টেলিকম ব্যবসাকে পুরোপুরি বিদায় জানাচ্ছে আরকম

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভারতীয় টেলিযোগাযোগ কোম্পানি রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস (আরকম) টেলিকম ব্যবসাকে পুরোপুরি বিদায় জানাতে যাচ্ছে। টেলিযোগাযোগের পরিবতের্ প্রতিষ্ঠানটি এখন রিয়েল স্টেট ব্যবসা স¤প্রসারণে নজর দেবে। আরকমের ১৪তম বাষির্ক সাধারণ সভায় (এজিএম) প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অনিল আম্বানি এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর বিজনেস স্ট্যান্ডাডর্ ও পিটিআই। ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে একসময় গুরুত্বপূণর্ দখল ছিল আরকমের। তবে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে এবং ধারাবাহিক লোকসানের কারণে প্রতিষ্ঠানটি তাদের টেলিযোগাযোগ সেবা খাতের কাযর্ক্রম আগেই সংকুচিত করেছে। এবার খাতটি থেকে নিজেদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিল ঋণগ্রস্ত আরকম। বাষির্ক সাধারণ সভায় অংশীদারদের উদ্দেশে অনিল আম্বানি বলেন, ঋণ পরিশোধের জন্য ভারত ও বিদেশি ঋণদাতা গোষ্ঠীর কাছ থেকে সম্পদ বিক্রির অনুমোদন পেয়েছে আরকম। ৪০ হাজার কোটি রুপি ঋণ পরিশোধকে আমরা এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। এ কারণে টেলিযোগাযোগ ব্যবসায় আর না এগোনোর সিদ্ধান্তনেয়া হয়েছে। অনেক কোম্পানিই একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা যেহেতু মোবাইল সেবা খাত থেকে বিদায় নিচ্ছি, সেহেতু অন্য ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমাদের ব্যবসা প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূণর্ ভূমিকা রাখবে রিলায়েন্স রিয়েলটি। বাষির্ক সাধারণ সভায় আরকম অধীনস্থ সব প্রতিষ্ঠানের অংশীদাররা অংশ নিয়েছিলেন। এতে আরকম ছাড়াও রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার, রিলায়েন্স পাওয়ার, রিলায়েন্স ক্যাপিটাল, হোম ফিন্যান্স অ্যান্ড নিপ্পন লাইফ এএমসির অংশীদাররা যোগ দিয়েছিলেন। এ সভায় বক্তব্যের সময় আরকমের অংশীদার শাইলেশ মেহতা টেলিযোগাযোগ খাতের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটির ব্যথর্ হওয়ার জন্য অনিল আম্বানিকে দায়ী করেন। আরকমের কাছে ৩৮টি ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের ৪০ হাজার কোটি রুপি পাওনা রয়েছে। এ ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে আরকম। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটি বেশকিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এর একটি হলো টেলিযোগাযোগ সম্পদ বিক্রি। কয়েক মাসের মধ্যেই ঋণ পরিশোধের প্রত্যাশা করছেন অনিল আম্বানি। টেলিযোগাযোগ সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে ১৮ হাজার কোটি রুপি সংগ্রহের পরিকল্পনা নিয়েছে আরকম। এর অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি গত বছর স্পেকট্রাম, টাওয়ার, ফাইবার ও মাল্টি-চ্যানেল নেটওয়াকর্ (এমসিএন) বিক্রি বিষয়ে মুকেশ আম্বানির নেতৃত্বাধীন রিলায়েন্স জিও ইনফোকমের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছে। এ বিষয়ে অনিল আম্বানি জানান, রিলায়েন্স জিওর কাছে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো ও ফাইবার বিক্রি সম্পন্নের শেষ পযাের্য় রয়েছে আরকম। স্পেকট্রাম শেয়ারিং বিষয়ে ডিপাটের্মন্ট অব টেলিকমিউনিকেশনস বা ডিওটির চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। বড় ভাই মুকেশ আম্বানিকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনিল আম্বানি বলেন, আরকমের ব্যবসা স¤প্রসারণে মুকেশ আম্বানির পরামশর্ বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। আরকমের কাছে সুইডিশ টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম নিমার্তা এরিকসনের ১ হাজার কোটি রুপ পাওনা রয়েছে। বারবার তাগাদা দেয়া সত্তে¡ও আরকম পাওনা পরিশোধ না করায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে এরিকসন। ন্যাশনাল কোম্পানি ল ট্রাইব্যুনাল (এনসিএলটি) ও ভারতের সুপ্রিম কোটর্ এরিকসনকে পাওনা পরিশোধের নিদের্শ দিয়েছেন। আদালতের নিদের্শনা অনুযায়ী, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এরিকসনকে ৫৫০ কোটি রুপি পরিশোধ করতে হবে আরকমকে। সভায় রিয়েল এস্টেট ব্যবসা সম্পকের্ অনিল আম্বানি বলেন, আরকম ধীরু ভাই আম্বানি নলেজ সিটির (ডিএকেসি) বাণিজ্যিক উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রসঙ্গত, ডিএকেসি হচ্ছে নাভি মুম্বাইয়ে ১৩৩ একর জায়গাজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) পাকর্। ভারতের টেলিযোগাযোগ সেবা খাতে রিলায়েন্স জিওর প্রবেশের ফলে এক ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির এ খাতে একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ প্রবণতা বেড়েছে। বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এতে দেশটিতে সেলফোন অপারেটরের সংখ্যা কমেছে। ভোডাফোন ইন্ডিয়া ও আইডিয়া সেলুলার একীভূত হয়ে ভোডাফোন আইডিয়া নামে নতুন কোম্পানি গঠন করেছে। এতে ভারতের টেলিকম খাত তিনটি বেসরকারি অপারেটরের (এয়ারটেল, ভোডাফোন আইডিয়া ও রিলায়েন্স জিও) দখলে চলে গেছে। টেলিনর এরই মধ্যে তাদের ভারতীয় কাযর্ক্রম গুটিয়ে ফেলেছে। দেউলিয়া ঘোষণার জন্য আবেদন জানিয়েছে এয়ারসেল। অন্যদিকে আরকম গত বছর তাদের ওয়্যারলেস সেবা বন্ধ করেছে।