এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মাঝপথে নকশায় পরিবতর্ন

য় নকশায় পরিবতের্নর ফলে বাড়ছে নিমার্ণ ব্যয় য় প্রথম ধাপের ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে

প্রকাশ | ০৪ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

আহমেদ তোফায়েল
দ্রæতগতিতে এগিয়ে চলছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (ডিইই) মাঝপথে নকশায় পরিবতর্ন আনা হয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পাটর্নারশিপের (পিপিপি) এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ রেলওয়ের দাবির প্রেক্ষিতে থাই অংশীদার বনানী থেকে কুতুব খালী পযর্ন্ত পিলারের নকশায় পরিবতর্ন এনেছে। সংশিষ্ট সূত্র জানায়, মেগা এ প্রকল্পে নতুন নতুন সমস্যা সামনে আসছে। আর এসব সমাধানে নকশা পরিবতর্ন করে এগিয়ে চলছে বহুল প্রতিক্ষিত এ উন্নয়ন প্রকল্প। নতুন নতুন সমস্যা সমাধানের জন্য এক্সপ্রেস ওয়ের নকশায় পরিবতর্ন অব্যাহত রয়েছে। জমি অধিগ্রহণের জটিলতা কমানোর জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন লাইনের উপর দিয়ে ডিইই’র নকশা করা হয়েছে। যদিও কিছু কিছু স্থানে রেলের জায়াগা খুবই সরু। সূত্র জানায়, বনানী থেকে ২৭ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের নিচ দিয়ে দুটি রেল লাইন নিমার্ণ হবে। নকশার সবের্শষ পরিবতর্ন অনুযায়ী এই অংশটি পোটার্ল ফ্রেম আকৃতির হবে। ডিইই এর বিমানবন্দর থেকে বনানী পযর্ন্ত পিলারগুলো মূলত ওয়াই আকৃতির। ডিইই’র বড় অংশ হযরত শাহজালাল আন্তজাির্তক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা চিটাগং মহাসড়কের কুতুবখালীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে। এটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এবং কমলাপুর রেলওয়ে বরাবর নিমির্ত হবে। সূত্র জানায়, ওয়াই আকৃতির পিলার দ্রæত গতির ট্রেন, ডাবল ডেকার ট্রেনের মতো রেলওয়ের ভবিষ্যতে সম্প্রসারণের পরিকল্পনাকে বঁাধা সৃষ্টি করতে পারে। এ কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে সেতু কতৃর্পক্ষকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে বলে। বতর্মানে কমলাপুর কেন্দ্রীয় রেল স্টেশন থেকে এই রাস্তায় দুটি ট্রাকে প্রতিদিন ৭২টি ট্রেন চলাচল করছে। নকশার সঙ্গে জড়িত রেলওয়ের এক কমর্কতার্ বলেন, তারা নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এমন দাবি উপস্থাপন করেছেন। সূত্র জানায়, গত কয়েক মাসে ধারবাহিকভাবে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ডিজাইন বিশেষজ্ঞ এবং থাই কোম্পানি এক্সপ্রেসওয়ের উপরে ১৫-১৬ ফিট উচ্চতা এবং পাশে ৬৫ ফিট প্রশ্বস্ত জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। নকশা পরিবতের্নর কারণে প্রকল্পের নিমার্ণ ব্যয় বাড়লেও কোনোপক্ষই সেটি তা করেনি। তবে থাই কতৃর্পক্ষ ঢাকায় অতিরিক্ত ট্রাফিকের কারণে ভালো মুনাফা আসবে এমন প্রত্যাশা করছেন। চুক্তি অনুযায়ী একটি কার পুরো করিডর ব্যবহার করলে তাকে দিতে হবে ১২৫ টাকা এবং ইন্টারচেঞ্জের জন্য ১০০ টাকা। বাসের ক্ষেত্রে ভাড়া হবে ২৫০ টাকা এবং ট্রাকের ভাড়া ৫০০ এবং ৬২৫ টাকা। ইন্টারচেঞ্জ বাসের ক্ষেত্রে ২০০ এবং ট্রাকের ক্ষেত্রে ৪০০-৫০০ টাকা। এদিকে পুরো দমে এগিয়ে চলেছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। বিমানবন্দর যাওয়ার পথে কুড়িল বিশ্বরোড পার হলেই চোখে পড়বে বিশাল কমর্যজ্ঞ। রেললাইনের পাশ দিয়ে উঁচু দেয়াল পার হয়ে মাথা উঁচু করে দঁাড়াতে শুরু করেছে পিলারগুলো। বছরের শুরু থেকেই দ্রæত কাজ শেষ করতে দিন-রাত খেটে চলেছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী এবং শ্রমিকরা। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ (বিমানবন্দর-বনানী) এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ১৫০টি পিলারের কাজ। দ্রæততম সময়ে দ্বিতীয় (বনানী-তেজগঁাও) ও তৃতীয় অংশ (মগবাজার-কুতুবখালী) দৃশ্যমান করতে কাজ এগিয়ে নেয়া হচ্ছে বলেও জানা গেছে। এই প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হলে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টের যানজট এড়িয়ে মাত্র ৪০ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে। শুধু তাই নয়, নগরীর বিভিন্ন অংশে পৌঁছা যাবে দ্রæততম সময়ের মধ্যে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজ প্রায় ৩৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। পাইলিং, পিলার, ক্রসবিম বসানোর কাজ চলছে সমানতালে। এতদিন মাটির নিচে কাজ করা হয়েছে। ভিত্তির কাজ শেষ হওয়ায় এখন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে প্রকল্প। ২০২০ সালের মধ্যে এটা চালু করার টাগের্ট নিয়ে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নিমার্ণাধীন চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল লেনের দৈঘ্যর্ ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। এ ছাড়া ৩১টি র‌্যাম্পের দৈঘ্যর্ ২৭ কিলোমিটার। র‌্যাম্পসহ মোট দৈঘর্্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। তিন ভাগে বিভক্ত প্রকল্প এলাকার প্রথম অংশে বিমানবন্দর-বনানী পযর্ন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার, দ্বিতীয় অংশে বনানী-মগবাজার পযর্ন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার এবং তৃতীয় অংশে মগবাজার-কুতুবখালী পযর্ন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা দেবে সরকার। বাকি টাকা নিমার্তা প্রতিষ্ঠান ইতাল-থাই বিনিয়োগ করবে। প্রকল্পের জন্য মোট ২২০ দশমিক ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে ২৫ বছর পযর্ন্ত টোল আদায় করবে ইতাল-থাই। এরই মধ্যে এ প্রকল্পে ইতাল-থাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন। সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার (আরএসটিপি) তথ্যানুযায়ী, বাস্তবায়নের পর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। পুরো এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১১টি টোল প্লাজা, এর মধ্যে পঁাচটি হবে এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে। উল্লেখ্য, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিমাের্ণর জন্য ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি ইতাল-থাইয়ের সঙ্গে প্রথম চুক্তি করে সেতু বিভাগ। সে বছর ৩০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তি স্থাপন করেন। তবে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় কাজ আটকে থাকে দুই বছর। এরপর নকশা বদল ও অন্যান্য কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে নিমার্তা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করতে হয়।