সুইটগ্রিনের স্বত্বাধিকারী জনাথন নেম্যান, ন্যাথানেইল রু ও নিকোলাস জ্যামেট

তাদের ডিএনএতে ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার আকাক্সক্ষা

প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
সুইটগ্রিনের তিন স্বত্বাধিকারী জনাথন নেম্যান, ন্যাথানেইল রু ও নিকোলাস জ্যামেট
১৫ বছর আগে জনাথন নেম্যান, ন্যাথানেইল রু ও নিকোলাস জ্যামেটের বন্ধু মহলে পরিচিত ছিল খাদক হিসেবে। জজর্টাউনের অলিগলির প্রত্যেকটি খাবারের দোকানের স্বাদ তাদের জিহŸায় এখনো লেগে আছে। তিনজনেরই প্রিয় ছিল পিৎজা। তবে যা তা খাবার হলে তো চলবে না! খাবারের মান হতে হবে স্বাস্থ্যকর, সাশ্রয়ী মূল্যের। গল্পে গল্পে নেম্যান বলছিলেন, আমাদের কাছে একটি বিরক্তিকর প্রশ্ন হলো ‘আমরা কোথায় খাব? আমরা কোথায় খাব?’ কিন্তু খুব কম খাবারের দোকানেই আমরা স্বাস্থ্যকর, সুস্বাদু ও সাশ্রয়ী দামের খাবার পেতাম। ২০০৭ সালের কথা। সবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বেকার ঘোরাফেরার করছিলেন তিন বন্ধু। সিদ্ধান্ত নিলেন দ্রæত সেবা দেয়ার একটিন সালাদ রেস্ট্রুরেন্ট খুলবেন। তা হবে স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী দামের। এই তিন উদ্যোক্তার লক্ষ্য ছিল সুনিদির্ষ্ট। খুব দ্রæত ও সস্তায় কীভাবে ফাস্টফুড সরবরাহ করা যায় তা নিয়ে ভাবছিলেন তারা। মানের দিক থেকে কোনোভাবেই খামতি দেয়ার পক্ষপাতি নন কেউই। নেম্যানের ভাষ্য, আমরা এমন এক ফাস্টফুডের দোকান বানাতে চেয়েছিলাম যেখানে ফাস্টফুডের প্রচলিত রীতিনীতির কিছুই থাকবে না। সুইটগ্রিন নামের রেস্ট্রুরেন্টটি এখন সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সবজি এনে প্রক্রিয়াজাত করে। আমরা এখন ৩০০ এর অধিক চাষির সঙ্গে কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, আমাদের রেস্ট্রুরেন্টের প্রত্যেকটি খাবার স্ক্র্যাচ হয়ে আসে। প্রত্যেকটি লেটুস পাতা ধোয়ার পর কাটা হয়, ড্রেসিং করা হয়। আমাদের ডিশগুলো নিজেদের পছন্দমতো তৈরি। আমি বোঝাতে চাচ্ছি আমাদের প্রত্যেকটি জিনিস ইউনিক আইডিয়াতে বানানো। যাতে খেয়ে আপনি অন্যরকম স্বাদ পান। সবাই মিলে একসঙ্গে সেবা দেয়া পছন্দ করি। প্রথমে একটি রেস্ট্রুরেন্ট বানানো কিংবা এটিকে জনপ্রিয়তার শীষের্ নিয়ে যাওয়াটা চাট্টিখানি কথা নয়। এর জন্য বিনিয়োগকারী খেঁাজাটাও ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার। সুইটগ্রিন শুরুর দিকে খুব বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। নেম্যান বলছিলেন, ‘আমরা প্রায় ১০০ জন সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বলেছি। শেষ পযর্ন্ত ৪০ জন বিনিয়োগকারী আমাদের রেস্ট্রুরেন্টে আস্থা রেখে বিনিয়োগ করেছেন। তবে সব মিলিয়ে গড়ে ১০ হাজার ডলার বিনিয়োগ পেয়েছিলাম আমরা। এটি সত্যিকারের অথের্ই যারা বিশ্বাস করতেন যে আমরা পারব তারাই বিনিয়োগ করেছেন। তারা আমাদের নিয়ে বাজি ধরেছেন। সুইটগ্রিনের প্রথম অবস্থান ছিল ওয়াশিংটন ডিসিতে। ৬০০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট