বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ কমছে

প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কমে ৩১ মাসে সবির্নম্ন পযাের্য় নেমেছে। গত আগস্ট শেষে প্রবৃদ্ধি নেমেছে ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশে। আগের মাস জুলাইতে যা ছিল ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। এর আগে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশে ছিল। এরপর আর কখনও ১৫ শতাংশের নিচে নামতে দেখা যায়নি। মূলত নিবার্চনের বছরে ব্যাংকগুলোর ঋণে লাগাম টানতে গত জানুয়ারিতে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানো এবং সুদ হার কমানোর সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংক খাতে তারল্যের টানাটানি তৈরি হয়েছে। এতে কমছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত আগস্ট শেষে বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ দশমিক ৯৫ শতাংশে। আগের মাস জুলাইয়ে এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। আগস্টে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা ৩১ মাসে হয়নি। এর আগে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশে ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত জানুয়ারিতে ঋণ আমানত অনুপাত (এডিআর) কমানো এবং সুদহার কমানোর সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংক খাতে তারল্যের (নগদ টাকা) সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, আমদানি বৃদ্ধিসহ কিছু কারণে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে ঋণ চাহিদা ব্যাপক বাড়তে থাকে। ফলে তারল্যের ওপরও চাপ পড়ে। এক অঙ্কের নিচে নেমে আসা ঋণের সুদহার বেড়ে দুই অঙ্ক হয়ে যায়। অনেক ব্যাংক ১০ শতাংশের বেশি সুদে আমানত নিতেও শুরু করে। এর মধ্যে গত ৩০ জানুয়ারি ব্যাংক খাতের এডিআর কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি চলতি বছরের ২০ জুন সুদহার কমানোর বিষয়ে এক বৈঠক করে। সে বৈঠকে তারা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ এবং ৬ শতাংশ সুদে আমানত নেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে আশানুরূপ হারে আমানত পাচ্ছে না অধিকাংশ ব্যাংক। কারণ, ব্যাংকের আমানতের চেয়ে বেশি সুদ পাওয়া যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে। ফলে মানুষ ব্যাংকের রাখা আমানত তুলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে। অবশ্য সরকারের উচ্চপযাের্য়র সমঝোতায় সরকারি অথর্ যাতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো পায় সে জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সে অনুযায়ী নগদ অথর্ও পেয়েছে ব্যাংকগুলো। বতর্মানে যেসব ব্যাংকের এডিআর নিধাির্রত লক্ষ্যমাত্রার ওপর রয়েছে, নানা উপায়ে তারা তা সমন্বয়ের চেষ্টার ফলে নতুন করে ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। এডিআর যেন বেড়ে না যায় এ জন্য লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকা ব্যাংকগুলোও সতকর্তার সঙ্গে ঋণ বিতরণ করছে। সব মিলিয়ে ব্যাপক চাপে পড়ে ব্যাংকগুলো আগের মতো আর ঋণ বাড়াতে পারছে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কাক্সিক্ষত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অজের্নর জন্য বাজারে মুদ্রা ও ঋণ সরবরাহ সম্পকের্ একটি আগাম ধারণা দিতে প্রতি ৬ মাসের মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অথর্বছরের প্রথমাধের্র মুদ্রানীতিতে আগামী ডিসেম্বর নাগাদ বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভনর্র খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এডিআর কমানো ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সুদহার নিদির্ষ্ট করে দেয়ার কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। সুদহার বেঁধে দেয়ায় আমানতের সুদহারও কমে গেছে। ফলে ব্যাংকিং খাতের আমানত না থাকায় তারা বিনিয়োগ করতে পারেনি। তিনি বলেন, বেসরকারি খাত জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা অজের্ন বড় ভ‚মিকা পালন করে থাকে। এ খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে গেলে তাতে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা বাড়তে থাকে। এতে কমর্সংস্থানও কমে যাবে বলে তিনি মনে করেন। বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো বলছে, এখন ব্যাংকের আমানত অনেক কমে গেছে। অন্যদিকে নিবার্চনের বছরে উদ্যোক্তারাও যেমন ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় আনে, তেমনই ব্যাংকগুলোও বাড়তি সতকর্তা অবলম্বন করে।