তারুণ্যের ভিড়ে উৎসবমুখর আয়কর মেলা

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
রাজধানীর অফিসাসর্ ক্লাবে উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে আয়কর মেলা। শেষ হবে ১৯ নভেম্বর
আয়কর রিটানর্ জমা দিয়ে মেলার মধ্যেই সেলফি তুলতে ব্যস্ত অ্যামেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভাসিির্ট অব বাংলাদেশের (এআইইউবি) লেকচারার ইশরাত কবির। বয়স ২৮ বছর। এ নিয়ে তিনবার আয়কর জমা দিলেন তিনি। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, যেহেতু আয় করছেন, সরকারকে কর দিতেই হচ্ছে। এটি প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তিনিও দায়িত্ব পালন করছেন বলেই জানান। ইশরাত কবিরের মতো হাজারো তরুণের উপচেপড়া ভিড় রাজধানীর অফিসাসর্ ক্লাবের আয়কর মেলায়। অবশ্য শুধু তরুণরাই নয়, আয়কর জমা দিতে এসেছেন সকল শ্রেণির নাগরিক। সবার মুখেই এক বাতার্, ‘কর না দিলে দেশ গড়বো কি করে?’ অফিসাসর্ ক্লাবের স্টলগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। টানা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন রাজস্ব বোডের্র কমর্কতার্রা। ছুটির দিন হওয়ায় এই ভিড় মিনিটে মিনিটেই বাড়ছিল। হাসান নামের ২৫ বছরের এক তরুণ এসেছেন উত্তরা থেকে। চাকরি করেন এডিএন টেলিকমে প্রকৌশলী হিসেবে। এবার সবির্নম্ন ৫ হাজার টাকা কর জমা দিয়েছেন। বেশ উৎফুল্ল তিনি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের তুলনায় দেশের তরুণরা কর দিতে বেশি আগ্রহী। আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত। ব্যাংক বুথে গিয়ে দেখা গেল কেউ টাকা জমা দিচ্ছেন। কেউবা এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করে দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেবা দিতে ব্যস্ত সোনালী ব্যাংকের কমর্কতার্ আল আমিন। তিনি বলেন, প্রতিদিন সোনালী ব্যাংকের বুথেই সেবা নেন আড়াই থেকে ৩ হাজার মানুষ। শনিবার ছুটির দিন হওয়ায় ৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কি কি সেবা দেন? জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘সাধারণত মানুষ এসে বুঝতে পারেন না কিভাবে তিনি আয়কর জমা দিবেন। তারা কি ড্রাফট করবেন নাকি পেÑঅডার্র করবেন সেটি নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। এসব বিষয়গুলো নাগরিকদের সহজ করে বুঝিয়ে দেন তারা। গুলশান থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে বাইকে এসেছেন মো. সেলিম। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই চাকরিজীবি। সপরিবারে কর দিতে পেরে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে আছেন তিনি। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কর দিতে এসে তো মনে হচ্ছে কোনো বড় উৎসবে এসেছি। ভালো লাগছে এই ভেবে যে, আমরা নাগরিকরা নিজেদের কর সচেতনতা বাড়িয়েছি। আমার সন্তানও কর বিষয়ে ধারণা পেল। এতে তার মধ্যেও দেশপ্রেম বাড়বে। মেলায় সেবা দিতে ব্যস্ত রাজস্ব বোডের্র কর পরিদশর্ক মাসুদ-উর-রহমান। হলরুমে কয়েকজন বয়স্ক মানুষকে বেশ ভালো করেই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন কিভাবে তারা ফরম পূরণ করে কর জমা দেবেন, কি কি কাগজপত্র লাগবে- সব যতœ করেই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মানুষ রিটানর্ ফমর্ জমা দিয়ে ¯িøপ দিতে পারছে, উপহারস্বরূপ ব্যাগও পাচ্ছে। করমেলায় এসে কোনো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে না। শতাধিক হেল্প ডেস্ক থেকে গাইডলাইন নেয়া, কোন করদাতা কোন কর অঞ্চলে সেজন্য রয়েছে সিটিজেন চাটার্র, রয়েছে ফ্রি স্বাস্থ্যসেবার জন্য মেডিকেল বুথ, বয়স্কদের জন্য সিনিয়র সিটিজেন সেবা, কর শিক্ষণ ফোরামসহ ইত্যাকার সব সেবা। তরুণদের কর দেয়ার উৎসাহ দেখে তিনি বলেন, যদিও সব শ্রেণির মানুষই এখানে কর দিতে এসেছেন, তবে তরুণদের কর দেয়ার উদ্দীপনা চোখে পড়ার মতো। দেশের তরুণরা এখন কর দেয়ার ব্যাপারে উজ্জীবিত, বেশ আগ্রহী। সবাই কর প্রদান করলে দেশ আরও উন্নত হবে। রাজস্ব বোডর্ও করদাতাদের জন্য করপ্রদান প্রক্রিয়া খুব সহজ করে দিয়েছে। মেলায় ঢুকলতেই চোখে পড়বে অনুসন্ধান ও তথ্যকেন্দ্র। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে যেতে হয় বিভিন্ন স্টলে। তারপর মিলবে কর-সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা। সবাই তা’ই করছেন। বিশেষ করে যারা নতুন কর দিচ্ছেন তারা সবাই তথ্য সংগ্রহের জন্য সেখানে যাচ্ছেন। মেলায় আয়কর রিটানর্ জমা, নতুন ই-টিন খোলা কিংবা করসেবা দেয়াসহ সকল কাজই চলছে ক্লান্তিহীনভাবে। সরকারি-বেসরকারি কমর্কতার্ ও কমর্চারীরা ছুটির দিনে অফিসের ব্যস্ততা না থাকায় শনিবার মেলায় আয়কর দিচ্ছেন। নবমবারের মতো আয়োজিত রাজধানীর অফিসাসর্ ক্লাবে আয়কর মেলার শুক্রবারও ছিল প্রচÐ ভিড়। এনবিআরের তথ্যমতে, আয়কর মেলায় গত শুক্রবার পযর্ন্ত চার দিনে মোট রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ১ হাজার ২৬৭ কোটি ৫৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮১৯ টাকা। গত বছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২০১ কোটি ৩৭ লাখ ৫ হাজার ৩৪০ টাকা। রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বেড়েছে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ৪৩ হাজার ৪৯৭ টাকা। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৫.৫১ শতাংশ। আর মেলার চতুথর্ দিনে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ২৫৩ কোটি ১৫ লাখ ৮১ হাজার ৫৪০ টাকা। গত বছরের একই দিনের তুলনায় এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১৬.৮৪ শতাংশ। মেলার চার দিনে সেবা নিয়েছেন ৮ লাখ ৯৯ হাজার ৬৫৫ জন করদাতা। এবার গত বছরের তুলনায় ৫২ শতাংশ বেশি মানুষ সেবা নিয়েছেন। রিটানর্ দাখিল করেছেন ২ লাখ ৬১ হাজার ২৪৩ জন। গত বছরের চার দিনে রিটানর্ জমা দিয়েছিলেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৮৯ জন। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৫৯.৫৯ শতাংশ। চার দিনে নতুন ই-টিআইএন নিয়েছেন ১৯ হাজার ৪১৫ জন। গত বছরের তুলনায় নতুন নিবন্ধনকারী করদাতার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ২৪০ শতাংশ।