শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বীমা খাতের উন্নয়নে অন্তরায় ইমেজ সংকট

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৫ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০০

ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও ইমেজ সংকটের কারণে দেশে বীমা শিল্প উন্নয়ন করতে পারছে বলে মনে করছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। এ কারণে বীমা শিল্পের স্বার্থে ইমেজ সংকট দূর করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। তারা বলছেন, বীমা কোম্পানিগুলো সঠিক সময়ে ও ঠিকমত গ্রাহককে বীমা দাবি পরিশোধ না করায় এ খাতে ইমেজ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

বীমার ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছেন না। ফলে বৈশ্বিক বীমা শিল্পের তুলনায় বাংলাদেশের বীমা শিল্প খুবই নগণ্য। এখানে মাথাপিছু বীমা ব্যয় মাত্র ৯ ডলার। জিডিপির অনুপাতে বীমা প্রিমিয়ামের পরিমাণ প্রায় দশমিক ৫ শতাংশ।

রোববার (২৪ জানুয়ারি) ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) কার্যালয়ে বীমা খাতের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম. মোশাররফ হোসেন বলেন, এখন কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়- আপনি কোথায় চাকরি করতে চান। তাহলে উত্তর আসবে- ব্যাংক অথবা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। তবে একটা সময় আসবে যখন চাকরির বাজারে বীমা হবে এক নম্বর। আমরা এ লক্ষ্যে বীমা খাতের সিরিজ রিফর্ম করছি।

তিনি বলেন, বীমা খাতের আমরা সুপারভিশন জোরদার করেছি। এই সুপারভিশনের কারণে সাধারণ বীমা কোম্পানিগুলোর প্রফিট অ্যাবিলিটি বেড়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরার সময় প্রগতি লাইফ ইন্সু্যরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জালালুল আজিম বলেন, বীমা কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের সঠিক সময়ে এবং ঠিকমত দাবির টাকা পরিশোধ করে না। এ কারণে এই খাতে ইমেজ সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। এই ইমেজ সঙ্কট দূর করতে আইডিআরএকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, বীমা খাত ডেপলপ হয়েছে অপেশাদার লোক দিয়ে। এখানে অনৈতিক চর্চা চলছে। আইডিআরএ সিইওদের যে যোগ্যতা বেঁধে দিয়েছে, দেশে ব্যবসা করা অনেক বীমা কোম্পানির সিইও'র সেই যোগ্যতা নেই। আবার বীমা কর্মীরা বেতন পান খুবই কম।

জালালুল আজিম বলেন, উন্নত দেশে বীমা বাধ্যতামূলক। বীমা ছাড়া ছেলেমেয়ে স্কুলে ভর্তি করা যায় না। হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া যায় না। কিন্তু আমাদের এখানে বীমার প্রয়োজন হয় না। বীমা খাতের উন্নয়নে আমাদের সামনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য এ খাতের ইমেজ সঙ্কট দূর করতে হবে।

অনুষ্ঠানের আরও এক প্রবন্ধ উপস্থাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সু্যরেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুলস্নাহ আল মাহমুদ বলেন, বৈশ্বিক বীমা শিল্পের তুলনায় বাংলাদেশের বীমা শিল্প খুবই নগণ্য। এখানে মাথাপিছু বীমা ব্যয় মাত্র ৯ ডলার। জিডিপির অনুপাতে বীমা প্রিমিয়ামের পরিমাণ প্রায় দশমিক ৫ শতাংশ। অথচ আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জিডিপির তুলনায় বীমা প্রিমিয়াম প্রায় ৪ শতাংশ। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় ১.২৫ শতাংশ, ভিয়েতনামে ২.২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ২ শতাংশ এবং ফিলিপিনে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। তিনি বলেন, বীমা খাতের বড় সমস্যা আস্থার সংকট। এই আস্থার সঙ্কট দূর করতে দ্রম্নততার সঙ্গে সঠিক নিয়মে গ্রাহকদের বীমা দাবি পরিশোধ করতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যাংক-ইন্সু্যরেন্স (ব্যাংক ও বীমা কোম্পানির অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বীমা পণ্য বিক্রি) চালু করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাবির মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছয়েদুর রহমান, ন্যাশনাল লাইফের সিইও মো. কাজিম উদ্দিন, বাংলাদেশ ইন্সু্যরেন্স একাডেমির চিফ ফ্যাকাল্টি মেম্বার ইব্রাহিম হোসেন প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে