প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে সন্দেহ সানেমের

প্রকাশ | ১০ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বৃহস্পতিবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত 'কোয়ার্টারলি রিভিউ অব বাংলাদেশ ইকোনমি' শীর্ষক অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান
চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ হওয়ার যে আভাস সরকার দিচ্ছে, তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেম। সরকারের কথার সঙ্গে দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তিগুলোর তথ্য-উপাত্ত মেলে না দাবি করে তারা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) সরবরাহ করা তথ্য-উপাত্তগুলো পুনঃপর্যালোচনার আহ্‌বান জানিয়েছে। এর আগে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডিও সরকারের প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। গত জানুয়ারিতে টানা তৃতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেয়া আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ হবে বলে ধরেছে। সরকারের এই প্রাক্কলনের কাছাকাছি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের আভাস দিয়েছে এডিবি; তারা বলছে এই অঙ্ক ৮ শতাংশ হতে পারে। তবে বিশ্ব ব্যাংক বলছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। বৃহস্পতিবার সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) আয়োজিত 'কোয়ার্টারলি রিভিউ অব বাংলাদেশ ইকোনমি' শীর্ষক অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে সরকারের প্রবৃদ্ধির হিসাব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ। 'বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশে এখন রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগের চেয়েও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি প্রবৃদ্ধির গতি বাড়াচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একটি কম আয়ের দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি দিয়ে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হতে পারে না।' তিনি চীনের প্রবৃদ্ধির উদাহরণ দিয়ে বলেন, দেশটিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। তার একটি বড় কারণ হচ্ছে তারা বৈদেশিক বাণিজ্য থেকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির নীতি গ্রহণ করেছে। 'এজন্য তার গ্রোথ কমে যাচ্ছে, তাকে গ্রোথ স্যাক্রিফাইস করতে হচ্ছে,' বলেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা এ ধরনের একটা ব্যখ্যা দিতে চাইলে সেই ব্যাখ্যাটি কিন্তু বিপজ্জনক। কারণ বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় অনেক কম। এত কম মাথাপিছু আয়ের দেশে অভ্যন্তরীণ চাহিদা দিয়ে এ ধরনের প্রবৃদ্ধি সম্ভব নয়।' সেলিম রায়হান বলেন, ১৯৮০ সালে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিশ্বের যেসব দেশ বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, সেসব দেশে অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখেছিল রপ্তানি। তিনি বলেন, 'তাহলে আমাদের যে প্রবৃদ্ধি, ধরে নিচ্ছি তা হচ্ছে বহির্বাণিজ্য দিয়ে, বিশেষ করে এক্সপোর্ট ও রেমিট্যান্স। অথচ দেখছি সম্প্রতি রেমিট্যান্স ও রপ্তানিতে নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধির প্রবণতা। অথচ প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখা যাচ্ছে।' 'তাহলে আমরা কীভাবে এই ঊর্ধ্বমুখী জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ব্যাখ্যা করব? একাডেমিক ও পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে আমরা এই প্রবৃদ্ধিকে ব্যাখ্যা করতে হিমশিম খাচ্ছি।' পরিসংখ্যান বু্যরোর তথ্য কেন পুনঃপর্যালোচনার প্রয়োজন, তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ৫টি উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, 'প্রথম উদ্বেগটি হচ্ছে আমাদের রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি কমার পরও অভ্যন্তরীণ চাহিদার উচ্চ প্রবৃদ্ধি। 'বিবিএস বেসরকারি ব্যয়ের হিসাবে দেখিয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭ দশমিক ৪৩ ভাগ এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এখাতের প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে ১১ দশমিক ০২ শতাংশ। অর্থনীতিবিদের মতে এটা অস্বাভাবিক। 'কারণ আমরা আগের বছরগুলোতে এত প্রবৃদ্ধি দেখি না। যেমন ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এখাতের প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু প্রাইভেট সেক্টরের ব্যয়ে এত উচ্চ প্রবৃদ্ধি কেন হল, তা ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না।' সরকারি ব্যয়ের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ব্যাখ্যা করা গেলেও 'প্রাইভেট কনজামশন একটি পাজল' বলে মন্তব্য করেন তিনি। তার উদ্বেগের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে- চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাবে শিল্প উৎপাদনে উচ্চ প্রবৃদ্ধি। শিল্প উৎপাদন প্রবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ শতাংশ। অথচ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এখাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে কম রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ কম হওয়ার পরও কীভাবে এত প্রবৃদ্ধি, তাও মেলাতে পারছে না সানেম। তৃতীয় কারণটি হচ্ছে- দুর্বল বাণিজ্যিক পরিবেশের মধ্যেও উচ্চ শিল্প উৎপাদনে এত বেশি প্রবৃদ্ধি কীভাবে সম্ভব হলো?