শাহজালালসহ ৩ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারের উদ্যোগ

প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

জাহাঙ্গীর আলম
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ফাইল ছবি
বাংলাদেশে আকাশপথে যাত্রী বৃদ্ধি পেলেও বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা যথেষ্ট নয়। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে সরকার হযরত শাহজালালসহ দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ বিশেষ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বহির্গমন যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের জন্য ৪টি বডি স্ক্যানার কেনা হবে। শাহ আমানত ও ওসমানী বিমানবন্দরের জন্যও কেনা হবে একটি করে বডি স্ক্যানার। এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় তৈরি করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষ (বেবিচক)। যাচাই-বাচাই শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আগামী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানায়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম-দুবাই রুটে বাংলাদেশ বিমানের ময়ূরপঙ্খীতে এক বিমানযাত্রী গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারিতে অস্ত্র ঠেকিয়ে বিমান ছিনতাই করার চেষ্টা করে। এ নিয়ে বাংলাদেশের বিমানবন্দরের স্ক্যানিং ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠে। সবার মনে প্রশ্ন জাগে দেহ তলস্নাশি করার পরও কিভাবে অস্ত্র নিয়ে বিমানের ভেতরে ঢুকে। বর্তমানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ঘাটতি রয়েছে। তা জোরদার করা জরুরি। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ ও সংস্থানের লক্ষ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) কারিগরি সহায়তায় একটি সার্ভে করা হয়। উদ্দেশ্য বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আধুনিকায়ন। এরপর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে 'আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরসমূহের সিকিউরিটি ব্যবস্থার উন্নয়ন' শীর্ষক একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে অনুমোদনের জন্য গত বছরে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায়। জাইকার জরিপ অনুযায়ী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য রপ্তানি কার্গো স্ক্রিনিংয়ের জন্য ২টি এক্সপেস্নাসিভ ডিটেকশন (বিস্ফোরক শনাক্তকরণ) সিস্টেম (ইডিএস) এবং আন্তর্জাতিক বহির্গমন যাত্রী স্ক্রিনিংয়ের জন্য চারটি বডি স্ক্যানার কেনার কথা বলা হয়। একই সঙ্গে শাহ আমানত বিমানবন্দরের জন্য বহির্গমন যাত্রী স্ক্রিনিংয়ের জন্য একটি বডি স্ক্যানার এবং ওসমানী বিমানবন্দরে বহির্গমন যাত্রী স্ক্রিনিংয়ের জন্যও একটি বডি স্ক্যানার সংগ্রহ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কর্মকর্তাদের জন্য একটি ডাবল কেবিন পিক-আপ কেনার কথা বলা হয়। এতে পরামর্শক সেবাও রয়েছে। এ সব কাজে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫৯ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ধরা হয় ৫৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাকি সাড়ে ৫ কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় করার কথা। বাস্তবায়নকাল ধরা হয় ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে। সূত্র আরও জানায়, এ সব কাজে জাইকা অর্থায়ন করবে বলে ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই রেকর্ড অব ডিসকাশন সই করে। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর জাইকা ও বেবিচকের জয়েন্ট কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভায় মিনিটস অব মিটিং সই হয়। এরপরই মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। যা যাচাই-বাচাই করতে গত ৮ অক্টোবর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিছু ব্যাপারে অসঙ্গতি থাকায় তা সংশোধন করতে বলা হয় পরিকল্পনা কমিশন থেকে। কিন্তু আগে পাঠায়নি। কিন্তু সম্প্রতি বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে তাড়াহুড়া করে বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে সংশোধিত ডিপিপি পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। অন্যান্য কাজ শেষে আগামী একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। সূত্র জানায়, কুর্মিটোলাতে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮০ সালে। ১ হাজার ৯৮১ একর এলাকা বিস্তৃত এই বিমানবন্দর দিয়ে দেশের প্রায় ৫২ শতাংশ আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট উঠা-নামা করে। আর চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ২১ শতাংশ বিভিন্ন ফ্লাইট উঠা-নামা করে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ চার বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয় সরকার। চট্টগ্রামের হযরত শাহ্‌ আমানত আন্তর্জাতিক, যশোর ও সৈয়দপুর অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের জন্য 'বিমানবন্দরগুলোর সেফটি এবং সিকিউরিটি ব্যবস্থা শীর্ষক' প্রকল্পের আওতায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, বিমান পরিবহনের সার্বিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়। তারপরও সম্প্রতি এক বিমানযাত্রী অস্ত্র নিয়ে ঢুকে বিমান ছিনতাই করার চেষ্টা করে। কিন্তু এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে যাত্রীদের বডি স্ক্যানের ব্যবস্থা জোরদার হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।