'ফণী'তে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের এক বছরের কিস্তি স্থগিত

প্রকাশ | ২০ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন
যাযাদি রিপোর্ট সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় 'ফণী'র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কৃষকদের কাছ থেকে ফসল ঋণ আদায় এক বছরের জন্য স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়াও সহজ শর্তে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ ও কৃষি ঋণ বিতরণ জোরদার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এটি দেশে কার্যরত সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক-প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় 'ফণী' বা জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কৃষি ঋণ বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কাছ থেকে ফসল ঋণ আদায় এক বছরের জন্য স্থগিত করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের খেলাপি ঋণের জন্য প্রযোজ্য ডাউনপেমেন্টের শর্ত শিথিল করে পুরনো ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ করে দ্রম্নততম সময় নতুন ঋণ বিতরণ করতে হবে। আরও জানানো হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত কোনো কৃষক যেন ঋণ পেতে বিলম্ব বা কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সে লক্ষ্যে ব্যাংকগুলো যথাযথ তদারকি ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক স্বপ্রণোদিতভাবে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন-সাপেক্ষে কেইস টু কেইস ভিত্তিতে ফসল ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, নতুন করে কোনো সার্টিফিকেট মামলা দায়ের না করে ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অনাদায়ী ঋণগুলো তামাদি হওয়া প্রতিবিধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং দায়েরকৃত সার্টিফিকেট মামলাগুলোর তাগাদা আপাতত বন্ধ রেখে সোলেনামার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তিকরণ, ফণী'র কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অনুকূলে কৃষি ঋণ বিতরণসহ অন্যান্য তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে মাসিকভিত্তিতে অবহিত করতে হবে। অবিলম্বে এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় 'ফণী'র প্রভাবে সৃষ্ট ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে দেশের বেশ কিছু জেলায় (ময়মনসিংহ, শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, লক্ষ্ণীপুর, বগুড়া, জয়পুরহাট, সাতক্ষীরা, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা, মাদারীপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, বাগেরহাট, খুলনা) কৃষি খাতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তীতে গত ৭ মে ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পরিসংখ্যান তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তার মতে, দেশের ৩৫ জেলায় ১৩ হাজার ৬৩১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ঘূর্ণিঝড় 'ফণী'র প্রভাবে ৩৫টি জেলায় ৩৮ কোটি ৫৪ লাখ দুই হাজার ৫০০ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আর ১৩ হাজার ৬৩১ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি। সে সময় কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় 'ফণী'র কারণে দেশের প্রায় ৩৫টি জেলায় ৯টি উপজেলায় বোরো ধান, ভুট্টা, সবজি, পাট ও পান ফসলের প্রায় ৬৩ হাজার ৬৩ হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া ৪৯ হেক্টর জমি সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে বোরো ৫৫ হাজার ৬০৯, সবজি তিন হাজার ৬৬০, ভুট্টা ৬৭৭, পাট দুই হাজার ৩৮২ এবং পান ৭৩৫ হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতি হয়েছে। 'ফণী' পরবর্তী কৃষি খাত পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কৃষি ঋণ সুবিধা দিতে এই নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।