ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ১৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেবে সরকার

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
চলতি মাসে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ বাড়তে পারে। আমানতের চাইতে ঋণের পরিমাণ অধিকাংশ ব্যাংকের বেশি। যার কারণে ইতোমধ্যে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। এই সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ বাড়ালে বেসরকারি খাত কিছুটা সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে অথর্মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অথর্বছরের প্রথম দিকে সরকারের আয় কম থাকায় ব্যাংক ঋণ বাড়লেও পরের দিকে সেটা সমন্ময় করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত অকশন ক্যালেন্ডার সূত্রে জাানা যায়, এ মাসে ট্রেজারি বিল এবং বন্ডের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৩ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করবে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংককের কমর্কতার্রা জানান, মেয়াদ পূতির্র কারণে এ মাস শেষে ৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা পরিশোধের পর নিট ঋণ থাকবে তিন হাজার ৫০ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কমর্কতার্রা বলছেন, সরকার ইতোমধ্যে ওভারড্রাফট এবং অগ্রিম অথর্ নেয়ার সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাজেট ব্যয় নিবার্হ করছে। সরকার নিজস্ব ক্ষমতাবলে কোনো ধরনের সিকিউরিটজি ইস্যু না করেই দৈনিক চাহিদা মেটাতে চার হাজার কোটি টাকা পযর্ন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। সরকারের ঋণ পরিচালনার সঙ্গে জড়িত একজন কমর্কতার্ জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ পযর্ন্ত রাজস্ব সংগ্রহ পরিস্থিতির ওপর নিভর্র করছে সরকার ব্যাংক থেকে আগামী মাসে কি পরিমাণ ঋণ নেবে। বতর্মানে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ সমন্ময়ের জন্য ১৪, ৯১, ১৮২ এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি চারটি ট্রেজারি বিল এবং ২,৫,১০,১৫ এবং ২০ বছর মেয়াদি পঁাচটি সরকারি বন্ড বিক্রি করে ব্যাংক থেকে টাকা সংগ্রহ করে থাকে। ব্যাংক কমর্কতার্রা বলছেন, ঋণ আমানতের রেশিও ঠিক না রেখে অধিকাংশ ব্যাংক আমানতের চাইতে ঋণ বেশি দিয়েছে। যার ফলে তারল্য সংকটে পড়েছে বেশিরভাগ ব্যাংক। এর ফলে ঋণের সুদহারও বাড়তে থাকে। সরকারের শীষর্ পযাের্য়র নিদের্শনা অনুসারে বাড়তে থাকা সুদহারে লাগাম টানেন ব্যাংকের মালিকরা। গত ১ জুলাই থেকে আমানতে সবোর্চ্চ ৬ এবং ঋণে সবোর্চ্চ ৯ শতাংশ কাযর্করের ঘোষণা রয়েছে। তবে তারল্য সংকটের কারণে ঋণ বিতরণ খুব একটা বাড়েনি। ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে ধীরে চলার নীতি নিয়েছে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে তারল্য সংকট আরও প্রকট হতে পারে। এদিকে অথর্ মন্ত্রণালয়ের সংশিষ্ট কমর্কতার্রা জানান, সবসময় অথর্বছরের শুরুর দিকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। বিভিন্ন প্রকল্প ও বরাদ্দের অথর্ পাওয়ার পর সেখান থেকে প্রয়োজন মেটানো ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা হয়, যার ফলে শুরুতে ব্যাংক ঋণ বাড়লেও পরবতীর্ সময়ে তা কমে যায়। তারা জানান, মূলত নিবার্চনের বছরে পদ্মা সেতু, এলএনজি টামির্নাল, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অগ্রগতির ফলে সরকারের প্রচুর নগদ অথের্র প্রয়োজন হচ্ছে। এদিকে, গত অথর্বছরে সরকারের ঋণগ্রহণ পযাের্লাচনা করে দেখা যায়, বেশিরভাগ সময়ে সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার তুলনায় পরিশোধ করছিল বেশি। এতে করে ব্যাংকে সরকারের ঋণস্থিতি অনেক কমে যায়। গত ২০১৭-১৮ অথর্বছরের মূল বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে সরকার ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ১৯ হাজার ৯১৭ কোটি টাকা করা হয়। আগের ২০১৬-১৭ অথর্বছরে ব্যাংক থেকে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছিল, পরিশোধ করেছিল তার চেয়ে ১৮ হাজার ২৯ কোটি টাকা বশি। তবে নতুন ২০১৮-১৯ অথর্বছরে ব্যাংক থেকে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মূলত সঞ্চয়পত্র থেকে ব্যাপক আয় বাড়ায় ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিতে হয়নি সরকারকে। চলতি বছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে সঞ্চয়পত্র আকষর্ণীয় হয়ে উঠেছে। কারণ ব্যাংক ও আথির্ক প্রতিষ্ঠানের চাইতে সঞ্চয়পত্রে সুদহার এখনো অনেক বেশি। সরকারের শীষর্ মহলের নিদেের্শ ব্যাংক মালিকরা সব ধরনের আমানতের সুদহার সবর্চ্চ ছয় শতাংশ নিধার্রণ করেন। এর পর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়তে থাকে। কারণ সঞ্চয়পত্রের সুদহার এখনো দুই অংকের ঘরে। ব্যাংক ও আথির্ক প্রতিষ্ঠানের মালিকদের চাপে পড়ে অথর্মন্ত্রী সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানোর ঘোষণা দিলেও সেটি বাস্তবায়ন করেননি। সবের্শষ গত মাসের সাত তারিখে মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী জানান, নিবার্চনের আগে সঞ্চয়পত্রের সুদ কমছে না। বতর্মানে পঁাচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ, পঁাচ বছর মেয়াদি পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ, পঁাচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন বছর মেয়াদি মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ এবং তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদ ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অথর্বছরে মোট ৭৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এর আগের অথর্বছরে (২০১৬-১৭) সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৭৫ হাজার ১৩৪ কোটি টাকার। সঞ্চয়পত্র বিক্রির বাড়ার কারণে সরকার গত কয়েক বছর ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া কমিয়েছে। তবে নিবার্চনি বছর হওয়ার কারণে চলতি অথর্বছরে সরকারের অনেক উন্নয়ন কমর্কাÐ পরিচালনা করতে হচ্ছে। যার ব্যয় নিবাের্হর জন্য ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে।