তুলার আমদানি নিভর্রতা কমাতে বিশেষ উদ্যোগ

হ চাহিদার ৯৭ শতাংশ পূরণ হয় আমদানিতে হ স্থানীয় কৃষকদের দেয়া হচ্ছে নগদ সহায়তা হ হাইব্রিড চাষে উৎপাদন বাড়বে, পাহাড়ে হবে তুলা চাষ হ তামাকের পরিবতের্ তুলা চাষে উৎসাহ প্রদান হ বীজ কোম্পানিগুলোর এ খাতে বিপুল বিনিয়োগ

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

ওবায়দুর রহমান
দেশে ব্যাপক তুলার চাহিদা থাকলেও সেই অনুযায়ী উৎপাদন নেই বললেই চলে। চাহিদার প্রায় ৯৭ শতাংশ পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। এজন্য আমদানি নিভর্রতা কমিয়ে দেশীয় তুলার উৎপাদন বাড়াতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। আর তাই কৃষকদের দেয়া হচ্ছে নগদ সহায়তা। বড় বড় বিজ কোম্পানিগুলো বিপুল অংকের বিনিয়োগ করছে এ খাতে। ২০২১ সাল নাগাদ ২.৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। আর বিশ্ব বাজারের ৬ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। তবে দেশে চাহিদা অনুযায়ী তুলার উৎপাদন না থাকায় প্রতি বছর বিলিয়ন ডলারের সুতা আমদানি করতে হয় স্পিনিং মিল ও বস্ত্র কল উদ্যোক্তাদের। গত অথর্বছরেই প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করেছেন মিল মালিকরা। এই প্রেক্ষিতে দেশীয় তুলা উৎপাদন বাড়াতে তুলা উন্নয়ন বোডর্ (সিডিবি) বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। সিডিবি কৃষকদের তুলা চাষে উৎসাহিত করার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে। ইতোমধ্যে এই তহবিল থেকে ১৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়া শুরু করেছে। যশোর, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, গাজীপুর এবং ময়মনসিংহের পাশাপাশি পাহাড়ি এলাকায় তুলা চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে সিডিবি। সিডিবির সহযোগী পরিচালক মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, তারা আগামী পঁাচ বছরে তুলা চাষ ৪৩ হাজার ৫০০ একর থেকে ৫৫ হাজার একরে নিয়ে যেতে চান। সেই পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছেন তারা। একই সময়ে উৎপাদন দ্বিগুণ করার লক্ষে হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করা হবে। বতর্মানে প্রতি হেক্টরে ১.৫ টন তুলা উৎপাদন হয়। তবে হাইব্রিড বীজ ব্যবহার করলে সেটি বেড়ে ৩ থেকে ৩.৫ টন পযর্ন্ত হতে পারে। এখন তুলা চাষে ৭ মাস সময় লাগে। আমন ধান কাটার পর ওই জমিতে স্বল্প মেয়াদি জাতের তুলা চাষের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খরা প্রবণ এলাকা গুলোতেও পতিত জমিতে তুলা চাষের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ তুলা অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএ) সভাপতি মেহেদি আলী বলেন, আমরা আশাবাদী একদিন দেশে উৎপাদিত তুলা চাহিদার ১৫ শতাংশ পূরণ করতে পারবে। বেশ কিছু বড় বিজ কোম্পানি তুলা চাষের জন্য বিনিয়োগ করছে। একই সঙ্গে অনেক মিল মালিকরা চুক্তি ভিত্তিক তুলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আমাদের নিজস্ব তুলার প্রয়োজন, কারণ আমরা সব সময় বিদেশি তুলার উপর নিভর্র থাকতে পারি না। আলী বলেন, দুই তিন বছর আগেও ভারত থেকে প্রায় ৬০ শতাংশ তুলা আসত। তবে আমদানিকারকরা আফ্রিকায় নতুন বাজার খুঁজে পাওয়ায় বতর্মানে আমদানির প্রায় ৫০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সেক্রেটারি মুনসুর আহমেদ বলেন, স্থানীয় তুলা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তাছাড়া কম দামের জন্য মিল মালিক এবং ব্যবসায়ীরা আমদানির উপর বেশি নিভর্রশীল। তুলা উন্নয়ন বোডর্ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে (২০১৮-১৯) যশোর জোনে ৩ হাজার ৫শ হেক্টও জমিতে তুলা চাষ করে ২৩ হাজার ৬৫ বেল তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। ঝিনাইদহ জোনে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধাযর্ করা হয়েছে ৪ হাজার ৬শ হেক্টরে। তুলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৩১৪ বেল। রাজশাহী জোনে ২৮শ হেক্টরে তুলা চায় করে ১৮ হাজার ৪৫২ বেল তুলা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধাযর্ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জোনে ৪ হাজার ৬শ হেক্টরে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধাযর্ করা হয়েছে। তুলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৩১৪ বেল। বগুড়া জোনে ২২শ ৫০ হেক্টরে তুলা চাষ করে ১৪ হাজার ৮২৮ বেল তুলা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধাযর্ করা হয়েছে। কুষ্টিয়া জোনে তুলা চাষ লক্ষ্যমাত্রা ধাযর্ করা হয়েছে ৪ হাজার ৬শ হেক্টরে। তুলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৩১৪ বেল। রংপুর জোনে ২৬শ হেক্টরে তুলা চাষ করে ১৭ হাজার ১৩৪ বেল তুলা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধাযর্ করা হয়েছে। ঠাকুরগাঁও জোনে ১৭শ হেক্টরে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধাযর্ করা হয়েছে। তুলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে ১১ হাজার ২০৩ বেল। ময়মনসিংহ জোনে ২১শ হেক্টরে তুলা চাষ করে ১৩ হাজার ৮৩৯ বেল তুলা উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধাযর্ করা হয়েছে। ঢাকা জোনে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধাযর্ করা হয়েছে ১৭শ হেক্টরে। তুলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে ১১ হাজার ২০৩ বেল। তিন পাবর্ত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলায় ১১শ ৫০ হেক্টরে সমভূমির তুলা চাষ করে ৬ হাজার ৯২১ বেল তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধাযর্ করা হয়েছে। এছাড়া তিন পাবর্ত্য জেলায় ১৮ হাজার ৫শ হেক্টরে পাহাড়ি জাতের তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধাযর্ করা হয়েছে। পাহাড়ি জাতের তুলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৫৭৫ বেল। সিডিবি আশা করছে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ২.৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদিত হবে। যা বিশ্বের বৃহত তুলা আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মোট চাহিদার ৫-৭ শতাংশ পূরণ করবে। বতর্মানে বাংলাদেশ বছরে ৩ বিলিয়ন ডলারের তুলা আমদানি করে। গত অথর্বছরে ১.৬৫ বেল তুলা উৎপাদন হয়েছে। যা মোট চাহিদার ৩ শতাংশ। বাষির্ক চাহিদা বতর্মানে ১০ মিলিয়ন বেল।