শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের কেন্দ্রীয় বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য বড় চমক

উনিশের অঙ্ক চব্বিশের আগেও, মধ্যবিত্তের ভোট টানতে মোদির রাস্তায় কার্পেট বিছালেন নির্মলা
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন

বছর ঘুরলেই ভারতের লোকসভা নির্বাচন। আর সেই ভোটে বড় ভরসা চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত। তাদের খুশি করতে পারলে যে ভোটের ঝুলি ভরে সেটা পরীক্ষিত সত্য। ২০১৯ সালে সেই সাফল্য দেখেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি। এবার ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে সেই একই পথে হাঁটতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগের লোকসভা ভোটের ঠিক মুখে মুখে বাজেটে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করযোগ্য আয়ে ছাড় ঘোষণা করা হয়েছিল। এবার ভোটের এক বছর আগেই বুধবার লোকসভায় পেশ করা বাজেটে সেই সীমা বাড়িয়ে ৭ লাখ টাকা করা হলো। বিরোধী আসনে থাকার সময় থেকেই আয়করের ঊর্ধ্বসীমা বৃদ্ধির বিষয়ে সরব হয় বিজেপি।

২০১৪ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তার প্রথম বাজেটে আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করেছিলেন। মোদি সরকার প্রথম বাজেটে পুরস্কৃত করেছিল মধ্যবিত্তকে। কারণ, দেশের মধ্যবিত্তদের বড় অংশের ভোটেই বিজেপি বড় শক্তিতে ক্ষমতায় আসে। সে বার ৮০সি ক্ষেত্রে ছাড়ের পরিমাণও ১.১ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১.৫ লাখ টাকা করেছিলেন জেটলি। এর পরে বাকি বছরগুলোতে সেভাবে আয়কর কাঠামোয় পরিবর্তন আনেননি জেটলি।

শারীরিক অসুস্থতার জন্য প্রথম মোদি সরকারের শেষ বাজেট পেশ করতে পারেননি জেটলি। নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে ভোটের বছরে বাজেট পেশ করেন পীযূষ গয়াল। আর সেখানেই ছিল মধ্যবিত্তের জন্য বড় চমক। লোকসভা ভোটের আগে জনদরদি ভাবমূর্তি তুলে ধরার সেটাই শেষ সুযোগ ছিল মোদি সরকারের কাছে। সেই সুযোগের পুরোপুরি ফায়দা তোলে কেন্দ্র। অন্তর্বর্তী বাজেটে ঘুরপথে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়করে ছাড়ের ঘোষণা করেন পীযূষ গয়াল। ঘুরপথে কারণ, আদপে আয়করের যে ঊর্ধ্বসীমা আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত ছিল, তাতে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। কিন্তু ছাড় এমনভাবে বাড়ানো হয় যাতে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত কোনো কর দিতে হবে না। সেবার, করযোগ্য আয় ৫ লাখ টাকার বেশি হলে কার্যত কোনো সুবিধাই দেওয়া হয়নি। আয়করের ঊর্ধ্বসীমা যে আড়াই লাখ টাকা ছিল, তাতে কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।

যদিও তাতে রাজনৈতিক সুবিধা পেতে অসুবিধা হয়নি বিজেপির। ২০১৪ সালে ২৮২ আসনে জেতা বিজেপি ২০১৯ সালে পায় ৩০৩টি আসন। রাজনীতির বিশ্লেষকরা মনে করেন আয়কর ছাড়ে মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের সুবিধা দেওয়া অন্যতম কারণ ছিল বিজেপির ভালো ফলের নেপথ্যে। বুধবার বাজেট বক্তৃতায় বর্তমান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন যে ঘোষণা করেছেন তাতে কি সেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই রয়েছে?

