কৃষিঋণ বিতরণের সঙ্গে বেড়েছে আদায়

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করোনাকালেও থেমে নেই কৃষকের উৎপাদন। ফলে মহামারির মধ্যে এ খাতে বেড়েছে ঋণ বিতরণ। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ করেছে চার হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এ অঙ্ক আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময়ে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছিল তিন হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে মহামারির কারণে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা থাকলেও উল্টো চিত্র কৃষি খাতে। করোনার সময়ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছেন কৃষকরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তিন মাসে কৃষিঋণ আদায় হয়েছে ছয় হাজার ২৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের বছরের স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে আদায় হয়েছিল ১০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ছিল চার হাজার ৩৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। করোনার মধ্যেও কৃষি খাতের উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়া সচল থাকায় কৃষক সময়মতো কিস্তি ফেরত দিচ্ছেন। আলোচিত সময়ে কৃষি খাতে ব্যাংকগুলোর পুঞ্জিভূত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ চার হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ১৫ শতাংশ। করোনার সময়েও কৃষি খাতের উৎপাদন সচল ছিল। তাই এ খাতে ঋণের প্রয়োজনও বেশি ছিল। কিন্তু ব্যাংকগুলো তাদের সঠিক সময় ঋণসহায়তা দেয়নি। ফলে প্রথমবারের মতো গেল অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয় ব্যাংকগুলো। গেল (২০১৯-২০) অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ রেখেছিল ব্যাংকগুলো। কিন্তু অর্থবছরে শেষে এ খাতের ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গেল অর্থবছরে লক্ষ্যের চেয়ে পাঁচ দশমিক ৬৯ শতাংশ বা এক হাজার ৩৭৫ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ কম হয়। এরপরই নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কৃষি খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। চলতি (২০২০-২০২১) অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক কৃষি ও পলস্নীঋণ বিতর?ণের লক্ষ্য ঠিক ক?রে?ছে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় আট দশ?মিক ৯৯ শতাংশ বেশি। করোনা মহামারির আর্থিক সংকট মোকাবিলায় এবং সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে টেকসই উন্নয়নের নির্ধারিত লক্ষ্যের প্রথম ও প্রধান তিনটি লক্ষ্য তথা দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধামুক্তি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের উদ্দেশ্যে পলস্নী অঞ্চলে ব্যাপকহারে কৃষিঋণ প্রবাহ বাড়া?নোর ল?ক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ক?রে?ছে। কৃষি ও পলস্নীঋণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা বিবেচনায় চলতি অর্থবছরে ঘো?ষিত লক্ষ্যমাত্র?ার ম?ধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক ঋণ বিতরণ কর?বে ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগু?লো ঋণ দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক ক?রে?ছে ১৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে এক হাজার ৭৮২ কোটি টাকা যা লক্ষ্যমাত্রার ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে দুই হাজার ৯০২ কোটি টাকা যা লক্ষ্যমাত্রার ১৯ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। সব মিলিয়ে তিন মাসে ঋণ বিতরণ করেছে চার হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা যা লক্ষ্যমাত্রার ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। এদিকে মহামারির সংকটে কৃষি খাতকে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। বিশেষ প্রণোদনায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। কৃষি খাতে স্বল্পসুদে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির জন্য আগামী এক বছর সুদভর্তুকি দেবে সরকার। শস্য ও ফসল চাষে কৃষক পর্যায়ে গত এপ্রিল থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সুদহার চার শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি পাঁচ শতাংশ ভর্তুকি দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতসব প্রণোদনা ঘোষণার পরও এ খাতে আশানুরূপ বাড়ছে না কৃষিঋণ বিতরণ।