বিপিডিবিকে ২৫ কোটি শেয়ার দিতে চায় পাওয়ার গ্রিড

প্রকাশ | ১৯ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) অনুকূলে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ২৫ কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার শেয়ার ইসু্য করতে চায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিদু্যৎ খাতের কোম্পানি পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবিএল)। শেয়ার ইসু্যর বিষয়ে অনুমোদনের জন্য এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন করেছে পাওয়ার গ্রিড। তবে এ বিষয়ে বিএসইসির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পিজিসিবিএল গঠনের পর বিপিডিবির বিদু্যৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার যাবতীয় সম্পত্তি ও দায়দেনা কোম্পানিটির অনুকূলে হস্তান্তর করা হয়। ২০০২ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। বর্তমানে পাওয়ার গ্রিডের ৭৬ দশমিক ২৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বিপিডিবির কাছে। পাওয়ার গ্রিডের আর্থিক প্রতিবেদনে বিপিডিবির সম্পত্তি ও দায়দেনা পিজিসিবিএলের অনুকূলে হস্তান্তরের বিষয়টিকে বিপিডিবির বিনিয়োগ হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে। আর এ বিনিয়োগ বিপিডিবির ইকুইটি হিসেবে ডিপোজিট ফর শেয়ার খাতে জমা হিসেবে দেখানো হয়েছে। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, এ খাতে জমার পরিমাণ ২৫১ কোটি ৮১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিপিডিবিকে এ অর্থের সমপরিমাণ অর্থাৎ ২৫ কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার শেয়ার প্রদানের জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন করা হয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির অনুমোদন মিললে বিপিডিবিকে উলিস্নখিতসংখ্যক শেয়ার দেয়া হবে। এদিকে বিপিডিবির অনুকূলে শেয়ার ইসু্য করা হলে চলতি ২০১৮-১৯ হিসাব বছরের তৃতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে পিজিসিবিএলের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্যের (এনএভিপিএস) ওপর প্রভাব পড়বে বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। বর্তমানে পাওয়ার গ্রিডের পরিশোধিত মূলধন ৪৬০ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে কোম্পানিটির বর্তমান শেয়ার সংখ্যা ৪৬ কোটি ৯ লাখ ১২ হাজার ৯৯১। বিপিডিবির অনুকূলে ২৫ কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার শেয়ার ইসু্য করা হলে তা হবে পিজিসিবিএলের মোট পরিশোধিত শেয়ারের ৫৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এদিকে বিপিডিবির পাশাপাশি পাওয়ার গ্রিডে বাংলাদেশ সরকারের ইকুইটি হিসেবে ডিপোজিট ফর শেয়ার খাতে ৩ হাজার ৪৮৩ কোটি ৮ লাখ টাকা জমা রয়েছে। মূলত বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে বিদু্যৎ সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পাওয়ার গ্রিড যে পরিমাণ অর্থ পেয়েছে, তাই ডিপোজিট ফর শেয়ার খাতে জমা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ৬০ শতাংশ ইকুইটি ও ৪০ শতাংশ ঋণ হিসেবে পাওয়ার গ্রিডকে অর্থ দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারের ইকুইটির বিপরীতেও শেয়ার ইসু্যর পরিকল্পনা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পিজিসিবিএলের একটি প্রতিনিধি দল গত সপ্তাহে শেয়ার ইসু্যর বিষয়টি নিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। সেখানে তারা বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে শেয়ার ইসু্যর যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। তবে বিএসইসির চেয়ারম্যান তাৎক্ষণিকভাবে শেয়ার ইসু্যর অনুমোদনের বিষয়ে পিজিসিবিএলের প্রতিনিধি দলকে কোনো আশ্বাস দেননি বলে জানা গেছে। বিএসইসির একজন কর্মকর্তা জানান, পিজিসিবিএল বিপিডিবির বিনিয়োগের বিপরীতে শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা ধরে ২৫ কোটির বেশি শেয়ার ইসু্যর জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু একসঙ্গে এত বেশি শেয়ার ইসু্য করা হলে কোম্পানিটির ইপিএস ও এনএভিপিএস অনেক কমে যাবে। এতে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ কারণে আমরা বিষয়টি নিয়ে একটু সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছি। একসঙ্গে এত বেশি শেয়ার ইসু্যর অনুমোদন না দিয়ে কয়েক ধাপে শেয়ার ইস্যু করা যায় কিনা, তা পর্যালোচনা করে দেখছি আমরা। এতে কোম্পানিটির ইপিএস ও এনএভিপিএসের পাশাপাশি পুঁজিবাজারেও তুলনামূলক কম প্রভাব পড়বে। তবে যে সিদ্ধান্তই নেয়া হোক না কেন, তা পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করেই নেয়া হবে বলে জানান তিনি। ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, পাওয়ার গ্রিডের কর-পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ২১৮ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৪ টাকা ৭৩ পয়সা। হিসাব বছর শেষে অর্থাৎ ৩০ জুন এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১০৮ টাকা ১২ পয়সা। এদিকে চলতি হিসাব বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) কোম্পানিটির মুনাফা আগের হিসাব বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়ে ২৬৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময় কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৫ টাকা ৮০ পয়সা। ৩১ মার্চ এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১৩২ টাকা ১৫ পয়সা।