নিবার্চনে আটকে গেল ১৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

ওবায়দুর রহমান
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও শুধু নিবার্চনের কারণে আটকে গেছে ভারতীয় প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ। কয়েক মাস ধরে ভারতীয় একটি কোম্পানির বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের (বিডা) সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে আসছে। তবে সরকারের উচ্চ পযাের্য়র নিদেের্শ বৈঠকটি স্থগিত করা হয়। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্স গ্রæপের সঙ্গে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের বিষয়ে ২২ অক্টোবর প্বূির্নধার্রতি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। ওই বৈঠকে রিলায়েন্স গ্রæপের কণর্ধার অনিল আম্বানির উপস্থিত থাকতেন। কিন্তু বৈঠকের একদিন আগে সরকারের শীষর্ পযার্য় থেকে অনিল আম্বানিকে নিবার্চনের পরে বৈঠকে বসতে অনুরোধ করা হয়। একই নিদের্শনা দেয়া হয় বিডাকেও। যার প্রেক্ষিতে বিনিয়োগের বিষয়টি আটকে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় এই শীষর্ গ্রæপটির বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগ রয়েছে। তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আরও বিনিয়োগে আগ্রহী। প্রস্তাবিত ১.৬ বিলিয়ন ডলার বা ১৩ হাজার ৪০৬ কোটি ৫৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৫ টাকার বিনিয়োগ প্রকল্পটিও জ্বালানি খাতের। চট্টগ্রামে গভীর সমুদ্রে একটি এলএনজি টামির্নাল করতে আগ্রহী এই ব্যবসায়ী গ্রæপটি। বিডা সূত্রে জানা যায়, গ্রæপটি প্রথমে স্থলভাগে এই টামির্নাল করতে আগ্রহ দেখায়। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে বলা হয় এই বিষয়ে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করা নেই এবং এ ধরনের প্রকল্প গভীর সমুদ্রে করার বিষয়ে আগ্রহী বাংলাদেশ। বিডার একটি সূত্র জানায়, নিবার্চন সামনে রেখে ভারতীয় গ্রæপের এমন বিনিয়োগের খবর প্রচার হলে নিবার্চনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। যার কারণে সরকারের শীষর্ পযার্য় থেকে বৈঠকটি বাতিল করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু নিবার্চনের কারণে এত বড় একটি বিনিয়োগ প্রস্তাব আটকে গেল। বিডা পরিচালক তৌহিদুর রহমান খান জানান, রিলায়েন্স গ্রæপের প্রধান নিজস্ব বিমানে আসার কথা ছিল। যেদিন তিনি আসবেন তার আগের দিন সরকারের শীষর্ মহল থেকে তাকে নিবার্চনের পরে আসতে বলা হয়। তারা ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রস্তাব নিয়ে আসার কথা ছিল। এলএনজি ও বিদ্যুতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে তারা। এদিকে, শুধু রিলায়েন্স গ্রæপের বিনিয়োগ নয়, চীনা একটি বিনিয়োগ প্রস্তাবও নিবার্চনের কারণে স্থগিত রয়েছে। গত মাসে চীনের কুনমিং থেকে বাংলাদেশে আসে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল। তারা ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী। প্রতিনিধি দলটি বিডা-র সঙ্গে বৈঠক করে। এতে বিনিয়োগের সম্ভাব্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে বিডা সূত্রে জানা যায়। চীনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান ৭০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব দেয়। তারা উৎপাদন করতে চায় লিথিয়াম ব্যাটারি। তবে এসব বিনিয়োগ চ‚ড়ান্ত হবে নিবার্চনের পর। বিডা এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের সুবিধা বাংলাদেশ পেতে পারে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে সৃষ্টি হতে পারে নতুন সুযোগ। তৈরি পোশাক খাতে বিশ্বের শীষর্ রপ্তানিকারক দেশ চীন। চীনের বাষির্ক রপ্তানির পরিমাণ ১৫৮ বিলিয়ন ডলার। যার ৭০ ভাগের গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্র। এখন চীনের সঙ্গে বাণিজ্যবিবাদে আরএমজির ওপর ৮ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র এখন চীন থেকে আমদানি করে লাভবান হবে না। তাই এখন চীন চাচ্ছে তাদের শিল্প-কারখানা সরিয়ে নিতে। এক্ষেত্রে চীনা উদ্যোক্তাদের শিল্প স্থাপনে পছন্দের দেশ- বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা। শুধু তৈরি পোশাক খাতই নয়, যেসব পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র উচ্চ শুল্কারোপ করেছে. সবগুলোই স্থানান্তরের পরিকল্পনা করছে চীন যার বাজার হচ্ছে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ফলে বিডা আশা করছে. সামনে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ ব্যাপকহারে বাড়তে পারে। তবে নিবার্চনের আগে নতুন বিনিয়োগ আশার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন শীষর্ কমর্কতার্রা। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান যায়াযায়দিনকে বলেন, বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশ কিছুটা বাড়তি সুবিধা পাবে। চীন তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম স্থানে রয়েছে। এর পরই বাংলাদেশের অবস্থান। যদিও আমাদের মাকের্ট শেয়ার খুব বেশি না। তবে চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসতে পারে। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত জাতীয় নিবার্চনের আগে দুই তিন মাস থেকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমতে থাকে। এবারের নিবার্চনকে ঘিরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বা সহিংসতার আশঙ্কা কমে গেলও অনিশ্চয়তা রয়েছে। যার কারণে এখনই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।