মোবাইল ব্যাংকিং:হঠাৎ বাড়ল সক্রিয় অ্যাকাউন্ট

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোনো ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-অ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেও তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রকাশ | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৩৫ লাখ। গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর শেষে এই হার বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ শতাংশেরও বেশি। পাশাপাশি গত অক্টোবরে রেকডর্ পরিমাণে রেমিট্যান্স এসেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। সেপ্টেম্বরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ রেমিট্যান্স আসে অক্টোবরে। অপরদিকে কমেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সরকারি লেনদেন। এদিকে অক্টোবর শেষে মোবাইল ব্যাংকিং খাতে গ্রাহকের সংখ্যা দঁাড়িয়েছে ৬ কোটি ৬৮ লাখ ১৪ হাজার। ওই মাসে গড় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোনো ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-অ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেও তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোনো অনিয়ম না পাওয়া গেলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা জানান, দ্রæততম সময়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম এখন মোবাইল ব্যাংকিং। বতর্মানে এ সেবা ব্যবহার করেই মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়ের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। আর অন্য সময়ের চেয়ে রোজা ও ঈদের আগে এ সেবায় টাকা পাঠানোর পরিমাণ বাড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ মাসে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন, ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন, মাচের্ন্ট পেমেন্ট, রেমিট্যান্সের অথর্ প্রেরণ, পারসন টু পারসন লেনদেন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা পরিশোধ বেড়েছে। তবে কমেছে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ ও সরকারি পেমেন্ট। সুবিধাবঞ্চিতদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং চালুর অনুমতি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১১ সালের মাচের্ ডাচ্-বাংলা ব্যাংক প্রথমবারের মতো দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে। এ পযর্ন্ত ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ২৮টি ব্যাংককে এই সেবা চালুর অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ২০টি ব্যাংক সেবাটি চালু করতে পারলেও পরবতীর্ সময় দুটি ব্যাংক সেবাটি বন্ধ করে দেয়। ফলে বতর্মানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা ব্যাংকের সংখ্যা ১৮টিতে নেমে আসে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি বছরের অক্টোবর মাসে এ সেবায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৬৮ লাখ ১৪ হাজার। সেপ্টেম্বর মাসে যা ছিল ৬ কোটি ৬৭ লাখ ৪২ হাজার। ফলে এক মাসের ব্যবধানে গ্রাহক বেড়েছে ৭২ হাজার। চলতি বছরের মাচের্ প্রথমবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি অতিক্রম করে। চলতি সবছরের শুরু থেকেই এ সেবায় নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বাড়লেও অক্টোবরে এসে কিছুটা কমেছে। বেড়েছে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা। এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে ৩৫ লাখ। গত সেপ্টেম্বরে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৫১ লাখ ১৪ হাজার। অক্টোবর শেষে সক্রিয় হিসারে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৪৯ লাখ ৮০ ৬ হাজার। সে হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১১ শতাংশেরও বেশি। এদিকে, জনপ্রিয়তার কারণে এ সেবায় লেনদেনও বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্টোবর মাসজুড়ে এ সেবায় মোট লেনদেন হয়েছে ৩২ হাজার ৪৭৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ওই মাসে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগের মাস সেপ্টেম্বরে দৈনিক লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৫ কোটি ৫১ লাখ টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে দৈনিক লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন হয়েছে ১৩ হাজার ২৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এ সময়ে ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছে ১২ হাজার ২০৬ কোটি ১ লাখ টাকা। আগের মাস সেপ্টম্বরে ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছিল যথাক্রমে ১২ হাজার ৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা ও ১১ হাজার ৩৪৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন বেড়েছে ১০ দশমিক ২ শতাংশ ও ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। অক্টোবরে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পযাের্য় ট্রানজেকশন হয়েছে ৫ হাজার ১০৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা; যা আগের মাসে ছিল ৪ হাজার ৫৭৮ কোটি ১ লাখ টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পযাের্য় ট্রানজেকশন বেড়েছে ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অক্টোবর মাসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫৮৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকার বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে; যা আগের মাসের তুলনায় ৪৭ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। অক্টোবর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় রেমিট্যান্স এসেছে ৬০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা; যা সেপ্টেম্বর মাসে ছিল ৩০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স লেনদেন বেড়েছে ৯৭ দশমিক ৩ শতাংশ। এ সময়ে মাচের্ন্ট পেমেন্ট (কেনাকাটার বিল) করা হয়েছে ৩২৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা; যা আগের মাসের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি। তবে এ সময় ইউটিলিটি বিল পরিশোধ প্রায় ৭ দশমিক ৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আর সরকারি পেমেন্ট রেকডর্ পরিমাণে ৯৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া অক্টোবর মাসে অন্যান্য বাবদ লেনদেন হয়েছে ৫৩৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা; যা আগের মাসে ছিল ৫০৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ব্যাংকগুলো সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং করতে পারে না বিধায় এ কাযর্ক্রমের জন্য এজেন্ট নিয়োগ করে। নিধাির্রত কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এজেন্ট নিয়োগ দেয় ব্যাংকগুলো। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অক্টোবর মাস শেষে ব্যাংকগুলোর মনোনীত এজেন্টের সংখ্যা দঁাড়িয়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৭৪৭ জন। সেপ্টেম্বর পযর্ন্ত এজেন্টর সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৬২ হাজার ১০৩ জন।