শুধু লোকসভা নির্বাচনই নয়, তার আগে চলতি বছরেই ভারতের ৯ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে। নির্বাচন হতে পারে কাশ্মীরেও। সেদিকে তাকিয়েই কি মধ্যবিত্তকে এতটা সুবিধা করে দিলেন নির্মলা? তিনি জানিয়েছেন, 'আয়কর ছাড়ের সীমা ৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭ লাখ টাকা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, কারও বছরে ৯ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হলে ৪৫ হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে। যা আগের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম। যার ১৫ লাখ টাকা বাৎসরিক আয় তাকে দেড় লাখ টাকা কর দিতে হবে। আগে দিতে হতো ১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।''

বিস্তারিত বাজেট প্রস্তাবে কত টাকা পর্যন্ত আয়ে কত শতাংশ কর তার হিসাব থাকলেও নির্মলা তাঁর বক্তৃতায় হিসাব করে বলেছেন কত আয়ে কত টাকা পর্যন্ত কর দিতে হতে পারে। এই বলার মধ্যেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। সাধারণ মানুষের কাছে শতাংশের হিসাবের থেকে টাকার অঙ্ক বোঝা অনেক বেশি সহজ। সেই সহজ পথই বেছেছেন নির্মলা। আর সব মিলিয়ে মোদির তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লড়াইয়ে আগাম লাল কার্পেট বিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

যেসব জিনিসের দাম কমতে পারে

এবারের বাজেটে টিভি প্যানেলের ওপেন সেলের ওপর আন্তঃশুল্ক ২.৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। মোবাইল ফোন তৈরির জন্য বেশকিছু সামগ্রীর ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব করেছেন নির্মলা সীতারামন। ল্যাবরেটরিতে তৈরি হীরার ওপর আন্তঃশুল্ক কমানো হয়েছে। চিংড়ি রপ্তানিতে উৎসাহ দিতে তার রেণুর ওপর আন্তঃশুল্ক কমানো হয়েছে। কমবে ক্যামেরার লেন্সের দামও। লেন্সের ওপর প্রযুক্ত শুল্ক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বাজেটে। শিশুদের দেশি খেলনার দাম কমবে। বাজেটে খেলনার ওপর শুল্কে ছাড় দেওয়া হয়েছে। দেশি সাইকেলের দামও কমবে বাজেটের পর। দেশে তৈরি সাইকেলের ওপর কর কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাজেটের পর সস্তা হবে লিথিয়াম ব্যাটারি। ব্যাটারির দাম বেশ খানিকটা কমতে চলেছে। শুল্কে ছাড় দিয়েছে সরকার। পস্নাটিনাম ধাতুর যাবতীয় গয়নার দামও বাড়তে চলেছে। বাজেটে এই ধাতুর ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার।

দাম বাড়তে পারে যেসব জিনিসের : ধূমপায়ীদের জন্য সুখবর নেই বাজেটে। দাম বাড়বে সিগারেটের। সিগারেটের ওপর ১৬ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে এবারের বাজেটে। কম্পাউন্ডেড রাবার আমদানির ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। গোল্ড বার থেকে তৈরি সামগ্রীর ওপর আন্তঃশুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। রান্নাঘরে ইলেক্ট্রিক চিমনির ওপর আন্তঃশুল্ক ৭.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। বিদেশি ইলেক্ট্রিক গাড়ির দাম বাড়বে। এই গাড়ির ওপর আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কমছে দেশে তৈরি ইলেক্ট্রিক গাড়ির দাম। কাঁচামালের ওপর শুল্ক কমানো হয়েছে। ইমিটেশন গয়নার দাম বাড়তে চলেছে। বাজেটে ইমিটেশন গয়নার ওপর প্রযুক্ত শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পস্নাটিনাম ধাতুর যাবতীয় গয়নার দামও বাড়তে চলেছে। বাজেটে এই ধাতুর ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে সরকার। এ ছাড়াও সোনার ওপর শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে কিছুটা বাড়তে পারে সোনার দামও। সূত্র : আনন্দবাজারসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে