বিশ্বের প্রথম ভাসমান দুগ্ধ খামার রটারডামে

প্রকাশ | ১১ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
আমস্টারডামের অদূরে নেদারল্যান্ডসের একটি কোম্পানি বিশ্বের প্রথম ভাসমান দুগ্ধ খামার চালু করতে যাচ্ছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন ভাসমান এ খামারটি নেদারল্যান্ডসের দ্বিতীয় বৃহত্তম বন্দর নগরী রটারডামের পানিতে ভাসতে যাচ্ছে। এ খামার রাজধানী আমস্টারডাম থেকে ৫০ মাইল দূরে তৈরি করা হবে। ৮৯ ফুট দীর্ঘ ও ৮৯ ফুট প্রশস্ত এ খামার দৈনিক গড়ে ২১১ গ্যালন দুধ উৎপাদন করতে পারবে বলে জানিয়েছেন প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি বেলাডনের ব্যবসায়িক অংশীদার মিংক ভ্যান উইঙ্গারডেন। এ খামারের গরুর সংখ্যা ৪০টি। নেদারল্যান্ডসের ছোট খামারগুলোয় সচরাচর এ সংখ্যক গরুই থাকে। বিজনেস ইনসাইডারকে ভ্যান উইঙ্গারডেন জানিয়েছেন, ভাসমান খামারের বিষয়টা কিছুটা বিচিত্র ও কিছু মানুষের জন্য খুব বেশি যৌক্তিক না হওয়া সত্ত্‌েবও আমরা মনে করি পানির উপরে ক্ষেত্র সৃষ্টি করার এখনো অনেক অবকাশ রয়ে গেছে। পানির উপরে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমরা নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি। ২০১২ সালে নিউইয়র্কে একটি ব্যবসায়িক সফরের পর ভ্যান উইঙ্গারডেন ও তার স্বামী পিটার ভ্যান উইঙ্গারডেনের মাথায় এ পরিকল্পনা আসে। তাদের সফরের সময়ই নিউইয়র্কে আঘাত হানে হারিকেন স্যান্ডি। বন্যায় ভেসে যায় ম্যানহাটন সিটি। বিদু্যৎ না থাকায় অন্ধকারে ডুবে যায় অনেক নগরবাসী। এ ঝড়ের ফলে হঠাৎ করে তাজা খাদ্য সামগীর সংকট দেখা দেয়, কেনান বন্যার কারণে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছিল না কয়েক হাজার খাদ্যবাহী ট্রাক। যেসব শহরের আশপাশে খাবার উৎপাদন করা হয়, সেগুলোর সরবরাহ শৃঙ্খলায় যেকোনো ধরনের আঘাত আরো ভালোভাবে প্রতিরোধ করার জন্য বেলাডন একটি উপায় বের করার সিদ্ধান্ত নেন। রুফটপ, গুদাম ঘরসহ অন্যান্য জায়গায় শহুরে কৃষির ধারণার সঙ্গে যুক্ত হয় পানিতে ভাসমান খামারের ধারণা। খামারগুলো ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধী ও আবহাওয়ার সঙ্গে তাল রেখে মানিয়ে চলতে পারবে বলে জানিয়েছেন মিংক ভ্যান উইঙ্গারডেন। তিনি আরো জানিয়েছেন, জোয়ার-ভাটায় এসব খামার ওঠানামা করতে পারবে এবং এতে খাদ্য উৎপাদনে কোনো ব্যাঘাত হবে না। এতে যেকোনো পরিস্থিতিতে শহরে খাদ্য উৎপাদনের অবকাশ থাকছে। প্রক্রিয়াকরণ ও দুগ্ধ প্যাকেটজাতের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে খামারের নিচতলায়। গাভী ও দুধ দোহনের রোবট থাকবে দ্বিতীয় তলায়। গবাদি পশুর খাদ্য ত্রিপাতাবিশিষ্ট ছোট এক ধরনের গাছ ও ঘাস চাষের জন্য ব্যবহার করা হবে খামারের তৃতীয় তলা। যতটা সম্ভব এ খামার রিসাইকেল পদ্ধতি ব্যবহার করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। উদাহরণস্বরূপ, গরুকে খাওয়ানো হবে শহরের বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট খাদ্য, যেমন স্থানীয় ভাঁটিখানা থেকে ফেলে দেয়া শস্যদানা ও মিল-কারখানার উপজাত। \হবেলাডন নিজেদের গরুর বর্জ্যও প্রক্রিয়াজাত করে প্রাকৃতিক সার হিসেবে বিক্রি করবে। রটারডামের এ প্রকল্প চালু হওয়ার পর বেলাডন আরো ভাসমান খামার চালু করতে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ভ্যান উইঙ্গারডেন। দুগ্ধ খামারের বাইরে ভাসমান মুরগির খামার ও ভাসমান ভার্টিক্যাল গিনহাউজ খামারও চালু করার কথা ভাবছে কোম্পানিটি। তিনি আরো জানিয়েছেন, তারা সিঙ্গাপুর ও চীনেও এ ধরনের খামার চালু করার পরিকল্পনা করছে। নেদারল্যান্ডসের আরেকটি শহরে দ্বিতীয় ভাসমান খামার চালু করার জন্য কোম্পানিটি আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি ও তার স্বামী বিশ্বাস করেন, খাদ্য সুবিধার কথা মাথায় রেখে নতুন কমিউনিটিগুলোর পরিকল্পনা করা উচিত। উদাহরণ হিসেবে রটারডাম সমুদ্রবন্দরের আশপাশের এলাকাগুলোর কথা বলা যায়। এসব এলাকা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ঘরবাড়ি ও অফিসে ভরে উঠবে। এসব নতুন প্রকল্প পরিকল্পনার সময় খাদ্য উৎপাদনের বিষয়টা কমিউনিটির কেন্দ্রে রাখা উচিত। দুর্গন্ধ ও কোলাহল নিয়ে বাড়তে থাকা সচেতনতার কথা মাথায় রেখে রটারডাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বেলাডনের খামারের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু বিধি-নিষেধের কথা জানিয়েছে। ভ্যান উইঙ্গারডেন জানিয়েছেন, খামারের বর্জ্য রোবট দিয়ে খুব দ্রম্নত সরিয়ে ফেলা হবে, ফলে খামারের দুর্গন্ধ তেমন একটা ছড়াতে পারবে না। অন্যদিকে গরুর কোলাহল তেমন একটা সমস্যা না! তিনি এটাও বলেছেন, কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে কিছু লোক উদ্বিগ্ন রয়েছে বটে। ভাসমান খামারে প্রথম গরুটা কবে আসবে, তা দেখার তর সইছে না অনেকের। সমুদ্রবন্দরে গরু দেখার অধীর আগহে দিন গুনছে তারা।