অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাস

পোশাকেই রপ্তানির ভরসা

প্রকাশ | ১০ মে ২০১৯, ০০:০০

ইমদাদ হোসাইন
পোশাক খাতের ওপর ভর করে বাড়ছে রপ্তানি আয়। রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬.৩৬ শতাংশ বেশি রপ্তানি আয় হয়েছে। যা বিগত অর্থবছরের তুলনায় ১১.৬১ শতাংশ বেশি। তৈরি পোশাক ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি থাকলেও চামড়া, পাট ও হোম টেক্সটাইল খাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না বাংলাদেশ। এ তিন বড় খাতের রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমছে। ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাস শেষে পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমে ১১ দশমিক ৬১ শতাংশে নেমেছে। অথচ ৬ মাস শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ৩ হাজার ৩৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৪০৬ কোটি ডলারের পণ্য। চলতি অর্থবছর ৩ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সে লক্ষ্য অর্জনে শেষ ৩ মাসে ৮১০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করতে হবে। গত ১০ মাসের ধারা বজায় থাকলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হবে। এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছর ৩ হাজার ২৬৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ১০ মাসে ২ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে নিট পোশাক রপ্তানিতে ১ হাজার ৪০৮ এবং ওভেন পোশাক রপ্তানিতে ১ হাজার ৪৪০ কোটি ডলার আয় হয়েছে। নিট পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১২ দশমিক ৩২ এবং ওভেন পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৮৩ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ কম। বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজারে এখন মন্দাভাব চলছে। মানুষ ব্যয় কমাতে চামড়ার বিকল্প পণ্যের দিকে ঝুঁকছে। এদিকে চলতি অর্থবছরে প্রথম ১০ মাসে ৬৯ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৮৩ শতাংশ কম। এ ছাড়া ৭২ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম। অন্যদিকে ৭৯ কোটি ডলারের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। তবে এ সময়ে ৬৩ খাতের মধ্যে মাত্র ২৮টি খাত রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেনি। সম্ভাবনাময় চামড়া ও পাট পণ্যে নিয়ে বিভিন্ন সুবিধা দেয়ার কথা সরকার বললেও গত কয়েক মাস ধরে এ খাতের রপ্তানি আয় নেতিবাচক হয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রপ্তানি আয়ের হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ৩ হাজার ৩৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যার বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ১৯ কোটি ৯ লাখ ডলার। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ সময় অর্জিত হয়েছিল ৩ হাজার ৪০ কোটি ৬ লাখ ডলার। পোশাক খাতের ওপর ভর করে দেশের সামগ্রিক পণ্য রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। এ খাতে ৩ হাজার ৩১২ কোটি ৬৩ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১৪ কোটি ২৮ লাখ ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৭.৯৩ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ সময়ে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ২৫ কোটি ডলার। আর পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রায় বিশাল হোঁচট খেয়েছে।