আন্তজাির্তক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যাংকগুলোর ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
চলতি বছর শেষে দেশের ব্যাংকগুলোকে আন্তজাির্তক মানদÐে উন্নীত করতে ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। এ জন্য ধীরে ধীরে প্রয়োজনীয় মূলধন বৃদ্ধির জন্য ব্যাংকগুলোকে নিদের্শনা দেয়া হয় ২০১৫ সালে। এ সময় একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার সোয়া ১২ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিধার্রণ করা হয়। তবে বতর্মানে এ হার ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ ছাড়া ৯টি ব্যাংক মূলধন সংকটে ভুগছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নিধাির্রত সময়ে কাক্সিক্ষত মানে উন্নীত হতে না পারলে আন্তজাির্তক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, রোডম্যাপের পঁাচ বছর সময় অনুযায়ী চলতি বছরে দেশের ব্যাংকিং খাত নিধাির্রত মানদÐে উন্নীত হওয়ার কথা। কিন্তু এতে অন্যতম বাধা হয়ে দঁাড়িয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক। ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী, চলতি বছর শেষে ব্যাংকগুলোকে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সাড়ে ১২ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। মূলধন বৃদ্ধিতে ব্যাংকগুলোকে প্রতি প্রান্তিকে শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করার প্রস্তাব দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সবের্শষ তথ্য বলছে, যেভাবে পুরো ব্যাংকিং খাত এগোচ্ছে, তাতে চলতি বছরে কাক্সিক্ষত মান অজের্নর কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পযের্বক্ষণ বলছে, মূলধন সংরক্ষণ করতে না পারার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে খেলাপি ঋণের উচ্চহার। গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী নিরীক্ষণ না করায় খেলাপি হওয়া ঋণ আদায় কমে যাচ্ছে। এতে ঋণের গুণগত মান কমে যাচ্ছে। বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে বাড়াতে হচ্ছে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের পরিমাণ। ফলে কমে যাচ্ছে মূলধন সংরক্ষণের সক্ষমতা। আথির্ক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় ব্যাংকের ঝুঁকিসহন ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে আনুপাতিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঝুঁকির পরিমাণ। কিন্তু আমানত প্রবৃদ্ধি ঋণের চেয়ে বেশি না হওয়ায় ব্যাংকগুলো ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে পারছে না। এ হার বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোয় অনেক বেশি। ফলে মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে সরকারি ব্যাংকগুলো। আর এর পুরো প্রভাব পড়েছে গোটা ব্যাংক খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংক খাতে ২০১৭ সালের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণের হার ছিল ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০১৮ সালের মাচর্ শেষে তা দঁাড়ায় ১০ দশমিক ১১ শতাংশ। জুন শেষে তা আরও কমে দঁাড়ায় ১০ শতাংশে। গত সেপ্টেম্বর শেষে তা দঁাড়ায় ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশে। গত সেপ্টেম্বরে মূলধন সংরক্ষণের দিক থেকে দেশের ৪০টি বাণিজ্যিক ব্যাংক গড়ে মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে। আর ৯টি বিদেশি ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ২৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ হারে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণ করেছে ছয় দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ হারে। আর বিশেষায়িত দুই ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক) ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করেছে ঋণাত্মক ৩১ দশমিক ৯৯ শতাংশ হারে। চলতি বছর শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলো আন্তজাির্তক মানদÐ উন্নীত করার পথে পৌঁছেছে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করতে ব্যথর্ হওয়ায় সামগ্রিক প্রভাব গোটা ব্যাংক খাতের ওপর পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরেক তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ৯ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি হয়েছে ১৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকেরই প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কমর্কতাের্দর মতে, বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি নেমে গত পঁাচ বছরের মধ্যে সবির্নম্নে নেমেছে। ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ের ঋণ ফেরত আসার গতি কমছে। এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে। আন্তজাির্তক মানদÐ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণে ব্যথর্ হলে বহু সমস্যার উদ্ভব হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, আন্তজাির্তক বাণিজ্য নিষ্পত্তিতে ব্যয় বেড়ে যাবে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, ঘাটতি মূলধনে ব্যাংকগুলোর আন্তজাির্তক ক্রেডিট রেটিং মান কমে যাবে। পণ্য আমদানিতে তৃতীয় কোনো দেশের ব্যাংকের গ্যারান্টার হতে হবে। এতে পণ্য আনার খরচ বেড়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে ভোক্তাদের ওপর। আমানত সংগ্রহ ও খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে ব্যাংকগুলোকে।