সঞ্চয়পত্রে খরা, বেড়েছে ব্যাংক নির্ভরতা

বাজেটের ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যের পরিবর্তে উল্টো পথ ধরেছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সংগৃহীত সরকারের পুরনো ঋণ থেকে তিন হাজার ৫০৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে

প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
বাজেটের ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণে যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল তা হোঁচট খেয়েছে। আট মাসে ঋণ সংগ্রহের বিপরীতে পুরাতন সঞ্চয়পত্র থেকে বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে। অন্যদিকে ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে যে লক্ষ্য ঠিক করা হয়ছিল ৮ মাসেই পুরো বছরের ঋণকে ছুঁয়ে গেছে। সরকার উচ্চ খরচের (সুদ হার) ঋণ থেকে বের হয়ে আসার লক্ষ্য থেকে সঞ্চয়পত্র থেকে কম ঋণ নিচ্ছে বলে মনে করছেন পিআরআইএর নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রে বেশি সুদ দিতে হয়। এ সুদ হার ১০ শতাংশ পর্যন্ত বা তারও বেশি। আর ব্যাংকে চার শতাংশ সুদেই ঋণ পাচ্ছে। এ জন্য সরকার ইচ্ছা করেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। এতে সরকারকে কম সুদ গুনতে হচ্ছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছিল ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ২১ দশমিক ৬ শতাংশ। এ ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে অর্থ সংগ্রহ করার লক্ষ্য ছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে সংগ্রহ করার লক্ষ্য ছিল ৫ হাজার ১ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন ও আয়কর রিটার্নসহ নানা ধরনের ফর্মালিটিজ। এত সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের দিকে যাচ্ছে না। কমছে সঞ্চয়পত্রের ঋণ। আর বাড়ছে ব্যাংক থেকে। অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রম্নয়ারি আট মাসে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৯৪ কোটি টাকা। আট মাসেই পুরো ঋণের লক্ষ্যকে ছুঁয়ে গেছে। আর স্বাধীনতা পরবর্তী ৫১ বছরে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের পুঞ্জীভূত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। বাজেটের ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যের পরিবর্তে উল্টো পথ ধরেছে। সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সংগৃহীত সরকারের পুরনো ঋণ থেকে তিন হাজার ৫০৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্রের হাল নাগাদ তথ্য বলছে, জুলাই-ফেব্রম্নয়ারি ৮ মাসে ৫৫ হাজার ৮৬২ কোটি ১২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির বিপরীতে একই ৫৯ হাজার ৩৭১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা মানুষ তুলে তুলে নিয়ে গেছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ ধরনের সঞ্চয়পত্র চালু আছে। এর মধ্যে আট মাসে গ্রাহকরা ১১ ধরনের সঞ্চয়পত্র ক্রয় করছে। এগুলো হলো পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র, পেনশন সঞ্চয়পত্র, সাধারণ হিসাব সঞ্চয়পত্র, ডাক জীবন সঞ্চয়পত্র, ওয়েজ অর্নার ডেভলাপমেন্ট সঞ্চয়পত্র, ইউএস ডলার জাতীয় সঞ্চয়পত্র, ইউএস ডলার প্রিমিয়ার বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড। বাকি সঞ্চয়পত্রগুলো থেকে মানুষ সঞ্চয়পত্র ভেঙে টাকা তুলে নিচ্ছে। সঞ্চয়পত্র ভেঙে মানুষ টাকা তুলে নেওয়ার পেছনে বেশি কিছু কারণকে চিহ্নিত করছেন আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া ও সঞ্চয়ে টান, সঞ্চয়পত্রের কিছু কিছু ক্ষেত্রে সুদ হার কমিয়ে দেওয়া, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি ও কালো টাকা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের কারণে অনেকেই সঞ্চয়পত্র ক্রয় থেকে দূরে সরে গেছে। বরং আগে যে সঞ্চয়পত্র কিনেছিল তা ভাঙিয়ে টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এতে সরকার বাধ্য হয়ে বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংকের দিকে অতিমাত্রায় ঝুঁকছে। এ কারণে আট মাসেই ব্যাংক খাত থেকে সংগৃহীত ঋণের পরিমাণ পুরো বছরের লক্ষ্যকে স্পর্শ করেছে। মানুষ এভাবে সঞ্চয়পত্র ভেঙে টাকা তুলে নিতে থাকলে এবং সরকারের নিয়মিত কার্যক্রমসহ উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণের পরিমাণ দেড়গুণ হয়ে যাবে। অন্যদিকে পরিশোধ বাড়বে সঞ্চয়পত্র থেকে সংগৃহীত ঋণের। এ ব্যবস্থা অর্থনীতির উপর আরেক চাপ তৈরি করছে বলেন আহসান এইচ মনসুর। বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া মানেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে দিচ্ছে। এই টাকা ছাপিয়ে দেওয়া অর্থনীতিতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। খবর বাংলানিউজ