ইলিশের জীবনরহস্য উন্মোচন

গবেষকদের অভিনন্দন

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
এবার জাতীয় মাছ ইলিশের পূণার্ঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচন করল বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। ভৌগোলিক নিদের্শক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর দেশি ইলিশের জীবনরহস্য প্রস্তুতকরণ, জিনোমিক ডেটাবেজ স্থাপনে প্রায় দুই বছরের গবেষণায় এই সাফল্য ধরা দিয়েছে। বাকৃবির ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ও তার সহযোগী গবেষকরা দাবি করেছেন, ইলিশের পূণার্ঙ্গ ডি-নোভো জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের গবেষণাটি গবেষকদের নিজস্ব উদ্যোগ, স্বেচ্ছাশ্রম এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়েছে। আর এ গবেষণার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ মৎস্য খাতে পূণার্ঙ্গ জিনোম গবেষণার যুগে প্রবেশ করল, এমন দাবি তাদের। গবেষণার ফলে ইলিশের সংখ্যা ও মজুদের বিস্তৃতি নিধার্রণ করে টেকসই আহরণ ও সংরক্ষণের লাগসই কমর্সূচি প্রণয়নে আধুনিক এবং বাস্তব প্রযুক্তি প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হলো। সফল এই গবেষণা যে দেশের অগ্রগতির জন্য সহায়ক, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যেতে পারে। বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীরা এর আগে পাটের জিনোম রহস্য আবিষ্কার করে বিশ্বব্যাপী সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া কৃষি খাতের অন্যান্য বিষয়েও অভ‚তপূবর্ সাফল্য অজর্ন করে চলেছেন তারা। খরা ও লবণাক্তসহিষ্ণু নানা জাতের ধানের জাত আবিষ্কার করেও আলোচনায় আছেন। বলাই বাহুল্য, বিজ্ঞানীদের গবেষণার এই সফলতা দেশের কৃষি উৎপাদনব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবতর্ন এনেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ইলিশের পূণার্ঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচিত হলো। তথ্যানুযায়ী, ইলিশ নিয়ে গবেষণা শুরু হয় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে। ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই ইলিশের পূণার্ঙ্গ ডি-নোভো জিনোম অ্যাসেম্বলি প্রস্তুত করা হয়। এরপর ২৫ আগস্ট ইলিশের সম্পূণর্ জিনোম সিকোয়েন্স আন্তজাির্তক জিনোম ডেটাবেজ ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন’-এ (এনসিবিআই) জমা দেয়া হয়। ইলিশের জিনোম বিষয়ে গবেষণালব্ধ দুটি ফলাফল আন্তজাির্তক কনফারেন্সেও উপস্থাপন করেন গবেষকরা। এর পরই স্বীকৃতি মেলে এই গবেষণার। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিজ্ঞানীদের তথ্য মতে, বছরে দুই বার ইলিশের প্রজনন হয়ে থাকে। জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে এই দুই সময়ের ইলিশ জিনগতভাবে পৃথক কিনা তা যেমন জানা যাবে, তেমনিভাবে কোনো নিদির্ষ্ট নদীতে জন্ম নেয়া পোনা সাগরে যাওয়ার পর বড় হয়ে প্রজননের জন্য আবার একই নদীতে ফিরে আসে কিনা জানা যাবে সে তথ্যও। আর এসব তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত করা যাবে ইলিশের টেকসই আহরণ। ইলিশের জন্য দেশের কোথায় কতটি অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, তাও নিধার্রণ সহজতর হবে। এ ছাড়া দেশীয় ইলিশ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের (ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্য) ইলিশ থেকে জিনতাত্তি¡কভাবে স্বতন্ত্র কিনা, সেটাও নিশ্চিত হওয়া যাবে। গবেষকরা মনে করেন যে, জলবায়ু পরিবতের্নর সঙ্গে সংবেদনশীল ও খাপ খাওয়ার জন্য নিয়ামক জিন আবিষ্কারের মাধ্যমে ইলিশের বায়োলোজির ওপর বৈশি^ক জলবায়ু পরিবতের্নর প্রভাব নিরূপণও সহজ করবে এই গবেষণা। বলার অপেক্ষা রাখে না, ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও এর চাহিদা প্রচুর রয়েছে। যেহেতু ইলিশের বৈশ্বিক মোট উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ বাংলাদেশে হয়, তাই ইলিশ উৎপাদন আরও বাড়াতে পারলে অথৈর্নতিকভাবে লাভবান হবে দেশ। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে হলেও মাছটির জন্ম, বৃদ্ধি, প্রজননসহ পূণার্ঙ্গ জীবনরহস্য জানা জরুরি। ইলিশ পরিযায়ী মাছ, ডিম ছাড়ার জন্য সাগর থেকে নদীতে আসে। এখন যেহেতু পূণার্ঙ্গ জিনোম সিক্যুয়েন্স বা জীবনরহস্য আবিষ্কৃৃত হয়েছে, সেহেতু এ থেকে জানা যাবে, এরা কখন, কোথায় ডিম দেবে। কারণ জিনোমই জীবের সব জৈবিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। আর এসব জানা গেলে সরকার খুব সহজেই বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে ইলিশের টেকসই আহরণ এবং উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারবে। সবোর্পরি বলতে চাই, দেশের প্রাণরসায়ন বিজ্ঞানীদের বিশ্বমানে উত্তীণর্ করতে সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। সুযোগ করে দিতে হবে তরুণ বিজ্ঞানীদের। তরুণদের গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না, এটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। পাশাপাশি এর আগেও যেসব জিনোম সিক্যুয়েন্সিং বা জীবনরহস্য উন্মোচন হয়েছে, তাও যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পদক্ষেপ নিতে হবে। ইলিশের পূণার্ঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচনের মাধ্যমে দেশের কৃষি গবেষকদের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হলো আরেকটি পালক। সংশ্লিষ্ট গবেষকদের আমরা অভিনন্দন জানাই।