আড়াই হাজার কোটি টাকা মূলধন হারিয়েছে ডিএসই

প্রকাশ | ২০ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
গত সপ্তাহের চার কার্যদিবসের মধ্যে দুই কার্যদিবসেই বড় দরপতন হয়েছে দেশের শেয়ারবাজারে। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) মূলধন হারিয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। সেই সঙ্গে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গত সপ্তাহে রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন হয়নি। ফলে সপ্তাহটিতে প্রথম কার্যদিবস ছিল সোমবার। ওইদিন দরপতন দিয়ে শেষ হয় লেনদেন। পরের কার্যদিবসও দরপতন অব্যাহত থাকে। তবে শেষ দুই কার্যদিবসে ডিএসইতে মূল্যসূচক বাড়ে। এতে সপ্তাহজুড়ে বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ে। এরপরও মূল্যসূচকের পতন রক্ষা করা যায়নি। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৪৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে ১৭৬টির দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। অন্যদিকে দাম কমেছে ১৪৩টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯টির দাম। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ার পরও সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৪ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ১৩৩ দশমিক ৫২ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অন্য দুটি মূল্যসূচকের মধ্যে গত সপ্তাহে ডিএসই-৩০ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে ৫ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা দশমিক ২৮ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ৪৫ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আর ডিএসই শরিয়াহ্‌ সূচক কমেছে ৫ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বা দশমিক ৪৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ৩৬ দশমিক ২০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এদিকে সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩০৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩৩৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ২৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বা ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২৩২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ১ হাজার ৬৭৩ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৪৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বা ২৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশই ছিল 'এ' ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের দখলে। এ ছাড়া বাকি ১১ দশমিক ৩০ শতাংশ 'বি' ক্যাটাগরিভুক্ত, ২ দশমিক ৯১ শতাংশ 'এন' ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের এবং ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ 'জেড' ক্যাটাগরিভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ফরচুন সুজের শেয়ার। কোম্পানিটির ৭৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা সপ্তাহজুড়ে হওয়া মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ২০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৮ কোটি ৬৮ টাকা, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ৬৪ কোটি ৪২ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস। লেনদেনে এরপর রয়েছে- ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিসটিবিউশন কোম্পানি, এস্কয়ার নিট কম্পোজিট, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল, মুন্নু জুট স্টাফলার্স, গ্রামীণফোন, সুহৃত ইন্ডাস্ট্রিজ এবং ব্র্যাক ব্যাংক। এদিকে সপ্তাহ লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহে টপটেন লুজার বা দর পতনের শীর্ষে রয়েছে রেকিট বেনকিজার। সপ্তাহে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর কমেছে ২৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। ডিএসইর সপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারটি সর্বশেষ ২ হাজর ৩০০ টাকা দরে লেনদেন হয়। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটি সর্বমোট ১৮ কোটি ৮ লাখ ৬ হাজার টাকা লেনদেন করে। যা গড়ে প্রতিদিন ৪ কোটি ৫২ লাখ ১ হাজার ৫০০ টাকা। লুজারের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মুন্নু সিরামিকস। সপ্তাহে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর বেড়েছে ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। কোম্পানিটি সর্বশেষ ২৬৩ টাকা দরে লেনদেন হয়। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটি সর্বমোট ৬৮ কোটি ৬৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা লেনদেন করে। যা গড়ে প্রতিদিন ১৭ কোটি ১৭ লাখ ১৩ হাজার ২৫০ টাকা। জিএসপি ফিন্যান্স লুজারের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সপ্তাহে শেয়ারটির সর্বোচ্চ দর বেড়েছে ১২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। কোম্পানিটি সর্বশেষ ১৭ টাকা ৪০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটি সর্বমোট ২ কোটি ৯৭ লাখ ৯৬ হাজার টাকা লেনদেন করে। যা গড়ে প্রতিদিন ৭৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- মুন্নু জুট স্ট্যাফলার্স, ইসলামীক ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ব্র্যাক ব্যাংক, হাইডেলবার্গ সিমেন্ট, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, ফার্স্ট ফিন্যান্স ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। অন্যেিদক সপ্তাহ লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহে টপটেন গেইনার বা দর বাড়ার শীর্ষে উঠে এসেছে স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস। সপ্তাহে শেয়ারটির সর্বচ্চ দর বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ডিএসইর সপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা করে এ তথ্য পাওয়া যায়। তথ্য অনুযায়ী, শেয়ারটি সর্বশেষ ২১০ টাকা ২০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটি সর্বমোট ৯ কোটি ৭৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা লেনদেন করে। যা গড়ে প্রতিদিন ২ কোটি ৪৩ লাখ ৮৮ হাজার ৭৫০ টাকা। গেইনারের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ইউনাইটেড ইন্সু্যরেন্স। সপ্তাহে শেয়ারটির সর্বচ্চ দর বেড়েছে ১৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। কোম্পানিটি সর্বশেষ ৬৫ টাকা ৫০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটি সর্বমোট ৫ কোটি ৫১ লাখ ৮৭ হাজার টাকা লেনদেন করে। যা গড়ে প্রতিদিন ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৬ হাজার ৭৫০ টাকা। মার্কেন্টাইল ইন্সু্যরেন্স গেইনারের তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সপ্তাহে শেয়ারটির সর্বচ্চ দর বেড়েছে ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ। কোম্পানিটি সর্বশেষ ৩১ টাকা ৫০ পয়সা দরে লেনদেন হয়। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটি সর্বমোট ২ কোটি ৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা লেনদেন করে। যা গড়ে প্রতিদিন ৫২ লাখ ১৮ হাজার ২৫০ টাকা। তালিকায় থাকা অন্য কোম্পানিগুলো হচ্ছে- হাক্কানি পাল্প, একটিভ ফাইন কেমিক্যালস, ফাইন ফুডস, এইচ আর টেক্সটাইল, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, প্রভাতি ইন্সু্যরেন্স, ও তাকাফুল ইসলামী ইন্সু্যরেন্স।