নিয়েছিলাম। যেটি আগে ছিল সরাইখানা। আজ ১১ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সুইটগ্রিনের এখন ৯০টি রেস্ট্রুরেন্ট, কমর্সংস্থান আছে ৪ হাজার মানুষের। এ মাসের শুরুর দিকে এই প্রতিষ্ঠানটি ফিডেলটি ইনভেস্টম্যান্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ফলে বাইরের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ বেড়ে দঁাড়িয়েছে ৩৬৫ মিলিয়ন ডলারের। এই বিনিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার পর সুইটগ্রিন কোম্পানিটি ঘোষণা করেছে তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ গিয়ে দঁাড়িয়েছে ১ বিলিয়ন ডলারে। শুরুর গল্পটা কেমন ছিল? এই গল্পটা অবশ্য বলছিলেন ন্যাথানেইল রু। যিনি এখন সুইটগ্রিনের ব্র্যান্ড অফিসার হিসেবে কমর্রত। তিনি বলেন, ‘আমাদের তিনজনের পরিবারের সবাই উদ্যোক্তা। সুতরাং আমাদের ডিএনএ’তেই ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার প্রয়াস। আমি মনে করি আমিসহ আমাদের টিমের সবার পরিবার থেকে ঝুঁকি নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। আমি অবশ্য সবাইকে বলেছিলাম পরিবারের সবাইকে প্রত্যেকদিনের ফিডব্যাক দেয়ার জন্য।’ রু’র বাবাই প্রথম তাদের এই ব্যবসা নিয়ে আলাদা প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করলেন। রু’র ভাষায়, ‘আমি তাকে পুরো আইডিয়াটি বুঝাই। এরপরই সবাই চুপ হয়ে যায়। সবাই ফোনের ওপার থেকে সোজা বলে দিতে লাগল ‘ন্যাথান, তুমি সালাদ নিয়ে যা করছ, আশা করি তা ভালো হবে।’ অন্যদিকে নিকোলাস জ্যামেটের বাবা ছিলেন একজন খাবারের ব্যবসায়ী। কয়েকটি রেস্ট্রুরেন্টে তিনি খাবার সরবরাহ করতেন। তার মাও তাকে সব সময় উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে রাখত। নেম্যান তার বন্ধু জ্যামেটের পরিবার নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, তার বাবা-মা আমাদের সব সময় শিক্ষা দিতেন কিভাবে আতিথেয়তা দেখাতে হয়, সেবা সংস্কৃতির ব্যবহার, কীভাবে একটি কমিউনিটি তৈরি করা যায়।’ এ উদ্যোক্তারা শুরুর দিকে তাদের সাপ্লাই চেইন বাড়ানোর জন্য বিনিয়োগকারী খুঁজছিলেন। তাদের কাস্টমার সেবার মান কেমন হচ্ছে তা যাচাই করতেও বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়ে দঁাড়িয়েছে। এ জন্য প্রযুক্তির কাছাকাছি থাকাটাও খুব দরকার ছিল তখন। মোট কাস্টমারের ৫০ ভাগই ছিল অ্যাপনিভর্র। এ চিন্তার ধারাবাহিকতায় গত সেপ্টেম্বরে তারা একটি পাইলট প্রোগ্রাম চালু করে। তারা প্রত্যেকটি অফিসে তাদের রেস্ট্রুরেন্টের খাবার ডেলিভারি দেয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তাদের পরিকল্পনা অনেক সুদূরপ্রসারী। তারা তাদের কমিউনিটির প্রত্যেকটি সদস্যকে এই সেবার আওতায় আনতে চান। তারা ইতোমধ্যে তাদের আওতায় মধ্যে যত স্কুল আছে সেসব স্কুলে ক্যাফেটেরিয়া খোলার মাধ্যমে এই সেবার আওতা বাড়াতে চান। ওয়াশিংটন ডিসি, ম্যারিল্যান্ড, ভাজিির্নয়া ও নিউইয়কর্ সিটিসহ প্রত্যেকটি শহরে তারা এই সেবা নিশ্চিত করতে চান। সূত্র: সিএনএন