রাজস্ব আদায়ে সনাতন পদ্ধতি থেকে বের হচ্ছে এনবিআর

প্রকাশ | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ইমদাদ হোসাইন
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রাজস্ব আদায়ে সনাতন পদ্ধতি থেকে বের হয়ে অনলাইননিভর্র হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোডর্ (এনবিআর)। পঁাচ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয় এমন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে বসছে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় সফটওয়ার। বাধ্যতামূলক হচ্ছে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস। এছাড়া কর আদায় সহজ করার জন্য ১০ ই-টুল নিয়ে সামনে এগুচ্ছে সংস্থাটি। এই ১০ ই-টুলের মধ্যে রয়েছে- রিটানর্ প্রসেসিং টুল, অডিট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ব্যাংক সাসর্ টুল, অ্যাডভান্স ট্যাক্স রিমাইন্ডার, ডিমান্ড অ্যান্ড কালেকশন টুল, কাস্টমস ই-পেমেন্ট, ইলেকট্রনিক এক্সপোটর্ জেনারেল মেনিফেস্ট সাবমিশন, এলটিইউ ভ্যাট মোবাইল অ্যাপস, ই-সেভিংস সফটওয়্যার ও কাগোর্ ইমপোটর্ এক্সপোটের্র ডাটা সংরক্ষণের জন্য বেনাপাস সফটওয়্যার। এনবিআর সূত্র বলছে, কিছু আঞ্চলিক কর অফিসে এসব সফটওয়্যারের ব্যবহার ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। এছাড়া আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ৫ কোটি টাকার ওপর কোনো প্রতিষ্ঠানের টানর্ওভার (লেনদেন) হলেই নিজস্ব সফটওয়্যারের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করবে জাতীয় রাজস্ব বোডর্ । মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট নিবন্ধন নেয়া কোনো প্রতিষ্ঠান আগামী ১ জানুয়ারি থেকে এ আইন পরিপালন না করলে ভ্যাট আইন অনুযায়ী, তাদের বিরুদ্ধে অথর্দÐ ও শাস্তির বিধানও আরোপ করতে যাচ্ছে এনবিআর। তবে এমন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন খুব সহজ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নিজেদের অনুমোদিত সফটওয়্যার বা কম্পিউটার সিস্টেম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে শিগগিরই প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে। সাধারণ আদেশের এ প্রজ্ঞাপনে কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানকে এ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে, কীভাবে ব্যবহার করবে, এনবিআরের সঙ্গে তা কীভাবে যুক্ত হবে, হিসাব সংরক্ষণ পদ্ধতি কেমন হবে, কী কী তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে ও প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে এ সফটওয়্যার সংগ্রহ করবে, তার বিস্তারিত বণর্না থাকবে। সফটওয়্যারটির ব্যবহার পদ্ধতি ও এর বৈশিষ্ট্য বা সুবিধা-অসুবিধাও বিস্তারিতভাবে থাকছে ওই আদেশে। জানা গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠান আগের বছর ৫ কোটি টাকা বা তার চেয়ে বেশি মূল্যের পণ্য বিক্রি করেছে বা টানর্ওভার দেখিয়েছে, তাদের হিসাব ও দলিলাদি এনবিআর নিধাির্রত সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মূল্য সংযোজন কর কাযার্লয় বা এনবিআর কতৃর্ক নিয়ন্ত্রিত কম্পিউটার সিস্টেমে প্রেরণ করতে হবে এসব হিসাব। হিসাব সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে এনবিআর পরীক্ষিত ও অনুমোদিত সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। এনবিআর অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করা এ সফটওয়্যার কেন্দ্রীয় ডাটা বেজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। এনবিআর নিধাির্রত সফটওয়্যারে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলেই কেবল ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে যেসব প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই ভ্যাট আইন অনুযায়ী এনবিআর অনুমোদিত সফটওয়্যার ব্যবহার করছেন, তারা পুনরায় পরীক্ষার মাধ্যমে ওই সফটওয়্যার এনবিআরের ডাটাবেজের সঙ্গে যুক্ত করতে পারবেন। অন্যদিকে ভ?্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা ও পরিমাণ বৃদ্ধিতে ১৩ ধরনের ব?্যবসায় ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বাধ্যতামূলক করছে জাতীয় রাজস্ব বোডর্ (এনবিআর)। ফলে যেসব ব্যবসা কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) মেশিন রয়েছে তাদের নতুন ইএফডি মেশিন স্থাপন করতে হবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) সফটওয়?্যার ব্যবহার করবে, সেক্ষেত্রে ইএফডি’র পরিবতের্ ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল প্রিন্টার (ইএফপি) বা জাতীয় রাজস্ব বোডর্ কতৃর্ক নিধাির্রত ভিন্ন ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে। জানা গেছে, চলতি বছরের ১ নভেম্বর হতে দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকা এবং ১ ডিসেম্বর হতে দেশের সব জেলা শহর এলাকায় কাযর্কর ধরা হয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইনের ৩১ ধারা এবং মূসক বিধিমালার ২২ বিধির উপবিধি (৩) ও ৩৮ বিধিতে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এনবিআর একটি আদেশ জারি করেছে। আদেশে দেশের সকল সিটি করপোরেশন, জেলা শহর কিংবা সংশ্লিষ্ট কাস্টমস, এক্সাইস ও ভ্যাট কমিশনারেট কতৃর্ক নিবাির্চত সেবা প্রদানকারী ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত হিসাব সংরক্ষণ, বিক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এনবিআরের নিকট প্রেরণ ও বিক্রীত পণ্য এবং সেবার গ্রাহককে মূসক-১১ চালানপত্র ইস্যুর ক্ষেত্রে শতর্সাপেক্ষে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) অথবা ক্ষেত্রবিশেষে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল প্রিন্টার (ইএফপি) ও পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) সফটওয়?্যার বাধ?্যতামূলক করা হলো। খাতগুলো হলো- আবাসিক হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফাস্টফুড শপ, মিষ্টান্ন ভাÐার, আসবাবপত্র বিক্রয় কেন্দ্র, পোশাক বিক্রয়কেন্দ্র কিংবা বুটিক শপ, বিউটি পালার্র, ইলেকট্রনিক/ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালি সামগ্রীর বিক্রয়কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, অভিজাত শপিং সেন্টার-এর অন্তভুর্ক্ত সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ডিপাটের্মন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর ও সুপারশপ, অন্যান্য বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ী (পাইকারি ও খুচরা) প্রতিষ্ঠান এবং স্বণর্কার ও রৌপ্যকার বা স্বণর্ ও রৌপ্যের দোকান। এনবিআর সূত্রে জানা যায়, আগে ১১ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইসিআর মেশিন বাধ্যতামূলক থাকলেও যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাবে তা পুরোপুরি সফল হয়নি। অনেক সময় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইসিআর মেশিন টেম্পারিং করে ভ্যাট ফঁাকি দিত। কিন্তু ইএফডি মেশিন স্থাপন হলে মেশিন টেম্পারিং করা যাবে না। তাছাড়া প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিদিনকার বিক্রয়ের তথ্য রর সাভাের্র চলে আসবে এ সিস্টেমে।