সংকটে কম্বোডিয়ার পোশাকশিল্প

প্রকাশ | ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
প্রায় ১৩ বছর ধরে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনের পোশাক কারখানায় কাজ করছেন দেশটির ৩৪ বছরের সাও রান। ওভারটাইমসহ প্রতি মাসে তার ২৫০ ডলার পযর্ন্ত রোজগার হয়। এই আয় দিয়েই জীবনধারণ করছেন মা-ছেলে। কিছুদিন ধরে সাওয়ের মনে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার রাজনৈতিক বিতকের্র ফলে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে কম্বোডিয়ার পোশাক শিল্প। পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে কী করে চলবে সাওয়ের সংসারÑ এ দুশ্চিন্তা শুধু তার নয়, কম্বোডিয়ার পোশাক কারখানায় কমর্রত প্রায় সব শ্রমিকের মনেই কাজ করছে। গত কয়েক বছরে কম্বোডিয়ার গামের্ন্টস ম্যানুফ্যাকচারিং খাত বেশ সমৃদ্ধি লাভ করেছে। এর পেছনে প্রধান ভ‚মিকা রেখেছে ইইউ। ২০১২ সাল থেকে কম্বোডিয়াকে ইউরোপে শুল্কমুক্ত রপ্তানির অনুমোদন দেয় ইইউ। যার ফলে প্রায় ২০০ আন্তজাির্তক ফ্যাশন ব্র্যান্ড কম্বোডিয়ার ৬০০-এর বেশি কারখানাকে তাদের পোশাক তৈরিতে ব্যবহার করে আসছে। শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা ছাড়াও নিম্ন মজুরির কারণে কম্বোডিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে ব্র্যান্ডগুলো। গত অক্টোবরের শুরুর দিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতকর্বাতার্ দেয়, যদি কম্বোডিয়া তাদের দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটায় তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা বন্ধ করে দিতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্যবিষয়ক কমিশনার সিসিলিয়া ম্যাল্মস্ট্রম জানিয়েছেন, ইইউ ছয় মাস কম্বোডিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি পযাের্লাচনা করবে। যদি এর মধ্যে পরিস্থিতির ‘সুস্পষ্ট কোনো উন্নতি’ না হয়, তবে ১২ মাসের মধ্যে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে কম্বোডিয়ার বাণিজ্য অগ্রাধিকার সুবিধা বাতিল করা হতে পারে। ১৯৮৫ সাল থেকে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেশটির বতর্মান প্রধানমন্ত্রী হুন সেন। স¤প্রতি তার সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী আচরণের অভিযোগ ওঠায় এ মন্তব্য করেছেন ইইউর বাণিজ্যবিষয়ক কমিশনার। চলতি বছরের জুলাই মাসে হুন সেনের রাজনৈতিক দল কম্বোডিয়ান পিপলস পাটির্ পালাের্মন্টের ১২৫ আসনেই জয়লাভ করে পুনরায় ক্ষমতায় বসে। এ জয়ের মূল কারণ হলো, ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রধান বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পাটিের্ক (সিএনআরপি) তাদের কাযর্ক্রম বন্ধের নিদের্শ দিয়েছেন কম্বোডিয়ার সবোর্চ্চ আদালত। আদালতের এ রায়ের কারণ হলো, হুন সেনের সরকার অভিযোগ তুলেছে, সিএনআরপি যুক্তরাষ্ট্রের মদদে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে সিএনআরপি। কম্বোডিয়ার গামের্ন্ট ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কেন লু জানিয়েছেন, ইইউর হুমকির ফলে আন্তজাির্তক ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো তাদের ব্যবসা অন্যান্য দেশে সরিয়ে নিতে পারে, যা কিনা আমাদের জন্য মারাত্মক উদ্বেগের কারণ। কেন লু জানান, এ শিল্পের সঙ্গে কত মানুষ জড়িত তার দিকে তাকালেই কম্বোডিয়ার উদ্বেগের কারণ অনুধাবন করা যাবে। কম্বোডিয়ার সাত লাখের বেশি মানুষ পোশাক শিল্পে নিয়োজিত, যার মধ্যে ৮৫ শতাংশই নারী। ইইউ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে কম্বোডিয়া ইউরোপে ৪৩০ কোটি ডলার অথর্মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা কিনা দেশটির মোট রপ্তানি ৯৬০ কোটি ডলারের ৪৪ শতাংশ। ইইউর শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা বাতিল ছাড়াও, শুধু তাদের হুমকির কারণে বহু কারখানা বন্ধ হওয়ার এবং বহু মানুষের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যাংককভিত্তিক অথৈর্নতিক ও রাজনৈতিক ঝুঁকি বিশ্লেষক জজর্ ম্যাকলিয়োড জানিয়েছেন, পশ্চিমা ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো খুব সহজেই তাদের উৎপাদন প্রক্রিয়া বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ায় সরিয়ে নিতে পারবে। কম্বোডিয়া সরকার হয়তো তাদের পোশাক শিল্পকে রক্ষা করতে আপসের পথ বেছে নিতে পারে, তবে কতটুকু আপস করবে, তাই দেখার বিষয়। গত সপ্তাহে দেশটির পালাের্মন্ট জানিয়েছে, তারা সিএনআরপির ১০০-এর বেশি সদস্যের ওপর আনা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পযাের্লাচনা করবে। তবে কোনো সময়সীমা জানায়নি পালাের্মন্ট। এমনকি নতুনভাবে আবার নিবার্চন দেয়া হবে কিনা অথবা সিএনআরপির প্রধান নেতাকে মুক্তি দেয়া হবে কিনা, এ বিষয়েও কিছু জানানো হয়নি।