তারল্য সংকটেও বেড়েছে কৃষিঋণ

চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষ হতে বাকি আছে আরও দুই মাস। লক্ষ্যমাতায় পৌঁছতে এই দুই মাসে কৃষিঋণ বিতরণ করতে হবে ৩ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।

প্রকাশ | ২৬ মে ২০১৯, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যাযাদি রিপোর্ট চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছে ১৮ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫৭২ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) মোট কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছিলো ১৭ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে জানা যায়, দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা কৃষি ঋণের পরিসংখ্যানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার লক্ষ্যমাত্রার ৮৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। চলতি অর্থবছরে কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। অর্থবছর শেষ হতে বাকি আছে আরো দুই মাস। লক্ষ্যমাতায় পৌঁছতে এই দুই মাসে কৃষি ঋণ বিতরণ করতে হবে ৩ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, যদিও ব্যাংক খাতের অবস্থা নাজুক। তারল্য সংকটে নিমজ্জিত অধিকাংশ ব্যাংক। তারপরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় মার্চে কৃষি ঋণ ব্‌িতরণ তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। তারা আরও বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব বাণিজ্যিক ব্যাংককেই তাদের বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হবে। যদি তারা তা পূরণে ব্যর্থ হয় তবে সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক। কৃষিঋণের জন্য বরাদ্দ অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যবহার করা যাবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক মাসের ব্যবধানে কৃষি ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ ১১১.০৮ কোটি টাকা। গত মার্চ মাসে কৃষি ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ২ হাজার ১৫০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৬১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত আট মাসে এ ঋণ বিতরণ ছিলো খুবই ধীরগতিতে। শেষ দিকে এসে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য কৃষি ঋণ বিতরণের গতি বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অর্থবছরে (২০১৮-১৯) ব্যাংকগুলোর তেমন কোনো তারল্য সংকট ছিলো না। সেজন্য এ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি ছাড়িয়েছে কৃষিঋণ বিতরণ। এ বছর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। অথচ এবছর কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছিলো ২১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের উপাত্ত বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত সময়ে কৃষি ঋণ বিতরণ গত অর্থবছরের তুলনায় কম হয়েছিলো ২ দশমিক ৮১ শতাংশ বা ৪০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ব্যাংক খাতের তারল্য সংকটের কারণেই এসময়ে কৃষিঋণ বিতরণ কম হয়েছিলো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এখাতে ঋণ বিতরণের এমন ধীরগতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নীতিমালায় পরিবর্তন আনে। নীতিমালা অনুযায়ী, স্বল্পমেয়াদি ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার ডাউন পেমেন্টে ছাড়াই ঋণ বিতরণ করা যাবে। এই নীতি করা হয়েছিলো মূলত কৃষকদের সুবিধা বাড়িয়ে দেয়ার জন্য। ২০১৫ সাল থেকে কৃষকদের ঋণ পুন:তফসিলের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এবার বোরো মৌসুমে আরেকটি বিষয় সবার নজরে এসেছে, কৃষি শ্রমিকের সংকট। চাহিদামতো শ্রমিক না পেয়ে বা পেলেও শ্রমিকের উচ্চমজুরির অর্থ জোগাড় করতে না পেরে সময়মতো ধান কেটে ঘরে তুলতে পারেননি অনেক কৃষক। এ অবস্থায় কৃষির বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োজন যান্ত্রিকীকরণ। প্রায় ৯২ শতাংশ জমি তৈরিতে যন্ত্রের ব্যবহার হলেও অন্যান্য ধাপে যন্ত্রের ব্যবহারে বেশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের কৃষি। মাত্র ৩ শতাংশ জমিতে যন্ত্রের মাধ্যমে সার প্রয়োগ করা হচ্ছে, ট্রান্সপস্নান্টিং, হারভেস্টিংয়ের ক্ষেত্রে তা এখনো ১ শতাংশের নিচে রয়ে গেছে। শুকানো কিংবা স্টোরিংয়ের ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার এখনো ৩-৪ শতাংশের মধ্যে। ফলে শ্রমিক সংকটে এসব কাজ করা কৃষকের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়ে। তাই এসব ক্ষেত্রে আরো বাড়াতে হবে যন্ত্রের ব্যবহার বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষকের খরচ কমিয়ে আনা এবং উৎপাদন বাড়াতে প্রতি বছরই বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। কৃষি উপকরণ বিশেষ করে সার, ডিজেল, বিদ্যুতে আর্থিক সহযোগিতা বাড়ানো হয়েছে। আবার কয়েক বছর ধরে বাজেটে কৃষিতে ভর্তুকির জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা করে বরাদ্দ রাখছে সরকার। কিন্তু বরাদ্দকৃত ভর্তুকির অর্থ কোনো বছরই পুরোটা খরচ করতে পারে না সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এছাড়া সরকারের ভর্তুকির অর্থের সিংহভাগই চলে যাচ্ছে সারে। তাই কৃষির অন্যান্য উপখাত এবং যান্ত্রিকীকরণেও ভর্তুকির ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে এখন প্রায় আট কোটি টনের বেশি কৃষি ও খাদ্যপণ্য উৎপাদন হচ্ছে। অথচ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ধান, চাল ও গমের মজুদক্ষমতা মাত্র ২১ লাখ টন। এর বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু শস্যগুদামে চাল রয়েছে, যার ধারণক্ষমতা তিন লাখ টনের নিচে। আর বেসরকারিভাবে আলুর জন্য হিমাগার থাকলেও সরকারিভাবে সামান্য বীজ আলুর হিমাগার রয়েছে। সব মিলিয়ে খাদ্যশস্য মজুদের জন্য সরকারের ধারণ সক্ষমতা প্রয়োজনের তুলনায় ৫ শতাংশেরও কম। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. আবদুল লতিফ মন্ডল বলেন, খাদ্যশস্যের মজুদ সক্ষমতা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি খাদ্যশস্য মজুদ রাখতে হবে পরিমাণমতো। আবার কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত করতে হলে নজর দিতে হবে উৎপাদন খরচ কমানোয়। তা না হলে কৃষিকে প্রতিযোগী সক্ষম করা যাবে না। এজন্য উপকরণ সহায়তা বাড়ানোয় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।