গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ

দেশে তামাকে আর্থিক ক্ষতি সাড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
তামাকজনিত ব্যাধি ও অকালমৃতু্যর কারণে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ। শুধু তামাক ব্যবহারজনিত আর্থিক ক্ষতি বছরে ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা বা ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় আয়ের (জিডিপির) ১.৪ শতাংশ। আর ২০১৮ সালে তামাকজনিত রোগে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষের অকাল মৃতু্য হয়েছে, যা দেশের মোট মৃতু্যর ১৩.৫ শতাংশ। শনিবার ঢাকা ক্লাবে অনুষ্ঠিত তামাকের অর্থনৈতিক ক্ষতি-বিষয়ক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। গবেষণায় আরও বলা হয়, যারা তামাক ব্যবহার করেন না, তাদের চাইতে তামাক ব্যবহারকারীদের মধ্যে তামাকজনিত প্রধান ৭টি রোগের একটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ বেশি এবং তামাকজনিত ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ১০৯ শতাংশ বেশি। গবেষণায় তামাক চাষের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত ক্ষতি, তামাক চাষে দুর্লভ কৃষিজমি ব্যবহারের ফলে খাদ্য নিরাপত্তার হুমকি, অগ্নিকান্ডের আশঙ্কা ও ক্ষতি, পরিবেশ দূষণ এবং অন্যান্য ক্ষতির পরিমাপ করা হয়নি। তামাকের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। দেশের অর্ধেকের বেশি অর্থাৎ ২ কোটি শিশু পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। সকাল ৯.০০ থেকে বিকালে ৪.০০ পর্যন্ত ঢাকা ক্লাবের স্যামসন এইচ চৌধুরী হলে দিনব্যাপী গবেষণার ফল উপস্থাপনের উদ্বোধন পর্ব, কারিগরি অধিবেশন, গ্রম্নপ ডিসকাশনসহ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি, ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ যৌথভাবে এ গবেষণা পরিচালনা করে। তামাক গ্রহণের কারণে অসংক্রামক সাতটি রোগের অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিবিষয়ক একটি গবেষণাকর্মে দশ হাজার বাড়িতে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এতে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান। আরও উপস্থিত জাতীয় অধ্যাপক ব্রি. জে. (অব.) আবদুল মালিক, স্বাস্থ্য সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ, ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ হাই, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস-এর হেড অব প্রোগ্রামস মো. শফিকুল ইসলাম, আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির পরিচালক অধ্যাপক ড. নিগার নারগিস ও গ্রেগ হাইফলে, ক্যান্সার রিসারর্চ-ইউকের প্রিসিলা টিগা, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (যুগ্মসচিব) মো. খলিলুর রহমান প্রমুখ। উদ্বোধনী পর্বে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মোলস্না ওবাদুলস্নাহ বাকী। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন গবেষণা প্রকল্পের পরিচালক ও বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির যুগ্ম-মহাসচিব অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণকে গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রত্যাশা করে না কোন তামাক কোম্পানিতে সরকারের শেয়ার থাকুক। ব্রিট্রিশ আমেরিকান ট্যোবাকোতে বাংলাদেশ সরকারের শেয়ার রয়েছে তা পর্যায়ক্রমে প্রত্যাহার করা হবে। ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাকের দাম বাড়াতে হবে এবং তা ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে গেলে তামাকের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে কমে আসবে। তামাকের কর বৃদ্ধিতে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ঊর্ধ্বতন সরকারী কর্মকর্তা, যারা তামাকের কর না বাড়ানোর জন্য তামাক কোম্পানির পক্ষে লবিস্ট হিসেবে কাজ করেন। তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার করা প্রয়োজন। তামাক কোম্পানীগুলো প্রচুর রাজস্ব ফাঁকি দেয়। রাজস্ব বিভাগকে তামাক কোম্পানি থেকে রাজস্ব আদায়ে আরও বেশি সক্ষমতা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ ধরণের গবেষণা ও এর ফলাফল আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে।