শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) মানুষ সরকারের জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন ৪০,৪৭১ হাজার কোটি টাকা। অথচ একই সময়ে বিনিয়োগের টাকা উত্তোলন করেছেন ৪৩,৫৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ সঞ্চয়ের তুলনায় ৩,১০৬ কোটি টাকা বেশি তুলে ফেলেছেন গ্রাহকরা
অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে নতুন বিনিয়োগের চেয়ে টাকা উত্তলোনের পরিমাণ বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সাম্প্রতিক ডলার সংকট মূল্যস্ফীতি ও কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলেছে। আয় একই থাকলেও মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। ফলস্বরূপ, তারা কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য সঞ্চয় ভেঙে ব্যয় করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) মানুষ সরকারের জাতীয় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন ৪০,৪৭১ হাজার কোটি টাকা।

অথচ একই সময়ে বিনিয়োগের টাকা উত্তোলন করেছেন ৪৩,৫৭৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ সঞ্চয়ের তুলনায় ৩,১০৬ কোটি টাকা বেশি তুলে ফেলেছেন গ্রাহকরা।

যদিও আগের বছর একই সময়ে বিনিয়োগ বেড়েছিল প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরের (জুলাই-ডিসেম্বর) পর্যন্ত গ্রাহকের সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছে ৫১,৬৩২ কোটি টাকা। ওই সময়ে আগের বিনিয়োগ থেকে উত্তোলন করেছে ৪২,০৪২ কোটি টাকা।

অর্থাৎ সেই সময়ে গ্রাহকের উত্তোলনের তুলনায় বিনিয়োগ ছিল ৯৫৮৯ কোটি টাকা বেশি।

যদিও চলতি বছর সরকারের সঞ্চয়পত্র থেকে নীট ঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রে টিন সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া ডলার সংকটের কারণে ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি কমায় নতুন করে শিল্প কারখানা তৈরি কমেছে। এতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ায় অনেকে জমানো টাকা তুলে নিচ্ছে।

এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সঞ্চয়পত্রের ন্যায় ব্যাংকিং খাতেও আমানতের প্রবৃদ্ধি কম।

চলতি অর্থবছরে নভেম্বরে ব্যাংকগুলোতে আমানতের প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে ৬.৬৮%, যদিও আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে তা ছিল প্রায় ১০%।

ন্যাশনাল সেভিংস ডিরেক্টরেটের ডিরেক্টর মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, 'সঞ্চয়পত্রে যে বিনিয়োগ কমছে এটা বাজারে গেলেই বুঝা যাচ্ছে। সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে কিন্তু মানুষের আয় বাড়েনি। তাই সঞ্চয়পত্রে জমা রাখার তুলনায় তারা ভাঙছে বেশি।'

তিনি আরও বলেন, 'সাধারণত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে মধ্যবিত্ত মানুষ। এছাড়া কিছু নারী আছে যাদের আয়ের উৎস নেই, তাদের পরিবার অথবা ছেলে-সন্তানরা এককালীন কিছু টাকা দিয়েছে। কিন্তু এখন পাঁচ লাখ টাকার বেশি সবার টিন সার্টিফিকেট লাগবে, যার কারণেও বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে।'

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, 'আইএমএফএর চাপ রয়েছে সরকারের ঘাটতি কমিয়ে মুনাফা বাড়াতে। এখন সঞ্চয়পত্র নীট বিক্রি কমেছে এটাও কারণ হতে পারে। এছাড়া সব ধরনের সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগের সুদ হার কমানোর প্রভাব থাকতে পারে।'

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক) চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯.১০ শতাংশ। আগস্টে এই হার ছিল আরও বেশি ৯.৫২ শতাংশ।

অক্টোবরে ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ, নভেম্বরে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ; ডিসেম্বরে ৭ দশমিক ৭১ শতাংশ।

অন্যদিকে সেপ্টেম্বরে মজুরি সূচক ছিল ৬.৮৬%। অক্টোবরে মজুরি সুচক ৬.৯১% এছাড়া নভেম্বরে রয়েছে ৬.৯৮%। ডিসেম্বরে হয়েছে ৭.০৩%।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে