বাজেটে বিমা খাতের নয় প্রস্তাব

প্রকাশ | ২২ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেট উপলক্ষে বিমা খাতের জন্য নয় দফা দাবি জানিয়েছে বিমামলিক ও নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্সু্যরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)। মঙ্গলবার বিআইএর কার্যালয়ে আয়োজিত প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বাজেটে বিমা খাতের দাবিগুলো তুলে ধরেন বিআইএর প্রেসিডেন্ট শেখ কবির হোসেন। তিনি বলেন, লাইফ ও নন-লাইফ ইন্সু্যরেন্স দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে বেকারত্ব নিরসন, বিনিয়োগ, শেয়ারবাজার, সম্পদ পুঞ্জীভূতকরণ, সরকারি কোষাগারে কর প্রদান এবং অর্থ একত্রীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। আমরা মনে করি, এ শিল্পের ভবিষৎ অনেক উজ্জ্বল। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে আমাদের এ খাতের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। বাজেটে বিমা খাতের দাবিগুলো- এক. পুনঃবিমা কমিশনের বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে যে উৎসে মূল্য সংযোজন কর আদায় করা হয়, তা থেকে অব্যাহতি দেয়া। এ দাবির পক্ষে বলা হয়, পুনঃবিমা প্রিমিয়ামের কমিশনের ওপর মূসক প্রযোজ্য নয়। বিমা কোম্পানি প্রিমিয়াম গ্রহণ করলেই গ্রাহকের নিকট থেকে ১৫ শতাংশ হারে মূসক গ্রহণ করে তা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করে। যেহেতু একই বিষয়ের ওপরে ভ্যাট প্রদান করা হয়েছে, পুনরায় একই বিষয়ে ভ্যাট প্রদান করা হলে তা দ্বৈত করের শামিল হবে। দুই. নন-লাইফ ইন্সু্যরেন্সের স্বাস্থ্যবিমার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করা। এ দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, লাইফ ইন্সু্যরেন্সগুলো (জীবনবিমা) হেলথ ইন্সু্যরেন্স কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের এ পলিসির জন্য ভ্যাট দিতে হয় না। পক্ষান্তরে নন-লাইফ ইন্সু্যরেন্সকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রদান করে থাকে। যার ফলে হেলথ পলিসির মূল্যহার বেশি হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নন-লাইফ ইন্সু্যরেন্স কোম্পানির হেলথ পলিসিসমূহ জনপ্রিয়তা অর্জনে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। হেলথ পলিসির ওপর থেকে ভ্যাট মওকুফ করা হলে অনেক গ্রাহকই হেলথ পলিসির আওতায় আসবে। তিন. জীবনবিমা পলিসিহোল্ডারদের পলিসি বোনাসের ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স কর্তন বন্ধ করা। এ দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, পলিসি বোনাসের ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স আরোপ করার ফলে দেশের সব লাইফ ইন্সু্যরেন্সের পলিসি হোল্ডারদের সংখ্যা কমে গেছে। গ্রাম-গঞ্জের ক্ষুদ্র পলিসি হোল্ডারদের ঝুঁকি ও মুনাফার কথা বুঝিয়ে তারপর পলিসি বিক্রি করা হয়। ক্ষুদ্রপলিসি হোল্ডারদের পলিসি বোনাসের ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্সের যে বিধান চালু করা হয়েছে তা যদি উঠিয়ে নেয়া না হয় তাহলে দেশে লাইফ ইন্সু্যরেন্সের ব্যবসা প্রতিনিয়ত কমতে থাকবে এবং কোম্পানিগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হবে। চার. বিমা এজেন্টদের উৎসে কর থেকে অব্যাহতি দেয়া। এ দাবির পক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হয়, বিমা এজেন্টদের কমিশনের ওপর ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। পক্ষান্তরে, বিদ্যমান আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিমা শিল্পে কর্মরত স্বল্প আয়ের এজেন্টদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যক্তি, শ্রেণির করদাতাদের ন্যায় নূ্যনতম করমুক্ত আয়সীমা পর্যন্ত উৎসে কর কর্তন থেকে অব্যাহতি দেয়া উচিত। পাঁচ. পুনঃবিমা প্রিমিয়ামের ওপর উৎসে কর রহিত করা। এ দাবির পক্ষে বলা হয়, বর্তমানে বিমা কোম্পানিগুলো পুনঃবিমা প্রিমিয়াম পাঠানোর ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন সম্পর্কিত অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। পুনঃবিমার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কর আরোপিত হলে বিমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে এবং এ শিল্পে একটি সংকটময় পরিস্থিতির উদ্ভব হবে। যার ফলশ্রম্নতিতে কোম্পানি তার অর্জিত মুনাফা হতে বঞ্চিত হবে এবং সরকারও রাজস্ব হতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ছয়. কর্পোরেট করের হার হ্রাস করা। এ দাবির পক্ষে বলা হয়, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করের হার সাড়ে ৩৭ শতাংশ। অন্যদিকে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের করের হার ২৫ শতাংশ অথবা তার চেয়ে কম। তাই বিমা কোম্পানির কর্পোরেট করের হার কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা প্রয়োজন। সাত. কৃষিবিমার ওপর থেকে কর রহিত করা। এ দাবির পক্ষে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ খাত ক্রমাগত বিপন্ন হচ্ছে। এর ফলে কৃষকরা কৃষিকাজে অনীহা প্রকাশ করছে। তাই কৃষকদের জন্য কৃষিবিমা অপরিহার্য। কৃষিবিমা উন্নয়নে কৃষিবিমা প্রিমিয়ামের ওপর মূল্য সংযোজন কর এবং কৃষিবিমা থেকে অর্জিত মুনাফার ওপর কর্পোরেট করহার রহিত করা প্রয়োজন। আট. অনলাইনভিত্তিক বিমার প্রিমিয়ামের ওপর মূল্য সংযোজন কর রহিত করা। এ দাবির পক্ষে বলা হয়, ভিশন-২০২০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ইতোমধ্যে বিমা খাত অনলাইন পলিসি ইসু্য করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যা গ্রাহকদের সর্বোচ্চ বিমাসেবা দেয়ার পথ সুগম করবে। আইসিটি কোম্পানিগুলোর মতো অনলাইনভিত্তিক পলিসির প্রিমিয়াম থেকে অর্জিত মুনাফার ওপর কর্পোরেট কর রহিত করা হলে গ্রাহকরা উৎসাহিত হয়ে বিমাসেবা গ্রহণ করবেন।