মোংলা বন্দরের আরও সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ

ষ আধুনিক সুবিধা দিতে ছয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ষ নির্মাণ করা হবে কন্টেইনার টার্মিনাল ও হ্যান্ডেলিং ইয়ার্ড

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

জাহাঙ্গীর আলম
যতই দিন যাচ্ছে, দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়ন কাজ ততো এগিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে মোংলা বন্দরের চাহিদাও বাড়ছে। এসব দিক বিবেচনা করে সরকার মোংলা বন্দরকে আধুনিক বন্দর করতে উদ্যোগ নিয়েছে। তা বাস্তবায়নের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে 'আপগ্রেশন অব মোংলাপোর্ট' নামে একটি প্রকল্প তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। ছয় হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুনে শেষ করা হবে। ভারতের ঋণে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে মোংলা বন্দরে অতিরিক্ত ১৫ লাখ টন কার্গো হ্যান্ডেল করতে সক্ষম হবে। প্রকল্পের প্রধান কাজ হবে কন্টেইনার টার্মিনাল ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং ইয়ার্ড নির্মাণ। এসব যাচাই-বাছাই করতে পরিকল্পনা কমিশনে সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু ব্যাপারে আপত্তি করে সংশোধনের জন্য বলা হয়। সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) পিইসির অনেক সিদ্ধান্ত যুক্ত না করেই পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। তাই আবারও পিইসি সভার আয়োজন করা হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করে খুব শিগগিরই একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলায় এই বন্দরের গোড়াপত্তন শুরু হয়। এভাবে কালের পরিক্রমায় এগিয়ে গেছে অনেক দূর। এক সময়ের লোকসানি প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ায় এই বন্দরের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। বন্দরে বর্তমানে ছয়টি নিজস্ব জেটি, ব্যক্তি মালিকানাধীন সাতটি এবং ২২টি এ্যাংকোরেজ এর মাধ্যমে ৩৫টি জাহাজ একসঙ্গে হ্যান্ডেলিং করা সম্ভব হচ্ছে। এরপরও বন্দর ব্যবহারকারিদের জন্য আধুনিক সুবিধা দিতে এবার আরও একটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, মোংলা বন্দরকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের গতি ত্বরান্বিত করার জন্য ঢাকা-মাওয়া-মোংলা মহাসড়ক উন্নয়ন, পদ্মা সেতু নির্মাণ, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ, রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র নির্মাণ, মোংলা বন্দর এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, মোংলা ইপিজেড সম্প্রসারণ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎকেন্দ স্থাপন কাজ এগিয়ে চলছে। এসব কাজ ২০২১ সালে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়। অপরদিকে, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের আমদানি-রপ্তানি পণ্য বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের সামগ্রী মোংলা বন্দরের মাধ্যমে পরিবহনের সহজ সুযোগ সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া ভারত, নেপাল ও ভুটানে ট্রানজিট সুবিধা চালু হলে এই বন্দর ব্যবহারের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হবে। দক্ষ ও কার্যকরভাবে এই অতিরিক্ত চাহিদা পূরণের জন্য মোংলা বন্দরে কন্টেইনার টার্মিনাল, কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং ইয়ার্ড, কন্টেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড, সার্ভিস ভেসেল জেটি অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিদ্যমান অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এসব দিক বিবেচনা করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ নামে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের তৃতীয় এলওসি থেকে ঋণ চার হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। বাকি এক হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটির প্রধান প্রধান ১১টি কাজ উলেস্নখ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কাজ হচ্ছে- কন্টেইনার টার্মিনাল ও কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং ইয়ার্ড নির্মাণ। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় প্রধান কাজ ধরা হয়েছে দুই হাজার ৫০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এমপিএ টাওয়ার, পোর্ট রেসিডেন্সিয়াল কমপেস্নক্স এবং কমিউনিটি সুবিধাদি নির্মাণ। কন্টেইনার ডেলিভারি ইয়ার্ড নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮৪৫ কোটি টাকা। প্রায় ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা ও অটোমেশনসহ অবকাঠমো নির্মাণ করা হবে। প্রায় ৯৬ কোটি টাকায় বন্দর ভবন সম্প্রসারণ করা হবে। ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মেকানিক্যাল ওয়ার্কশপ, ইকু্যইপমেন্ট ইয়ার্ড, শেড ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিসহ পুল নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ১৪৩ কোটি টাকা ব্যয় করে দিগরাজ রেল ক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। আর ২১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাস্তা ও বিনোদন ব্যবস্থাসহ বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সূত্র আরও জানায়, এসব সব কাজ বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুন পর্যন্ত সময়। সেটা যাচাই করতে পরিকল্পনা কমিশনে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কিছু ব্যাপারে আপত্তি করে তা সংশোধনের জন্য বলা হয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে। কিন্তু সভার অধিকাংশ সিদ্ধান্ত না মেনে ডিপিপি সংশোধন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। সেটা পরিকল্পনা কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাই আবারও পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হবে। বাকি কাজ শেষ করে একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানায়।