ইউরোপে কমদামি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে

নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশি পোশাকশিল্পে

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

ওবায়দুর রহমান
বিশ্বব্যাপী তৈরি পোশাকের দাম কমছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে পোশাক রপ্তানি পরিমাণের দিক থেকে বাড়লেও দামের বিবেচনায় প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক নয়। বাংলাদেশে একসময় কম দামি পোশাক তৈরিতে শীষের্ ছিল। যার কারণে অনেক বিদেশি ক্রেতা বাংলাদেশমুখী ছিল না। এর প্রেক্ষিতে উদ্যোক্তারা তৈরি পোশাকে মূল্য সংযোজন করতে শুরু করেন। যার ফলে উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদনে মনোযোগী হন উদ্যোক্তারা। কিন্তু হঠাৎ করে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের দর পতনের ফলে কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেছেন ্উদ্যোক্তারা। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পোশাক শিল্পে। ইউরোপিয়ান কমিশনস ইউরোস্টাটের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশি তৈরি পোশাক ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে পরিমাণের দিক থেকে উল্লেখযোগ্য রপ্তানি বাড়লেও মূল্যে বিবেচনায় সেটা খুব বেশি নয়। ইউরোস্টাটের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে বাংলাদেশে থেকে আমদানি করা তৈরি পোশাকের পরিমাণ ৭৪ কোটি ৯২ লাখ কিলোগ্রাম যা গত বছরের একই সময়ের চাইতে ১৫.৭৫ শতাংশ বেশি। গত বছর ছিল ৬৪ কোটি ৭২ লাখ কিলোগ্রাম। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ইইউ বাজারে তৈরি পোশাক আমদানি মূল্যের বিচারে মাত্র ৩.৯২ শতাংশ বেড়েছে। টাকার অংকে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯৫২ কোটি ইউরো যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯১৬ কোটি ইউরো। এ খাতের বিশেষজ্ঞ এবং রপ্তানিকারকরা বলছেন, পরিমাণের তুলনায় মূল্য না বাড়ার কারণ ইইউ এর ক্রেতারা বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের মূল্য কম দিচ্ছে। এর কারণ হিসেবে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ভোক্তারা কম মূল্যের পোশাকের দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানি কারক সমিতির (বিজিএমইএ) জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপিত ফারুক হাসান বলেন, দিন দিন বৈশ্বিক ক্রেতারা তাদের পণ্যের দাম কমাচ্ছে। ইউরোস্টাটের তথ্য প্রমাণ করে তারা তৈরি পোশাকের আমদানির পরিমাণ বাড়ালেও ইউনিট প্রতি মূল্য কমিয়ে দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যে মূল্য সংযোজন করছে। কিন্ত ক্রেতারা ন্যায্য মূল্য দিতে চাই না। দিন দিন ব্যবসা খরচ বাড়ছে অথচ বিশ্ব্যবাপী ক্রেতারা কম দামের পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। যার ফলে আমরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়েছি। প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ইউরোপীয় বাজারে ভিয়েতনাম গত বছরের তুলনায় এ বছরের প্রথম সাত মাসে ১৭৭ কোটি ইউরো তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে। যা গত বছরের তুলনায় ২.৪২ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি করেছিল ১৭৩ কোটি ইউরো। যদিও পরিমাণের দিক থেকে ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে ১৯.২৬ শতাংশ। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বিশ্বব্যাপী ক্রেতাদের মধ্যে চাহিদার পরিবতর্ন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে প্রকাশিত তথ্য নিদের্শ করে যে ইইউ এর ক্রেতারা কম দামের পোশাক খুঁজছে। তিনি বলেন, পোশাক রপ্তানি পরিমাণের দিক দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু মূল্যে বিবেচনায় কমছে। যা বৈশ্বিক বাজারের নিম্নমুখী প্রবণতাকে নিদের্শ করে। মোয়াজ্জেম আরও বলেন, শুধু নিম্ন মূল্যের পণের দামই যে কমছে তা নয়। ক্রেতা চাহিদা কম থাকায় মধ্য ও উচ্চ মূল্যের পণ্যের ক্ষেত্রেও একই প্রভাব পড়ছে। বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামের পণ্যের প্রকৃতি এক নয়। তারপরেও দুই দেশ একই ধরনের সমস্যায় পড়ছে। যা প্রমাণ করে বিশ্বব্যাপী সব ধরনের তৈরি পোশাকের দাম কমছে। ইউরোস্টাটের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮ সালের প্রথম সাত মাসে চীনের ইউরোপীয় বাজারে দাম এবং পরিমাণ দুই বিবেচনায় পোশাক রপ্তানি কমেছে। পরিমাণের দিক থেকে ইইউ বাজারে আলোচ্য সময়ে চীনের পোশাক রপ্তানি ৫.০৩ শতাংশ কমেছে। এই সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৮৪ কোটি ১১ লাখ কিলোগ্রাম যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৮৮ কোটি ৫৬ লাখ কিলোগ্রাম। দামের বিবেচনায় রপ্তানি কমেছে ৬.৭৬ শতাংশ। রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৩৪২ কোটি ইউরো। যা গত বছর একই সময়ে ছিল ১ হাজার ৪৪০ কোটি ইউরো।