্বের অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা এবং দেশের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নেওয়া জরুরি বলে বারভিডা মত প্রকাশ করে। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালাটি দেশের বিদ্যমান শিল্পনীতি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়নি; বরং এটি বিদ্যমান শিল্পনীতির সাথে সাংঘর্ষিক। প্রস্তাবিত নীতিমালাটি দেশীয় গাড়ি নির্মাণের নামে একটি বড় রকমের স্ক্রু ড্রাইভিং শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ। এসকেডিকে বিলুপ্ত করা হয়েছে (সূত্র : এনবিআর) এবং সিকেডি নিয়ে যেখানে বিতর্ক রয়েছে, সেখানে সিবিইউ আমদানি বন্ধ করার অপপ্রয়াস নিয়ে পশ্চাদমুখী এসকেডি এমনকি সিকেডি আমদানি করার পরিকল্পনা দেশের জন্য কোনো দূরদর্শী পদক্ষেপ নয়। গাড়ির অভ্যন্তরীণ বাজার নূ্যনতম ১ লাখ ইউনিট হলে নতুন গাড়ির শিল্প প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে প্রস্তাবিত নীতিমালায় উলেস্নখ করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২০ হাজার ইউনিট গাড়ি বিক্রি হয়। এমন পরিস্থিতিতে কোনো আন্তর্জাতিক কোম্পানির জন্য এখানে সত্যিকারের অটোমোবাইল শিল্প স্থাপন কতটুকু টেকসই হবে তা বিবেচ্য বিষয়। এছাড়া সিকেডির ক্ষেত্রে স্থানীয়পর্যায়ে ৩০% যন্ত্রাংশ সংযোজনের শর্ত থাকা দরকার। বাংলাদেশের আমদানিকারকরা গাড়িভেদে সর্বোচ্চ ৮২৬ শতাংশ থেকে সর্বনিম্ন ১২৭ শতাংশ শুল্ক প্রদান করে থাকেন। বারভিডা শুল্ক ও কর বাবদ যে অর্থ প্রদান করে তা সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। প্রস্তাবিত নীতিমালায় নতুন গাড়ির শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে আহরিত রাজস্বের আকার কেমন হবে তা বিবেচনায় রাখা জরুরি। যদি কোনো দেশীয় বা আন্তর্জাতিক কোম্পানি বাংলাদেশে পূর্ণ শিল্প স্থাপনে আগ্রহী থাকে তবে তাদের জন্য বর্তমান শুল্ক ও কর হার এবং প্রণোদনা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি দেওয়া রয়েছে। বিশ্বমানের কোনো কোম্পানি বাংলাদেশে গাড়ি নির্মাণ শিল্প স্থাপন করতে চাইলে বারভিডা তাকে স্বাগত জানায়। তবে শুধু অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর নির্ভর না করে সেই কোম্পানি যেন নিজেরা রপ্তানির ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয় সেটি বাঞ্ছনীয়। জাপানের রিকন্ডিশন্ড গাড়িগুলোর ইমিশন কন্ট্রোল স্ট্যান্ডার্ডস ইউরো ৫ মানদন্ড শর্ত পূরণ করে বলে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, চিলি ও ইউএই'র মতো শিল্পোন্নত ধনী দেশও জাপানের রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির অনুমোদন দেয়। অন্যদিকে ভারত, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় উৎপাদিত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের গাড়িগুলো ইউরো ২ বা ৩ মানদন্ডের হয় এবং এসব গাড়ি জাপান থেকে আমদানিকৃত রিকন্ডিশন্ড গাড়ির তুলনায় অনেক বেশি পরিবেশ দূষিত করে। বারভিডা মনে করে যে, বাংলাদেশ যখন একটি উন্নয়নশীল এবং মধ্যম আয়ের দেশে গ্র্যাজুয়েশন হতে যাচ্ছে তখন এ দেশের মোটরগাড়ি শিল্পের জন্য একটি বাস্তবভিত্তিক, ভারসাম্যপূর্ণ, সম্মুখমুখী ও বাস্তবায়নযোগ্য নীতিমালা থাকা বিশেষ প্রয়োজন, যার লক্ষ্য হবে দেশের নাগরিক ও ভোক্তাদের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা এবং কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ নিশ্চিত রেখে একটি প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি শিল্প প্রতিষ্ঠা করা। এক্ষেত্রে অবশ্যই দেশে আগামী দিনের প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বমানের গাড়ি উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে।