তামাকে কর বাড়ালে কমবে স্বাস্থ্যঝুঁকি

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
সিগারেট ও তামাক পণ্যের ওপর কর বাড়ানো হলে রাজস্ব আরও বাড়বে। অন্যদিকে কমবে তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা। এতে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও কমবে। তাই 'কেমন তামাক কর চাই' শীর্ষক প্রাক বাজেট সংবাদ সম্মেলনে আগামী বাজেটে এ খাতে করহার বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আসন্ন ২০১৯-২০ বাজেটে তামাকপণ্যে যুগোপযোগী এবং কার্যকর করারোপের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধির দাবিতে প্রজ্ঞা ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মার উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পলস্নী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসির উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ। এতে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন বিআইডিএসর রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই কোটি ২০ লাখ এবং ধূমপায়ীর সংখ্যা এক কোটি ৯২ লাখ। আবার পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে তামাক ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া অনুপাত হারে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমলেও সংখ্যার ভিত্তিতে বাড়ছে ব্যবহারকারীর সংখ্যা। এ অবস্থার উত্তরণে সব ধরনের তামাক পণ্যে খুচরা মূল্যের ভিত্তিতে করহার বাড়ানো গেলে ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমানো সম্ভব। ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরেই তামাক পণ্যের করকাঠামো পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে আসছি, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট নীতি-নির্ধারকরাও এ বিষয়ে একমত পোষণ করেন, কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না। তাই আমরা আবারও দাবি জানাচ্ছি তামাকের ক্ষতি থেকে মানুষকে রক্ষায় বাজেটে কার্যকরভাবে করারোপের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অনুপাতহারে ধূমপায়ী কমলেও সংখ্যার হারে কমছে না। আমাদের এখন তামাকের বিরুদ্ধে জোর প্রচারণার পাশাপাশি দরকার তামাকের বিকল্প চাষ। যাতে কৃষক আরও লাভবান হতে পারে। এ জন্য কৃষকদের আরও সচেতন করতে হবে। তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরতে হবে। \হআ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী বলেন, তামাকের উপর সচেতনতা বাড়ানো ছাড়া ব্যবহার কমানো সম্ভব নয়। এজন্য পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে শিশুরা ছোট থেকেই যেন তামাকের বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে জানতে পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। \হড. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি বড় অর্থের চেকের মাধ্যমে কর পরিশোধ করে। তবে তামাকের প্রভাবে সরকার স্বাস্থ্যখাতে যে খরচ হয় সেটাও দেখতে হবে। তাই সব ধরনের তামাক পণ্যে ২৫ শতাংশ ভ্যাট রাখতে হবে। কর্পোরেট করহার কোনক্রমেই কমানো যাবে না। তামাকপণ্যে করারোপরের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজস্ব আহরণের চেয়ে জনস্বাস্থ্যকে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে জানান তিনি। ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, তামাকপণ্যের দাম কার্যকরভাবে বাড়ানো হলে, যারা নতুন করে শুরু করতে চায় তারা নিরুৎসাহিত হবে। তামাক ব্যবাহারকারীদের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটানোর জন্য কাজ করার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এ ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী কার্যক্রমে তামাক ব্যবহারকারীদের অন্তর্ভুক্ত না করার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে তামাক ব্যবহারের ক্ষতি থেকে সুরক্ষা করা সম্ভব বলে তিনি জানান। \হসংবাদ সম্মেলনে সাতটি সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে-তামাকপণ্যের সহজলভ্যতা হ্রাস করতে মূল্যস্ফীতি এবং আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক নিয়মিতভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। বিভিন্ন তামাকপণ্য ও ব্রান্ডের মধ্যে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য ব্যবধান কমিয়ে আনার মাধ্যমে তামাক ব্যবহারকারীর ব্রান্ড ও তামাকপণ্য পরিবর্তনের সুযোগ সীমিত করতে হবে। সব ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীকে সরকারের করজালের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। পর্যায়ক্রমে সব তামাকপণ্য অভিন্ন পরিমাণে (শলাকা সংখ্যা এবং ওজন) প্যাকেট ও কৌটায় বাজারজাত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া একটি সহজ এবং কার্যকর তামাক কর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন (৫ বছরমেয়াদি), সব প্রকার ই-সিগারেট এবং হিটেড তামাকপণ্যের উৎপাদন, আমদানি এবং বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ এবং স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ২ শতাংশ বৃদ্ধি করতে হবে।