শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জুন পর্যন্ত ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধা চান ব্যবসায়ীরা

ম যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

করোনা মহামারির মধ্যে এখনো দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। এমন অবস্থায় ঋণের কিস্তি পরিশোধে অন্তত জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছেন সারাদেশের ব্যবসায়ী নেতারা।

শনিবার রাতে এফবিসিসিআই আয়োজিত কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টস-২০২২-এর মতবিনিময় সভায় এই দাবি জানান তারা। সভায় বক্তব্য রাখেন সারাদেশ থেকে আগত জেলা, সিটি ও নারী উদ্যোক্তাদের চেম্বারগুলোর সভাপতি, সহসভাপতিগণ। ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার পর এখন ওমিক্রন ধরনের সংক্রমণে আবারও ব্যবসা-বাণিজ্যে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন অবস্থায় অনেক ব্যবসায়ীর ঋণের কিস্তি দেওয়ার সক্ষমতা নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক সময় না বাড়ালে ঋণগ্রহীতাদের অনেকেই খেলাপি হবেন যা দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হবে।

এফবিসিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সভাপতি বলেন, ঋণ শ্রেণীকরণ সুবিধার মেয়াদ না বাড়ালে অন্তত ৫০ শতাংশ ব্যবসায়ী খেলাপি হবেন। মহামারিকালীন মন্দা কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা এখন আরও বেশি দরকার। তা না হলে, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি পুনরুদ্ধার কঠিন হয়ে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশে যেসব খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছিল সে খাতগুলোই এখনো প্রণোদনার ঋণ পায়নি। মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। কিন্তু অন্যান্য প্রণোদনা তহবিলের অর্থ প্রায় শতভাগ ছাড় হলেও এসএমই প্রণোদনার বড় অংশ বিতরণ হয়নি। ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ছোট আকারের ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোর অনীহা আছে উলেস্নখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যাংকগুলো মনে করে ছোট আকারের ঋণ দেওয়া লাভজনক নয়। বড় ব্যবসা খাতে ঋণ দিলে ব্যাংকের জনবল ও খরচ কম হয়। কিন্তু এ ধারণা ভুল বরং এতে মন্দ ঋণের ঝুঁকি বাড়ে। এসএমই খাতে খেলাপি ঋণ নেই বললেই চলে।

তিনি বলেন, অর্থনীতিতে ৮২ শতাংশ অবদান রাখছে বেসরকারি খাত। তাই বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে যে কোনো নীতি প্রণয়নে এফবিসিসিআইয়ের মতামত থাকা জরুরি। মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন কাউন্সিল অব চেম্বার প্রেসিডেন্টসের সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু। তিনি বলেন, দেশে এখনো শুল্ক-কর ও ভ্যাট আদায়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। কোম্পানি আইন, আমদানি ও রপ্তানি আইন নতুন করে হচ্ছে। এসব আইন যেন ব্যবসাবান্ধব হয় সে জন্য এফবিসিসিআই কাজ করে যাচ্ছে।

বক্তারা বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা বাস্তবতা না বুঝে নিজেদের মতো করে নীতি প্রণয়ন করে। ফলে অনেক সময় এসব নীতি বাস্তবায়নযোগ্য হয় না। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে নীতিনির্ধারণী সভায় এফবিসিসিআইয়ে মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। এ সময় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যেও রাজস্ব আদায় করতে নানাভাবে তাদের হয়রানি ও ভীতির পরিবেশ তৈরি করছেন রাজস্ব কর্মকর্তারা। স্থানীয় পর্যায়ে চাঁদাবাজিরও শিকার হচ্ছেন। এছাড়াও অডিটে সিংগেল অ্যাকাউন্ট বাস্তবায়ন হলে তা পুরো অর্থনীতিতে বিপর্যয় আনবে বলে মত দেন ব্যবসায়ীরা।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান বেলাল, রাজশাহী ওমেন চেম্বারের সহসভাপতি তাহেরা হাসেন, সাতক্ষীরা চেম্বারের সভাপতি নাসিম ফারুক খান মিঠু, রংপুর মেট্রোপলিটন চেম্বারের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গোলার জাকারিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া চেম্বারের সভাপতি আলহাজ আজিজুল হক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মো. এরফান আলী, বাগেরহাট চেম্বারের সভাপতি এস কে লিয়াকত হোসেইন, ফিকির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়, নরসিংদী চেম্বারের সভাপতি ও এফবিসিসিআই পরিচালক আলী হোসেইন শিশির প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে