বিক্রি কমে যাওয়ায় চ্যালেঞ্জের মুখে টাটা

প্রকাশ | ২৫ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জাগুয়ার ল্যান্ড রোভার (জেএলআর) ইউনিটে বিক্রি কমে যাওয়া এবং ঋণের আকার বৃদ্ধি পাওয়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন ও বহুমুখী ব্যবসা সাম্রাজ্য টাটা গ্রম্নপ। এদিকে টাটা মোটরসের মুনাফা অর্ধেকে নেমে এসেছে। খবর বস্নুমবার্গ, টিএনএন, লাইভমিন্ট, দ্য হিন্দু। ২০০৮ সালে ব্রিটিশ বিলাবহুল গাড়ি নির্মাতা জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারকে ২৩০ কোটি ডলারে কেনে টাটা গ্রম্নপ। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন প্রান্তিক ধরে লোকসানে রয়েছে জেএলআর। যদিও চলতি সপ্তাহে ১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার নিট আয় দেখিয়েছে জাগুয়ার, তবে মালিক প্রতিষ্ঠান টাটা মোটরস লিমিটেডের কাছে এর ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ গাড়িবাজার চীনে চাহিদা কমে যাওয়ায় জাগুয়ারের বিক্রি কমেছে। জিএলআরের উত্থান-পতন টাটাকে বেশ ভালোই বিপদে ফেলেছে। গ্রম্নপটির ঋণ দাঁড়িয়েছে অন্তত ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার, যা ভারতের কনগেস্নামারেটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। মুম্বাইভিত্তিক বিনিয়োগ পরামর্শক ফার্ম কেআরআইএসের পরিচালক অরুণ কেজরিওয়াল বলেন, ঋণের ঝুঁকি কমাতে অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে টাটাকে। বর্তমানের জন্য টাটা মোটর ও টাটা স্টিল গ্রম্নপটির সমস্যাযুক্ত শাখা। চলতি অর্থবছরে টাটা মোটরসের মুনাফা প্রায় অর্ধেকে নেমে ১ হাজার ১০৯ কোটি রুপিতে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যে কোম্পানিটির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারের (জেএলআর) ভালো মুনাফা করতে না পারাকে ২০১৯ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে টাটার মুনাফা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তবে ২০১৯ অর্থবছরে এ কোম্পানিটির সবচেয়ে মন্দ অবস্থা ছিল চীনে, যা কোম্পানিটির সবচেয়ে বড় বাজার। ২০১৯ অর্থবছর যুক্তরাজ্যে জেএলআরের বিক্রি প্রায় ৬ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৭১০ কোটি পাউন্ডে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরে টাটা মোটরসের বিক্রি সর্বসাকল্যে ৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৮৬ হাজার ৪২২ কোটি রুপিতে দাঁড়িয়েছে। ভারতের বাজারে গাড়ি কম বিক্রি হওয়াও কোম্পানিটির মুনাফা হ্রাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ। যেখানে গত অর্থবছর কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা মার্জিন ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ, তা চলতি অর্থবছরে হ্রাস পেয়ে প্রায় অর্ধেকে তথা ৩ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এ অর্থবছরে টাটা মোটরসে মোট লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩১ হাজার ৩৭১ কোটি রুপি। যদিও বিক্রি ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩ লাখ কোটি রুপিতে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রতিবেদনে জেএলআর ও ফ্রান্সের পিএসএ গ্রম্নপ একীভূত হওয়ার কথা বলা হলেও সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। জেএলআর কম মুনাফা করায় চলতি অর্থবছরের টাটা মোটরসের নেতিবাচক নগদ প্রবাহ ছিল ৯ হাজার ১৬৬ কোটি রুপি। কোম্পানিটি আগামী অর্থবছরে ১২০ কোটি রুপি ব্যয় হ্রাস করতে চায়, যা চলতি অর্থবছরের ব্যয় হ্রাসের সমান। জেএলআর বাদ দিয়ে টাটা মোটরস অন্যান্য খাত বাবদ চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ১৮ হাজার ৫৬১ কোটি রুপি রাজস্ব আয় থেকে ১০৬ কোটি রুপি মুনাফা করেছে। ২০১৮ অর্থবছরে কোম্পানিটি একই সময়ে ১৯ হাজার ১৭৩ কোটি রুপি আয় থেকে লোকসান করেছিল ৫০০ কোটি রুপি। টাটা মোটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গুয়েনটার বুটশেংক জানিয়েছেন, বিভিন্ন ধরনের অনিশ্চয়তার কারণে অদূর ভবিষ্যতে কোম্পানির বর্তমান অবস্থার তেমন কোনো হেরফের হচ্ছে না। চলমান বিভিন্ন সমস্যা কাটিয়ে ওঠার কৌশল হিসেবে কোম্পানিটির আগামীতে নতুন পণ্য তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও পণ্য সংখ্যা আগের তুলনায় কমিয়ে আনা হবে। অন্যান্য অনেক কিছুর মধ্যে কোম্পানিটির পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।