বিনামূল্যে ১০ হাজার ইএফডি মেশিন দেবে এনবিআর

প্রকাশ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
বিভিন্ন সুপারশপ ও পাইকারি দোকানগুলোতে বিনামূল্যে ১০ হাজার ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইসেস (ইএফডি) মেশিন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোডর্ (এনবিআর)। রাজস্ব আদায়কারী এই সংস্থাটি বলছে, এখন থেকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই মেশিন বাধ্যতামূলকভাবে ব্যবহার করতে হবে। এনবিআর বলছে, একজন ভেন্ডারের মাধ্যমে এই মেশিনটি আমদানি করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরবরাহ করবে ভ্যাট অনলাইন কতৃর্পক্ষ। এনবিআরের এক কমর্কতার্ জানান, ইলেকট্রনিক ফিসকাল ডিভাইস ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেমের (ইএফডিএমএস) জন্য অক্টোবরে টেন্ডার আহŸান করা হবে। দেশীয় ও আন্তজাির্তক উভয় সরবরাহকারীরা এই মেশিন সরবরাহ করতে পারবে বলেও জানান ওই কমর্কতার্। তিনি আরও বলেন, ‘ইএফডি মেশিন আগামী জানুয়ারি থেকে কাযর্কর হবে বলে আশা করছি।’ এনবিআর কমর্কতার্রা জানান, ইএফডি মেশিনটির বাজারমূল্য ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পযর্ন্ত হতে পারে। এটি কাযর্কর হলে কোনো ব্যবসায়ী ভোক্তাদের কাছ থেকে ভ্যাট সংগ্রহ করে এনবিআরকে ভ্যাট ফঁাকি দিতে পারবেন না। তারা নিদির্ষ্ট কোড ছাড়া বিক্রয় রশিদ বা ভ্যাট চালান প্রিন্ট দিতে পারবেন না। তারা আরও জানান, প্রতিটি লেনদেনের হিসাব ইএফডি মেশিনে জমা হবে। ভ্যাট চালান বা বিক্রয় রশিদের মধ্যে একটি ইউনিক কোড লেখা থাকবে। এটি ভ্যাট পেমেন্টের প্রমাণ হিসেবে থাকবে। গত ৯ আগস্ট ১৩ ধরনের ব্যবসায়ের জন্য ইএএফডি মেশিন বাধ্যতামূলক করে একটি আদেশ জারি করেছিলো এনবিআর। চলতি বছরের ১ নভেম্বর হতে দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকা এবং ১ ডিসেম্বর হতে দেশের সব জেলা শহর এলাকায় কাযর্কর ধরা হয়েছে। এনবিআর সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইনের ৩১ ধারা এবং মূসক বিধিমালার ২২ বিধির উপ-বিধি (৩) ও ৩৮ বিধিতে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এনবিআর একটি আদেশ জারি করেছে। আদেশে দেশের সব সিটি করপোরেশন, জেলা শহর কিংবা সংশ্লিষ্ট কাস্টমস, এক্সাইস ও ভ্যাট কমিশনারেট কতৃর্ক নিবাির্চত সেবা প্রদানকারী ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত হিসাব সংরক্ষণ, বিক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য এনবিআরের কাছে প্রেরণ ও বিক্রিত পণ্য এবং সেবার গ্রাহককে মূসক-১১ চালানপত্র ইস্যুর ক্ষেত্রে শতর্সাপেক্ষে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) অথবা ক্ষেত্রবিশেষে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল প্রিন্টার (ইএফপি) ও পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) সফটওয়?্যার বাধ?্যতামূলক করা হলো। যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইএফডি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, সেগুলো হলো আবাসিক হোটেল, রেস্তোরঁা ও ফাস্টফুড শপ, মিষ্টান্ন ভান্ডার, আসবাবপত্র বিক্রয় কেন্দ্র, পোশাক বিক্রির কেন্দ্র/বুটিক শপ, বিউটি পালার্র, ইলেকট্রনিক/ইলেকট্রিক্যাল গৃহস্থালি সামগ্রীর বিক্রয় কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার, অভিজাত শপিং সেন্টারের অন্তভুর্ক্ত সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ডিপাটের্মন্টাল স্টোর, জেনারেল স্টোর/ সুপারশপ, বড় ও মাঝারি ব্যবসায় (পাইকারি ও খুচরা) প্রতিষ্ঠান, স্বণর্কার ও রৌপ্যকার এবং স্বণর্-রৌপ্যের দোকানদার এবং স্বণর্ পাইকারি। বতর্মানে এসব খাতে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআর ব্যবহার হয়। তবে বাধ্যতামূলক ছিল না। এখন তার পরিবতের্ উল্লিখিত খাতসমূহের ব্যবসায়ীরা পণ্য ও সেবা কেনাবেচায় ইএফডি ব্যবহার করবেন। এনবিআর বলছে, ইএফডি হচ্ছে অত্যাধুনিক এক ধরনের মেশিন বা হিসাব যন্ত্র। ইসিআরের উন্নত সংস্করণ। এটি ব্যবহার করলে এসব খাতে পণ্য ও সেবা বেচাকেনায় স্বচ্ছতা আসবে এবং ভ্যাট ফঁাকি কমবে। এর আগে এনবিআর থেকে ভ্যাট কমিশনারদের নিজ নিজ কমিশনারেটের অধীনে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ইএফডি মেশিন স্থাপন বা প্রতিস্থাপনে নিদের্শ দেয়া হয়েছে। এনবিআর বলছে, নতুন এই যন্ত্র ব্যবহার না করা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হবে। জরিমানার পরিমাণ ২০ হাজার টাকা থেকে সবোর্চ্চ ৫০ হাজার টাকা। বিগত ২০০৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো সেবার বিভিন্ন খাতে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআর মেশিন চালু করা হলেও ব্যবসায়ীদের বিরোধিতার কারণে তা সফল হয়নি। এনবিআর সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ সিটি করপোরেশন ও দেশব্যাপী জেলা শহরে উল্লিখিত খাতসমূহে বিশেষায়িত এই মেশিন ব্যবহার করা হবে। এতে লক্ষাধিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান নতুন এই প্রযুক্তির আওতায় আসবে। প্রসঙ্গত, ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে ২০০৮ সালের ১৫ মে ১১টি সেবা ও ব্যবসা খাতে ইসিআর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে এনবিআর একটি আদেশ জারি করেছিল। তবে কাযর্কর করা সম্ভব হয়নি। নতুন নিদের্শনায় ১৩টি সেবা ও ব্যবসা খাতে ইএফডি মেশিন বসানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।