গত অর্থবছরে এডিপির মূল্যায়ন প্রতিবেদন

২৩৭ উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়

কাজের মান নিশ্চিত করতে হয় না মনিটরিং ম প্রকল্প শেষ হলেও জমা হয় না গাড়ি ম ৯০টি প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি শূন্যের কোঠায়

প্রকাশ | ২৪ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

জাহাঙ্গীর আলম
গত অর্থবছরে সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এক লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু এক হাজার ৭৪০টি প্রকল্পের মধ্যে ২৩৭ উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। আর ৯০টি প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি একেবারেই শূন্য কোঠায়। ২৫টি প্রকল্পে এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হলেও ২৩টির কোনো আর্থিক অগ্রগতিও হয়নি। ওই সব প্রকল্পের মধ্যে ২৯২টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য ধরা হলেও সম্ভব হয়েছে ১৮৮টির। অপরদিকে, উন্নয়ন কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্য যথাযথ নিবিড়ভাবে মনিটরিংও করা হয়নি। প্রকল্প শেষ হলেও পরিবহনপুলে গাড়ি জমা দেয়া হয়নি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। আইএমইডির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত অর্থবছরে এডিপিতে ৫৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য এক হাজার ৭৪০টি প্রকল্পের বিপরীতে প্রথমে এক লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। পরে সংশোধন করে এক লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরমধ্যে প্রকৃত ব্যয় হয় এক লাখ ৪৮ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা বা ৯৪ শতাংশ। বরাদ্দকৃত অর্থের শতভাগ বা তার বেশি ব্যয় করা হয়েছে ৬২১টি প্রকল্পে। যা প্রশংসনীয়। ৫৫৮টি প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক। ১৫৯টির অগ্রগতি মোটামুটি সন্তোষজনক। তবে ২৩৭টি প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। আবার ৯০টি প্রকল্পে ৯১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও আর্থিক অগ্রগতি একেবারে শূন্য। গত অর্থবছরে বরাদ্দ পাওয়া এক হাজার ৭৪০ প্রকল্পের মধ্যে ২৫ শতাংশের কম ব্যয় হয়েছে ৭৫ প্রকল্পে। ২৬ থেকে ৫০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে ৮০ প্রকল্পে। অর্থ ব্যয় না হওয়ার বেশ কিছু কারণ উলেস্নখ করা হয়েছে। যেমন দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব, দরপত্র কার্যকর না হওয়া, প্রকল্পে ঋণ না পাওয়া, অর্থ ছাড় না হওয়া বা দেরিতে অর্থ ছাড়, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়া, মামলাজনিত সমস্যা, প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন, সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনে বিলম্ব, দাতা সংস্থার সঙ্গে ঋণ চুক্তিতে বিলম্ব, নামমাত্র বরাদ্দ পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ রয়েছে। শূন্য অগ্রগতির প্রকল্প তালিকায় রয়েছে-চট্টগ্রামে বেপজার কারখানা ভবন নির্মাণ, বাংলাদেশ আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প, জাতীয় রাজস্ব ভবন নির্মাণ, সরকারি কলেজে বিজ্ঞান শিক্ষায় পৃষ্ঠপোষকতা, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ স্থাপন, পাবনার নার্সিং ইনস্টিটিউট স্থাপন, বাংলাদেশ টেলিভিশনের ছয়টি নতুন স্টেশন নির্মাণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম লেরপথের উন্নয়ন এবং মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রয়েছে। আএমইডির প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়েছে গত অর্থবছরে এক হাজার ৭৪০টি প্রকল্পের মধ্যে ২৯২টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু সম্ভব হয়েছে ১৮৮টি। অর্থ ব্যয় করতে না পারার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়। এতে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যায়। প্রকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন পর্যায়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যাও চিহ্নিত করেছে আইএমইডি। সেগুলো হচ্ছে-সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা না করে এবং ভবিষ্যৎ পেক্ষাপট বিবেচনা না করে প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়। এতে পরে কাজের পরিধি বেড়ে যায়। একই সঙ্গে ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া বাজার ও চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্প না নেওয়ার কারণে বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হয় এবং বারবার প্রকল্প সংশোধন করতে হয়। অনেক সময় প্রকল্প মাঝপথে বাতিল করার প্রয়োজন পড়ে বা বহুগুণে ব্যয় বৃদ্ধি পায়। চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা বিবেচনায় না নিয়ে প্রকল্প নেওয়ার কারণে বাস্তবায়ন জটিলতা তৈরি হয়। প্রকল্পের ক্রয় পরিকল্পনা এবং কর্মপরিকল্পনা না থাকায় বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। এ ছাড়া ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বদলি, একজন পরিচালকের একাধিক প্রকল্পে দায়িত্ব গ্রহণ এবং অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে প্রকল্পের দায়িত্ব নেওয়ার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়। বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পে ঋণ চুক্তি সই, ঋণ কার্যকর করা। পরামর্শক ও দরপত্র উন্নয়ন সহযোগীদের সম্মতি পেতে অনেক সময় লেগে যায়। এতে বাস্তবায়ন কাজ ব্যাহত হয়। শুধু তাই নয়, নির্মাণ কাজের গুণগতমান নিশ্চিত করতে যথাযথ নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা হয় না। উন্মুক্ত ক্রয় পদ্ধতি থাকলেও কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ইদানীং সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অবলম্বন করছে। শুধু তাই নয়, প্রকল্প শেষে বিভিন্ন যানবহন পরিবহনপুলে জমা দেয়ার কথা থাকলেও তা মানা হয় না। নতুন প্রকল্পের জন্য যানবহন কেনা হয়। এ কারণে সরকারি অর্থের অপচয় হয়। সার্বিক ব্যাপারে আইএমইডির ভারপ্রাপ্ত সচিব আবুল মনসুর মো. ফয়েজউলস্নাহ বলেন, নিবিড় পরিবীক্ষণ নিশ্চিত করা গেলে প্রকল্পের অনুমোদিত ব্যয় ও নির্ধারিত সময়ে বিভিন্ন অঙ্গের মানসম্মত ও সুষ্ঠু বাস্তবায়ন সহজ হয়। তাই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পাশাপাশি আইএমইডি প্রকল্প গ্রহণ থেকে বাস্তবায়ন পর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্পের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করে থাকে। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সম্প্রতি বলেছেন, অনেক সময় দেখা যায়, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদার নিয়োগে উন্নয়ন সহযোগীদের সম্মতি আদায় করতে সময় নষ্ট হয়। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারকি বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী আইএমইডিকে শক্তিশালী করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিটি বিভাগে আইএমইডির অফিস করা হবে। এ ছাড়া লোকবল বাড়িয়ে আইএমইডির জন্য একটি পরীক্ষাগারও করা হবে। এক পিডি এক প্রকল্পেই থাকবে, এর বেশি থাকতে পারবে না। প্রকল্প শেষ হলে কোনো অবস্থাতেই পিডিরা ব্যক্তিগতভাবে গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না বলে জানান তিনি।