ব্রেক্সিটে প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের ক্ষতি ১০০ কোটি ডলার

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ব্রেক্সিটের সময় এরই মধ্যে পেছানো হয়েছে, হয়তো ব্রেক্সিট শেষ পর্যন্ত বাতিলও হতে পারে। কিন্তু ব্রেক্সিটের কারণে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির এরই মধ্যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেছে। ২০১৬ সালের জুনে যুক্তরাজ্যের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগ নিয়ে ভোটাভুটি হয়। গণভোটে ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় গেলে পাউন্ডের দাম পড়ে যায় এবং অর্থনীতিতে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। ভোটাভুটির পর যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক কার্যক্রম সংকুচিত হয়ে আসে, বিনিয়োগে বড় পতন দেখা দেয়। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মতে, ইইউতে থাকলে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির আকার যতটা হতো, বস্নকটির বাইরে থাকার কারণে দেশটির অর্থনীতির আকার তার চেয়ে ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। ব্রেক্সিট গণভোটের পর থেকে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি প্রতি সপ্তাহে হারিয়েছে ১০০ কোটি ডলার (৮০ কোটি পাউন্ড) এবং ঘণ্টায় হারিয়েছে ৬০ লাখ ডলার (৪৭ লাখ পাউন্ড)। ইইউ কিংবা সারা বিশ্বের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো গঠনগত পরিবর্তন না হওয়া সত্ত্বেও অর্থনীতিতে এতটা বিপর্যয় ঘটেছে। যুক্তরাজ্য এখনো তাদের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার ইইউর কাছে পণ্য ও সেবা বিক্রি চালু রেখেছে। অন্যদিকে দেশটির রাজনীতিবিদরা ব্রেক্সিট নিষ্পত্তি করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রায় তিন বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ বাণিজ্য বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি। ফলে দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ স্থগিত বা বাতিল করেছে। অনেকে বিশৃঙ্খল ব্রেক্সিট মোকাবেলার পরিকল্পনার পেছনে লাখ লাখ পাউন্ড ব্যয় করেছে। যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে এখনো বিশৃঙ্খলা চলমান রয়েছে। দেশটি কোনো চুক্তি ছাড়াই ইইউ ত্যাগ করবে কিনা, এ বিষয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড জানিয়েছে, এ পরিস্থিতির ফলে উদ্ভূত বিপর্যয় হবে ২০০৮ সালে আর্থিক সংকটের চেয়েও ভয়াবহ। ২০১৬ সালে ব্রেক্সিট গণভোটের সময় যুক্তরাজ্য ছিল জি-৭ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রম্নত বর্ধনশীল দেশ। কিন্তু বর্তমানে যুক্তরাজ্যের অবস্থান সবার নিচে। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ২ শতাংশ থেকে কমে বর্তমানে ১ শতাংশের নিচে দাঁড়িয়েছে। গণভোটের পর প্রথমত যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ থমকে দাঁড়িয়েছে এবং ২০১৮ সালে তা ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে ব্রেক্সিট ভোটাভুটির পর থেকে জি-৭ভুক্ত বাকি দেশগুলোর ব্যবসায় বিনিয়োগ বছরে প্রায় ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাজ্যে ব্যবসায়িক আস্থা গত প্রায় এক দশকে সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের মনিটারি পলিসি কমিটির এক সদস্য জানান, আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাজ্যের পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ার কারণ হলো, ব্রেক্সিট ঘিরে উদ্ভূত অনিশ্চয়তা। পরিবারগুলোতেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ২০১৬ সালের ভোটের পর থেকে ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের মান ১৫ শতাংশ পড়ে গেছে। যার ফলে আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। দ্রম্নত মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের উপার্জিত অর্থের মান কমে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের নির্বাহীরা তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্রেক্সিট প্রম্নফ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাহীরা ব্রেক্সিট নিয়ে কতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। ব্রিটিশ চেম্বার অব কমার্সের মহাপরিচালক অ্যাডাম মার্শাল বলেন, রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে এরই মধ্যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। চলমান অনিশ্চয়তার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ স্থগিত হয়েছে, অনেকে নতুন কর্মী নিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। ব্রেক্সিটের পর আঞ্চলিক ব্যবসা বহাল রাখতে যুক্তরাজ্যের অনেকগুলো ব্যাংক জার্মানি, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড এবং ইইউর অন্যান্য দেশে তাদের কার্যালয় স্থাপন করেছে। ইইউর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে সন্তুষ্ট করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বড় আকারে সম্পদ স্থানান্তর করতে হয়েছে। সূত্র: সিএনএন বিজনেস।