নতুন বছরে দীঘের্ময়াদি নীতি সহায়তা চান শিল্প উদ্যোক্তারা

ম ছোট কারখানাগুলো নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। তাদের জন্য সরকারের একটি পলিসি থাকা দরকার- বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ম প্রয়োজনীয় জমির অভাব ওভেন ফেব্রিকসের কারখানা স্থাপনে বড় বাধা- বিটিএমএ সভাপতি মো. আলী খোকন ম বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগী বাজারে টিকে থাকতে সরকারের উচিত দীঘের্ময়াদি আথির্ক সহায়তা দেয়া- বিজিএপিএমইএ সভাপতি আব্দুল কাদের খান

প্রকাশ | ০৬ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

ওবায়দুর রহমান
নতুন বছরে ব্যবসাবাণিজ্যসহায়ক পরিবেশ অব্যাহত রেখে নতুন নতুন প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় সরকারের পদক্ষেপ এবং নীতি সহায়তা চেয়েছে টেক্সটাইল এবং তৈরি পোশাক শিল্পের ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলছেন, নতুন বছরে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এ দুই খাত। এর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পের নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন, অবকাঠমোগত সমস্যা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংকট, জমির স্বল্পতা, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদ এবং কিছু শুল্কসম্পকির্ত বিষয়। ২০২১ সালের মধ্যে সরকারের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে পরিকল্পনা রয়েছে সেটি বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীরা দীঘের্ময়াদে বিনিয়োগের জন্য দীঘের্ময়াদি নীতি সহায়তার দাবি করেছেন। তারা আশা করছেন, নতুন সরকার সুশাসনের দিকে নজর দেবে। একই সঙ্গে দুনীির্ত নিমূর্ল এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও উন্নত করবেন। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় তারা আশা করছেন সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করবে। আরও গবেষণার মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের উন্নয়নে কাজ করবে। তিনি বলেন, শ্রমিকরা জানুয়ারি মাস থেকে তাদের বাড়তি মজুরি পাবেন। ২০১৯ সালে তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য বাড়তি মজুরি সমন্বয় করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। বিশেষ করে মাঝারি ও ছোট আকারের কারখানার জন্য এটি খুবই কঠিন হবে। এমনকি অনেক কারখানা নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। তাদের সহায়তার জন্য সরকারের একটি এক্সিট পলিসি থাকা দরকার। সিদ্দিকুর রহমান ডলারের এক্সচেঞ্জ রেট নিধার্রণে জোর তাগিদ দিয়ে বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলো তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণে আমাদের আন্তজাির্তক বাজারে অসম প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিনি প্রকৃত ব্যবসায়ীদের জন্য এক অঙ্ক সুদে ব্যাংক ঋণের দাবি জানান। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আরএমজি খাতের সহায়ক শিল্পে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগকে আমরা স্বাগত জানাই। বিশেষ করে ওভেন খাতে। এই উপখাতের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ তৈরি পোশাক রপ্তানির জন্য ওভেন ফেব্রিকসের ৬০-৬৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস সমিতির (বিটিএমএ) সভাপতি মো. আলী খোকন বিজিএমইএ সভাপতির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ১২ বিলিয়ন মিটার ওভেন ফেব্রিকসের চাহিদার ৯ বিলিয়ন মিটার আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে ৬ বিলিয়ন মিটার চীন এবং ৩ বিলিয়ন মিটার ভারত থেকে আমদানি করা হয়। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় জমির অভাব ওভেন ফেব্রিকসের কারখানা স্থাপনে বড় বাধা। সব ধরনের সুবিধা দেয়া গেলে ওভেন ফেব্রিকস উৎপাদনে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের অন্যতম খাত হতে পারে। তিনি বলেন, সরকারের উচিত সহায়ক শিল্পের জন্য প্রস্তাবিত বিশেষ অথৈর্নতিক অঞ্চলে জমি বরাদ্দ দেয়া। যেখানে সব ধরনের পরিসেবার সংযোগ এবং কেন্দ্রীয় বজর্্যশোধনাগার থাকবে। তিনি বস্ত্র আমদানির অবৈধ পথ বন্ধের দাবি জানান। যা বন্ডেজ লিকিং নামে পরিচিত। খোকন বলেন, ব্যবসায়ীরা গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি চান না। একই সঙ্গে সব ব্যাংকের উচিত এক অঙ্ক সুদে ঋণ দেয়া। বাংলাদেশ গামের্ন্টস এক্সসেসরিজ এন্ড প্যাকেজিং ম্যানুফেকচারার এন্ড এক্সপোটার্র অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি আব্দুল কাদের খান বিজিএমইএ সভাপতির সঙ্গে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন নিয়ে একমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কাযাের্দশ অনেক বেড়েছে। তবে ইউনিট প্রতি দাম বাড়েনি। কিন্তু ব্যবসার পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। যার কারণে আমরা এক্সেসরিজ এবং মোড়ক তৈরি করছি যারা তারাও দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। তিনি বলেন, কারখানা কমপ্লায়েন্স করতে অনেক টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের প্রতিযোগী বাজারে টিকে থাকার জন্য সরকারের উচিত স্বল্প খরচে দীঘের্ময়াদি আথির্ক সহায়তা দেয়া। তিনি বলেন, প্রায় ৩০-৩৫ ধরনের এক্সেসরিজ যেমন- জিপার, বাটন, লেবেল, হুক, কলার স্টাইল, কলার বনস এবং কাটুর্ন বাংলাদেশে উৎপাদিত প্রধান তৈরি পোশাক শিল্পের এক্সেসরিজ। বতর্মানে চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশ এক্সেসরিজ বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। যা দেশের আমদানিনিভর্রতা অনেকাংশে কমিয়েছে। এ সময় তিনি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর তাগিদ দেন। এক্সপোটার্রস এসোসিয়েসন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা আশা করছি সরকারের ধারাবাহিকতা থাকায় অথৈর্নতিক প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতাও থাকবে। একই সঙ্গে ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত থাকবে। তিনি কিছু শুল্কসম্পকির্ত সমস্যার কথা বলেন, যা নতুন বছরে বড় ইস্যু তৈরি করতে পারে। তিনি এ বিষয়ে কতৃর্পক্ষের যথাযথ পদক্ষেপের দাবি জানান। তিনি বলেন, আমরা অনেক সময় ক্রেতার কাছ থেকে বিনামূল্যে কঁাচামাল পেয়ে থাকি। যখন ক্রেতা বিনিয়োগের বড় অংশীদার হয়। কিন্তু আমরা শুল্কজনিত বড় ধরনের সমস্যায় পড়ি। বতর্মানে নিটওয়্যার প্রস্তুতকারকরা প্রায় ৯০ শতাংশ কঁাচামাল অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সংগ্রহ করছে। যার জন্য তাদের কোনো বন্ড লাইসেন্সের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু অনেক ব্যাংক তাদের বন্ড লাইসেন্সের জন্য বাধ্য করে।