পদ্মা ব্যাংক থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করবে আইসিবি

প্রকাশ | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
পাঁচ বছর ধরে কোনো রিটার্ন না পাওয়ায় পদ্মা ব্যাংক (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংকটিতে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করতে দেশি-বিদেশি কৌশলগত বিনিয়োগকারী খুঁজছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানটি। আইসিবি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবুল হোসেন জানান, 'ব্যাংক মুনাফা করলে তার অংশ পাওয়ার জন্য তারা ইকু্যইটিতে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু এত দিনেও পদ্মা ব্যাংকের বিনিয়োগ থেকে কোনো রিটার্ন পাইনি। এ কারণেই আইসিবির পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।' ইকু্যইটিতে বিনিয়োগ হলো- পুঁজিবাজারে একটি কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের মাধ্যমে তাতে অর্থলগ্নী করা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তারেক রিয়াজ খান বলেন, পদ্মা ব্যাংক থেকে আইসিবির বিনিয়োগ প্রত্যাহার করার বিষয়ে শুনেছি। তবে এখানে আইসিবি ও রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক যে বিনিয়োগ করেছে, তা শতভাগ সরকারি তহবিল। এজন্য আইসিবির বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে হলে, বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদন নিতে হবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনও লাগবে। আইসিবি তার বিনিয়োগ তুলে নিয়ে পদ্মা ব্যাংকের কোনো সমস্যা হবে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'বিষয়টি সম্পর্কে আমি পুরোপুরি অবগত নই।' ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবতে যাবেন সাবেক ফারমার্স ব্যাংককে উদ্ধার করতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করার পর প্রায় পাঁচ বছর ধরে কোনো রিটার্ন না পাওয়ায় হতাশ পড়ছে চার রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকও। ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্রগুলো আরও জানায়, ইকু্যইটিতে বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশ বা অন্তত বিনিয়োগের অর্থের বিপরীতে বর্তমান আমানত হারে সুদ চেয়ে বারবার চিঠি দিয়েও পদ্ম্যা ব্যাংকের কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়া পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। এ বিষয়ে পদ্মা ব্যাংকের এমডি বলেন, 'পদ্মা ব্যাংক এখনো অপারেটিং লোকসানে রয়েছে। ফলে ইকু্যইটি ইনভেস্টর প্রতিষ্ঠানগুলো কোনো রিটার্ন পাচ্ছে না।' সমস্যাগ্রস্ত বেসরকারি ব্যাংকটিকে দেউলিয়াত্ত থেকে বাঁচাতে ২০১৮ সালের এপ্রিলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ব্যাংকটিতে ৭১৫ কোটি টাকা ইকু্যইটি বিনিয়োগ করে ৬৫ শতাংশ শেয়ার কেনে আইসিবি এবং রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক- সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী। ওই সময় প্রতিটি ব্যাংক ১৬৫ কোটি টাকা করে এবং আইসিবি ৫৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল, পরে আইসিবির বিনিয়োগ আরও ৩০ কোটি টাকা বাড়ে। রাষ্ট্রায়ত্ত একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নেওয়া আমানতের টাকা পদ্মা ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করেছি। তাই গত পাঁচ বছরে সেখান থেকে কোনো রিটার্ন না পেলেও বিনিয়োগ করা টাকার বিপরীতে আমানতকারীদের ৬% হারে সুদ দিতে হচ্ছে। এতে আমাদের লোকসান হচ্ছে। তিনি বলেন, 'প্রায়ই ইকু্যইটির বিপরীতে লভ্যাংশ বা এতে বিনিয়োগ করা অর্থের আমানতের বর্তমান সুদহার বিবেচনা করে পদ্মা ব্যাংকের কাছে টাকা চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ব্যাংকটি সে চিঠি রিসিভ করলেও টাকা দেওয়া দূরের কথা, কোনো জবাবই দেয় না।' ২০১৮ সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আইসিবি থেকে বিনিয়োগ নেওয়ার সময় বলা হয়েছিল যে, ফারমার্স ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। তখন এসব প্রতিষ্ঠান তাদের শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিতে পারবে। নাম পাল্টে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড নামে পরিচালিত হওয়া ব্যাংকটি এখনো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। আইসিবির এমডি আবুল হোসেন পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেরও একজন সদস্য। তিনি বলেন, 'পদ্মা ব্যাংক কবে তালিকাভুক্ত হবে, তাও বোঝা যাচ্ছে না। তাই বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে শেয়ার বিক্রির জন্য স্ট্র্যাটেজিক বায়ার খুঁজছি আমরা। বায়ার পেলেই পদ্মা ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া হবে।'