স্টিস ফিক্সের সিইও ক্যাটরিনা লেইক

‘এক পা পেছনে ফেলে চিন্তা করতে হবে’

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ক্যাটরিনা লেইক
খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। স্ট্যানফোডের্ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ভাবতেন গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ ও সাগের্ই ব্রিনের মতো কোডারদের নিয়ে। তারা কীভাবে সফল? কীভাবে তারা কাজটি করেন? ইত্যকার ভাবনায় সময় কাটত তার। ক্যাটরিনা লেইকের বয়স এখন মাত্র ৩৫ বছর। এই বয়সেই তিনি ৩ বিলিয়ন ডলারের একটি কোম্পানির মালিক। তার কোম্পানির নাম স্টিস ফিক্স। প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নিবার্হী কমর্কতার্ (সিইও) তিনি। স্টিস ফিক্সের প্রতিষ্ঠাতা ক্যাটরিনা লেইক এখন আমেরিকার সবচেয়ে সম্পদশালী উদ্যোক্তাদের একজন। অথচ কয়েক বছর আগেও তিনি ভাবতে পারেননি তিনি একটি কোম্পানির সিইও হবেন! সিএনএনের পপি হারলোর সঙ্গে আলাপকালে তার ভাষ্য, ‘আপনি সবখানে আমার মতো প্রতিষ্ঠাতা সিইও হয়তো পাবেন না। আমি একজন সাধারণ মেয়ে হিসেবেই ক্যালিফোনির্য়ায় বেড়ে উঠেছি। অন্যসব মেয়ের প্রতি আপনার যা প্রত্যাশা থাকে, আমার কাছেও ঠিক তেমন প্রত্যাশাই করেছিল সবাই।’ তো কোন মন্ত্রে সফলতা এত দ্রæত ধরা দিল? তাও খোলাসা করলেন তিনি। জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে গুগলের প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেইজ ও সাগের্ই ব্রিনের মতো কোডারদের নিয়ে ভাবতেন। যারা কিনা একটি গ্যারেজে বসেই একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেছিল। বারবার সেখানে নিজেকে ভাবতে চেয়েছেন, কিন্তু তাদের জায়গায় কিছুতেই নিজেকে বসাতে পারছিলেন না। কিন্তু বিশ্বাস ছিল সে রকম কিছু একটা পারবেন, আর সেটি পাথেয় হিসেবে কাজ করেছে। ক্যাটরিনা লেইক এখন আমেরিকার কোনও পাবলিক কোম্পানির সবচেয়ে তরুণ সিইও। কোনও বাধাই তাকে আটকে রাখতে পারেনি। এই তো গেলো বছরই ফোবর্স ম্যাগাজিনে আমেরিকার সেলফ-মেইড কোনও কোম্পানির সবচেয়ে সম্পদশালী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন তিনি। বাবার কথা মতোই স্ট্যানফোডের্র একটি মেডিকেল প্রোগ্রামে ভতির্ হয়েছিলেন লেইক। ডাক্তার হবেন বলে বাবার কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন এই তরুণী। কিন্তু মেডিকেলের ল্যাবের চেয়েও তাকে বিশ্ব অথর্নীতি মাদকের মতো টানত। তিনি একটি রিটেইল কনসালট্যান্ট গ্রæপে কাজ করতে শুরু করলেন। একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফামের্ও কাজ করেছেন। এরপর হাভার্ডর্ বিজনেস স্কুলে উদ্যোক্তা বিষয়ে মাস্টাসর্ ডিগ্রি শেষ করেন তিনি। হাভাডের্ পড়ার সময়েই স্টিস ফিক্সের কনসেপ্ট মাথায় আসে তার। ক্লাসের প্রজেক্টের অংশ ছিল এমন যে কীভাবে নারীদের ফ্যাশনেবল জিনিসগুলো খুব সহজে তাদের কাছে পেঁৗছে দেয়া যায়। কীভাবে এই ব্যবসার পরিসর বড় করা যায়। একজন ব্যক্তির চাহিদা কীভাবে পূরণ করা যায়। শপিংয়ের ওপর এলগরিদম ( স্টেপ বাই স্টেপ) পুরোটাই রপ্ত করতে হয়েছে তার। সেখানে তিনি শিখেছেন কিভাবে এক বাক্সেই একজন নারীর ফ্যাশনের পোশাকের মাপ মতো স্টাইল, সাইজ ও ফিট অনুযায়ী ডেলিভারি দেয়া যায়। স্টিস ফিক্সের শুরু হয়েছিলো ২০১১ সালে। বতর্মানে কোম্পানিটি ২.৭ মিলিয়ন কাস্টমারসহ ১ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে আসছে। লেইক বলেন, ‘আমাদের সব প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে সংগঠিত প্রয়াস। মানুষ আমাদের কোম্পানি সম্পকের্ অন্যকেও বলে। এটা আমাদের বড় শক্তি।’ কিন্তু সাফল্যের সঁাকো পার হওয়া কি অত সোজা ছিল? না, তা কখনোই না। ক্যাটরিনা লেইক এমন একটি শিল্পে অথর্ উপাজের্নর জন্য সংগ্রাম করছিলেন যেখানে পুরুষ শাসিত বিনিয়োগকারীরা ঘোরাফেরা করছিল। তার ভাষ্য, আমি পুরুষদের একটি রুমে ডেকে এনে বুঝাতাম আপনাদের চিন্তার কোনও কারণ নেই, এটি মূলত একজন নারী কি চান সেটির চাহিদা পূরণ করার সামান্য প্রয়াস। তিনি আরও বলেন, এটি ছিল শুধুই নারীদের পণ্য। আমি ধরেই নিয়েছিলাম তারা কোনোভাবেই আমাকে সহায়তা করবেন না। সত্যিকারাথের্ আপনি এসব ব্যক্তিদেরকে দোষ দিতেও পারেন না। আপনি এক পা পেছনে ফেলে তারপর চিন্তা করতে হবে। যেখানে সমাজের ৯৪ শতাংশ ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিনিয়োগকারী পুরুষ। তাদেরও একই মতামত। সুতরাং প্রশ্নাতীতভাবেই আমার কাজটা খুবই কঠিন ছিল। একটি কোম্পানিকে পাবলিক কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাতো আরও কঠিন কাজ। প্রতিষ্ঠার ঠিক কয়েকদিন আগের কথা। একই বছরের নভেম্বরে শেয়ারবাজারে তাদের অফার করা মূল্য ২০ ডলার থেকে নামিয়ে ১৮ ডলারে আনতে বাধ্য করা হয়। লেনদেন শুরু হয় ১৬ দশমকি ৯০ ডলারে, কিন্তু একই দিনের শেষ বেলায় সেই দর গিয়ে থামে ১৫ দশমকি ১৫ ডলারে। তিনি বলেন, ‘সে সময় অবশ্য অন্য হাওয়া বইতে শুরু করল কিন্তু আমরা সেটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঘুরে দঁাড়িয়েছিলাম। আমাদের খুব বেশি অবমূল্যায়ন করা হচ্ছিল। তবে আমরা নিজেদের প্রমাণের জন্য যে একটি জায়গা পেয়েছি তাতেই খুশি ছিলাম। কে কি ভাবল, তা দেখিনি।’ সেই আইপিও চলাকালীন একটি মজার ঘটনা ঘটল। লেইক তার ১৪ মাসের একটি বাচ্চাকে কোলে করে একটি ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিলেন এই বলে যে, এ বাচ্চাটির মা (লেইক) একটি পাবলিক কোম্পানির মালিক। ব্যস, তাতেই ভাইরাল হয়ে গেল ছবিটি। এই ছবিটি নারীদের জন্য রোল মডেল হয়ে গেল। বিশেষ করে মায়েদের জন্য। আর তাতেই স্টাটর্-আপ দুনিয়ায় তাকে চিনতে শুরু করল। তিনি বলেন, ‘তখনকার যে সাড়া পেয়েছিলাম তা ছিলো অবিশ্বাস্য, আমি কখনো এমনটি ভাবিনি।’ সিকিউরিটিজের বাজারে এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্টিস ফিক্স। তার শেয়ারের দাম তখন দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হয়ে যায়। দাম প্রায় ৩০ ডলারের মধ্যেই চলতে থাকে। এরপরই বাড়তে থাকে তাদের কাস্টমার, বিক্রি ও মুনাফা। এই কোম্পানির বতর্মান বাজার এখন ৩ বিলিয়ন ডলার। লেইক বলছিলেন, ‘আমি মনে করি আমার সংস্কৃতি কি তা নিয়ে ভাবতেই আমার সময় ব্যয় করতে হয়েছে বেশি। আমি সৃষ্টিশীলতার পথ বেছে নিয়েছি। আমি এখন যা পাচ্ছি তা সেটিরই প্রভাব।’ সূত্র: সিএনএন