মজুতপ্রবণতায় ২০২১ সালেও চাঙ্গা থাকবে স্বর্ণ বাজার

প্রকাশ | ২৭ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বাজারবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির রেফিনিটিভ মেটাল রিসার্চের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে জুয়েলারি খাত ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় স্বর্ণের চাহিদা করোনা-পূববর্তী বেশ কম থাকবে। যদিও বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে রেকর্ড পরিমাণ মজুতের কারণে স্বর্ণ বাজার এ সময়ও বেশ চাঙ্গা থাকবে। নভেল করোনাভাইরাসের ধাক্কা পণ্যবাজারে বেশ পড়েছে। এর মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম হু-হু করে কমেছে। এর বিপরীতে বেড়েছে স্বর্ণের দাম। এ সময়ে স্বর্ণের চাহিদাও বেড়েছে। তবে সেটি ব্যবহারিক পর্যায়ে নয়। বরং বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে। যে ধারা আগামী বছরও অব্যাহত থাকবে। ফলে আগামী বছরও স্বর্ণের বাজার চাঙ্গা রাখার ক্ষেত্রে প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে থাকবে বিনিয়োগকারীরাই। বিশ্বব্যাপী বাজার ও অবকাঠামোগত তথ্য প্রদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান রেফিনিটিভ ইকনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বলা হয়েছে। খবর রয়টার্স। যেকোনো অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মন্দার সময় মূলত সেফ হ্যাভেন বা নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা বেড়ে যায়। আর এ কারণেই চলতি বছরে করোনা মহামারীর পর থেকেই বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণ ক্রয়ের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। এতে করে মূল্যবান ধাতুটির দাম রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি গত আগস্টে দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৭২ ডলার ৫০ সেন্ট পর্যন্ত উঠে যায়। মূলত এ সময়ে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণের মজুদ শুরু হয়। কারণ এসব দেশের বিনিয়োগকারীরা মহামারীর মধ্যেও রেকর্ড পরিমাণ দাম পেতে মজুদে জোর দিতে থাকে। যদিও বিনিয়োগকারীদের হাত ধরে এ বছরে স্বর্ণের বাজার অস্বাভাবিক চাঙ্গা হতে দেখা গেছে। তবে সেই তুলনায় ব্যবহারিক পর্যায়ে অর্থাৎ অলংকার হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা কমে এসেছে। বিশেষ করে বুলিয়ানের শীর্ষ ভোক্তা অঞ্চল এশিয়ার বাজারে স্বর্ণালংকারের চাহিদা অস্বাভাবিক হারে কমে এসেছে। গত শুক্রবার বৈশ্বিক স্বর্ণের চাহিদা ও সরবরাহের প্রান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রেফিনিটিভ মেটাল রিসার্চ। প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ক্যামেরুন আলেকজান্ডার বলেন, চলতি বছরে বিশ্বব্যাপী জুয়েলারি খাতে স্বর্ণের চাহিদা ৩১ শতাংশ কমে ১ হাজার ৩২৭ টনে এসে নামতে পারে। যদিও আগামী বছরে মোটামুটি একটা প্রবৃদ্ধি আসবে। এ সময়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এ খাতে স্বর্ণের চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৪৪৭ টনে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোতে চলতি বছরে স্বর্ণের চাহিদা কমে অর্ধেকে নেমে আসতে পারে। এ সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ৩১২ টনের মতো স্বর্ণ ক্রয় করতে পারে। যদিও আগামী বছরে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে। এ বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ৩৮৫ টনের মতো স্বর্ণ ক্রয় করবে বলে মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি। তবে জুয়েলারি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণের চাহিদা কমে এলেও বিনিয়োগকারীদের হাত ধরেই সে ঘাটতি পূরণ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বিনিয়োগের জন্য স্বর্ণ সংগ্রহ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর সরবরাহ আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণের জোগান দেয়া প্রতিষ্ঠান এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের (ইটিএফ) তথ্য বলছে, চলতি বছরে তারা স্বর্ণের মজুতের পরিমাণ বাড়িয়ে ১ হাজার ২০৫ টনে নিয়ে গেছে, যা গত বছরের তুলনায় তিন গুণ বেশি। এছাড়া আগামী বছরে প্রতিষ্ঠানটি মজুতের পরিমাণ আরো বাড়িয়ে ১ হাজার ৩৬২ টনে নিয়ে যাবে। এ যাবৎকালের মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতা পর্যায়েও চলতি বছরে স্বর্ণের চাহিদা কমে যাবে বলে জানিয়েছে রেফিনিটিভ মেটাল রিসার্চ।