পেস্নসমেন্ট আইপিওর আকার বিষয়ে জনমত নেবে বিএসইসি

প্রকাশ | ১৮ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) নূ্যনতম আকার নির্ধারণ, তালিকার বাইরে থাকা কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির পদ্ধতি পরিবর্তন, পেস্নসমেন্ট শেয়ারে লক-ইন এর মেয়াদ বাড়ানোর লক্ষ্যে আইন সংশোধনের আগে এ বিষয়ে জনমত যাচাই করবে বিএসইসি। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্সের ২ সিসি ধারার ক্ষমতাবলে আইনটি সংশোধন করবে না পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গত ২৯ এপ্রিল ঘোষিত সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সংস্কারের জন্য ক্যাপিটাল ইসু্য রুলস ২০১৫ সংশোধন করতে হবে। আইনটির সংশোধনের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার জন্য গত বৃহস্পতিবার বিএসইসি প্রধান স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বৈঠক করেছে। বিএসইসির সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই), ডিএসই ব্রোকার অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) ও মিউচু্যয়াল ফান্ড অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। স্টেকহোল্ডারদের একাংশের দাবি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার আলোকে গত ২৯ এপ্রিল বিএসইসি বেশ কিছু সংস্কারের ঘোষণা দেয়। বিএসইসির ঘোষণা অনুসারে, আগামী দিনে স্টক এক্সচেঞ্জের বাইরে থাকা কোম্পানিগুলোর মূলধন বাড়ানোর বিষয়ে বিএসইসি থেকে কোনো অনুমোদন নিতে হবে না। এই ধরনের শেয়ারে (যা সাধারণভাবে পেস্নসমেন্ট শেয়ার নামে পরিচিত) ৩ বছরের লক-ইন থাকবে। অর্থাৎ আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর ৩ বছর পর্যন্ত পেস্নসমেন্ট শেয়ার বিক্রি করা যাবে না। আর এই ৩ বছরের মেয়াদ গণনা শুরু হবে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শুরুর দিন থেকে। বর্তমান আইনে পেস্নসমেন্ট শেয়ারে লক-ইনের মেয়াদ ১ বছর। আর এই মেয়াদকাল গণনা শুরু হয় প্রসপেক্টাস অনুমোদনের দিন থেকে। অন্যদিকে ক্যাপিটাল ইসু্য রুল, ২০১৫ সংশোধন করে ফিক্সড প্রাইস পদ্ধতির নূ্যনতম আইপিওর আকার ৫০ কোটি এবং বুকবিল্ডিং পদ্ধতির নূ্যনতম আইপিওর আকার ১০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হবে। এমনকি পরিশোধিত মূলধনের ভিত্তিতে আইপিওর নূ্যনতম আকার এর চেয়ে বেশিও হতে পারে। কারণ নির্দেশনা জারির সময় কমিশন কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ কিংবা ৫০ কোটি ও ১০০ কোটির মধ্যে যেটি সর্বোচ্চ হবে, সে পরিমাণ অর্থ উত্তোলন সংক্রান্ত শর্ত আরোপ করে দেবে। স্টক লভ্যাংশ (বোনাস) দেয়ার ক্ষেত্রে এর কারণ জানাতে হবে। যে টাকার বিপরীতে যে মূলধন বাড়ানো হবে, সেটি ব্যবসা সম্প্রসারণ অথবা বিএমআরই-যে কাজে ব্যয় করা হবে, সে বিষয়ে ইসু্যয়ার কোম্পানিকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। পাশাপাশি এটি মূল্যসংবেদনশীল তথ্য হিসেবে প্রকাশ করতে হবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের এককভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণসংক্রান্ত বিএসইসির যে নির্দেশনা রয়েছে, সেটি পরিপালনে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর জন্য স্বতন্ত্র ক্যাটাগরি তৈরি করে সেখানে স্থানান্তর করা হবে। বৈঠকে মূলত ২৯ এপ্রিল ঘোষিত বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা হয়। বিএসইসির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের মতামত ও সুপারিশ জানতে চাওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে ডিএসই ও ডিবিএ পেস্নসমেন্ট শেয়ারে লক-ইনের মেয়াদ বাড়ানোর ঘোষণার পক্ষে তাদের অবস্থানের কথা জানায়। অন্যদিকে বিএমবিএ ৩ বছরের লক-ইনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে অন্যান্য দেশের চর্চাগুলো বিশ্লেষণ ও বিবেচনা করে তার আলোকে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ জানায়। তাদের মতে, ৩ বছরের জন্য লক-ইন আরোপ করলে কোম্পানিগুলোর পক্ষে মূলধন সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাতে আইপিওর সংখ্যা কমে যাবে এবং পুঁজিবাজারের যে মূল উদ্দেশ্য শিল্পখাতে অর্থ জোগান দেয়া, সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, চাইলে ২ সিসি'র আওতায় নতুন শর্ত আরোপ করতে পারেন। কিন্তু সবচেয়ে উত্তম আইন সংশোধনের প্রচলিত পদ্ধতি অনুসরণ করা। এই পদ্ধতি অনুসারে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বিএসইসি আইনের সংশোধনীর খসড়া তৈরি করে সে বিষয়ে জনমত আহ্বান করবে। প্রাপ্ত জনমত পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করে সংশোধনী চূড়ান্ত করা হয়। বৈঠকে আবারও তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের এককভাবে ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণসংক্রান্ত বিএসইসির যে নির্দেশনা রয়েছে, সেটি পরিপালনে ব্যর্থ কোম্পানিগুলোর জন্য স্বতন্ত্র ক্যাটাগরি তৈরি করে সেখানে স্থানান্তর করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে ডিএসইর সাবেক সভাপতি মো. রকিবুর রহমান নূ্যনতম শেয়ার ধারণের শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য গ্রাহকদেরকে ঋণ-সুবিধা না দেয়ার প্রস্তাব করেন। বিএসইসির পক্ষ থেকে বিষয়টি লিখিত প্রস্তাব আকারে জমা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। বিএমবিএ এই বিষয়ে জানতে চায়, আলোচিত কোম্পানির শেয়ার কেনার জন্য ইতোমধ্যে যাদেরকে ঋণ দেয়া হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ধরনের বিনিয়োগকারীদেরকে ঋণ সমন্বয়ের জন্য একটি সময় বেঁধে দেয়া যেতে পারে। বৈঠকের বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, গত ১৯ এপ্রিল আইপিও, ক্যাপিটাল রেইজিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএসইসি তাদের যে সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিল, সে সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আজ স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিএসইসি বিনিয়োগকারী ও বাজারের স্বার্থে সবার মতামত নিয়ে কাজ করতে চায়। বৈঠকে নূ্যনতম শেয়ার ধারণের ইসু্য নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।