আজ উদ্বোধন

এবার তাঁত পণ্যের মেলা অনলাইনে

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
পুঁজির অভাব, কাঁচামালের উচ্চমূল্যসহ নানা কারণে হারিয়ে যাচ্ছে হস্তচালিত তাঁত শিল্প। এছাড়া প্রযুক্তির সঙ্গে পালস্না দিয়ে টিকতে না পেরে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এ তাঁত। সে সঙ্গে কমছে এক্ষেত্রে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যাও। এ শিল্পকে চাঙ্গা করতে তাঁত পণ্য নিয়ে অনলাইনে শুরু হচ্ছে 'হেরিটেজ হ্যান্ডলুম ফেস্টিভ্যাল ২০২০'। 'আমার পণ্য আমার দেশ, ডিজিটাল বাংলাদেশ' শীর্ষক মাসব্যাপী এই মেলা শুরু হচ্ছে আজ। আয়োজকরা জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার অনলাইনে এ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করা হবে। আজ বুধবার বিকাল ৫টায় অনলাইন পস্নাটফর্ম 'জুম' এ ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। বাংলাদেশের গৌরবময় ঐতিহ্য ও কৃষ্টির অংশ ঐতিহ্যবাহী তাঁত পণ্যের প্রস্তুতকারক ও শীর্ষস্থানীয় ডিজাইনারদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে টানা তৃতীয়বারের মতো এ ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করছে এসএমই ফাউন্ডেশন ও অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্যাশন ডিজাইনার্স বাংলাদেশ (এএফডিবি)। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং শিল্পসচিব কে এম আলী আজম। সভাপতিত্ব করবেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম এবং ফেস্টিভ্যালের নানা দিক তুলে ধরবেন অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্যাশন ডিজাইনার্স বাংলাদেশের (এএফডিবি) সভাপতি মানতাশা আহমেদ। মেলার অনলাইন পেজে বয়নশিল্প প্রদর্শন, লাইভ ফ্যাশন শোর পাশাপাশি প্রায় ৬০টি অনলাইন স্টলে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য প্রদর্শন করা হবে শাড়ি-লুঙ্গি-গামছা, খাদি, নকশিকাঁথা, বেনারসি শাড়ি, টাঙ্গাইল শাড়ি, জামদানি শাড়ি, মনিপুরী কাপড়, রাঙ্গামাটির চাকমাসহ অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তৈরি কাপড় ও হস্তশিল্প পণ্য (যেমন-পাটজাত পণ্য বাঁশ ও বেতজাত পণ্য)। থাকবে খাতভিত্তিক পণ্যের ইতিহাস নিয়ে তথ্যচিত্র, পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাদের ধারণা প্রদান, অনলাইন সেমিনারসহ নানা আয়োজন। ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণ করবেন বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন, ডিজাইনার, শিল্পী, তাঁতিসহ ঐতিহ্যবাহী পণ্যের উদ্যোক্তারা। ফেস্টিভ্যালে লোকজ শিল্পীদের সংগীত পরিবেশনা, ফ্যাশন শো, দেশি পোশাক বিষয়ে কুইজ ও ফটো কনটেস্ট, সেমিনার, ক্রেতা-বিক্রেতা ম্যাচমেকিং ইভেন্টের আয়োজন থাকবে। মাসব্যাপী মেলা হলেও সমাপনী অনুষ্ঠান হবে আগামী ২৯ অক্টোবর দুপুর ১২টায়। অনলাইন পস্ন্যাটফর্ম 'জুম' এ সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, বস্ত্র ও পাট সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান। বক্তব্য রাখবেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সফিকুল ইসলাম এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ফ্যাশন ডিজাইনার্স অব বাংলাদেশের (এএফডিবি) সভাপতি মানতাশা আহমেদ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) ২০১৮ সালে পরিচালিতি তাঁতশুমারির হিসাব মতে দেশে বর্তমানে তাঁতের সংখ্যা ২ লাখ ৯০ হাজার ২৮২টি। এর মধ্যে সক্রিয় তাঁত রয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার ৭২৩টি। অন্যদিকে ২০০৩ সালের শুমারিতে তাঁতের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৫ হাজার ৫৫৬টি। এর মধ্যে সক্রিয় ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৮৫১টি। তারও আগে ১৯৯০ সালের শুমারিতে তাঁতের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৬টি এবং সক্রিয় ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ২১৩টি। এভাবে ধারবাহিকভাবেই কমছে তাঁতের সংখ্যা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তাঁত শুমারি-২০১৮ এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৩১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১ লাখ ৪০ হাজার ৪৫ এবং মহিলা রয়েছেন ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৭০ জন। তবে আগের শুমারিতে অনেক বেশি জনবল যুক্ত ছিল। ২০০৩ সালে মোট জনসংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৮৮ হাজার ১১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৭ এবং মহিলা ছিল ৪ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৮ জন। তার আগে ১৯৯০ সালের শুমারিতে দেখা গিয়েছিল তাঁত শিল্পের মধ্যে মোট জনসংখ্যা ছিল ১০ লাখ ২৭ হাজার ৪০৭ জন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৭১ হাজার ৭৬৫ এবং মহিলার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৪২ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভাগীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রাম বিভাগে ১ লাখ ২০ হাজার ১৯৮টি তাঁত রয়েছে। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ৯১ হাজার ৬৯৯টি তাঁত রয়েছে, ঢাকা বিভাগে ৫০ হাজার ২৬৩টি, খুলনা বিভাগে ১৮ হাজার ৬২১টি, রংপুরে বিভাগে ৪ হাজার ৫৮৩টি, সিলেট বিভাগে ৪ হাজার ১২২টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২৪৪টি তাঁত রয়েছে।