বিকশিত হয়নি তৈরি পোশাকের বাইরের কোনো খাত

পোশাকের রপ্তানি ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে ১১৮ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৪৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। পোশাকবহির্ভূত পণ্যের রপ্তানি ৮১ কোটি ১০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০০ কোটি ডলার

প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
নীতিগত সমস্যা, অর্থায়নে বাধা, অবকাঠামোর অভাব ও পোশাকবহির্ভূত রপ্তানিকারকদের দুর্বল দর-কষাকষির ক্ষমতাকে রপ্তানি আয়ের বাধা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তৈরি পোশাকের বাইরে সম্ভাবনা থাকার পরও আরও অনেক খাত বিকশিত হয়নি। ফলে দেশের পণ্য রপ্তানিতে তৈরি পোশাকের হিস্যা এখনো ৮১ শতাংশের বেশি। রপ্তানি পণ্যে বৈচিত্র্য আনতে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে আলোচিত হলেও অগ্রগতি হয়েছে সামান্য। বাস্তবে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণের কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না। তৈরি পোশাক এখনো রপ্তানিতে আধিপত্য বজায় রেখেছে। দেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে ১১৮ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৪৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। পোশাকবহির্ভূত পণ্যের রপ্তানি ৮১ কোটি ১০ লাখ ডলার থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০০ কোটি ডলার। রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো (ইপিবি)-এর তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে এক হাজার ৬১১ কোটি ৭১ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময় ছিল এক হাজার ৪৩৪ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। রপ্তানি বেড়েছে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ। শুধু নভেম্বরে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৩০ কোটি ৬১ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ২৮৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। রপ্তানি বেড়েছে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে আয় এসেছে তিন হাজার ৬০০ কোটি ডলার; যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ দশমিক ২৯ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, তৈরি পোশাকের চেয়ে অন্য খাতে প্রণোদনা কম হওয়ায় নতুন পণ্য রপ্তানি বিকশিত হচ্ছে না। বহুমুখীকরণে সব পণ্যের সহায়তা সমান হওয়া উচিত। ইপিবির তথ্যমতে, অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪৯ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের একই সময় ছিল ৪৫ কোটি ৭২ লাখ ডলার। বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, যা আগের বছর থেকে বেড়েছে ৭ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৩৪ কোটি ১৭ লাখ ডলার। আগের বছরের চেয়ে রপ্তানি কমেছে ৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। হোম টেক্সটাইল রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৩২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ০৩ শতাংশ। বাংলাদেশে রপ্তানি বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করা নিয়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়নশীল দেশগুলোর গড়ের তুলনায় চারগুণ বেশি কেন্দ্রীভূত। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ রপ্তানি বাজার বহুমুখীকরণের অভাবেও ভুগছে। এ বিষয়ে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ে (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, 'রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণ সম্প্রসারণে বাধা হিসেবে রয়েছে নীতিগত সমস্যা, অর্থায়ন, অবকাঠামোর অভাব ও পোশাকবহির্ভূত রপ্তানিকারকদের দুর্বল দর-কষাকষির ক্ষমতা। পোশাক ও পোশাকবহির্ভূত পণ্যের রপ্তানিকারকরা কার্যত সমান সুবিধা পাচ্ছেন না।' তিনি বলেন, 'তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকরা বিনাশুল্কে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করতে পারেন। পোশাকবহির্ভূত পণ্যের রপ্তানিকারকদের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে উচ্চ শুল্ক দিতে হয়। পোশাকবহির্ভূত রপ্তানিকারকরা পোশাক রপ্তানিকারকদের মতো সহজে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা পান না। রপ্তানি বৈচিত্র্য ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে এও বড় বাধা। অবকাঠামো ও যথাযথ সরকারি সহায়তার অভাবে কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়ছে না।' তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, জ্বালানি সংকট, দক্ষ জনবলের অভাব আর আধুনিক প্রযুক্তির স্বল্পতায় প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় দেশের তৈরি পোশাক খাত পিছিয়ে পড়ছে। একই সঙ্গে বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে পোশাক রপ্তানির ওপর একক নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে খাতসংশ্লিষ্টরা বলেন, পোশাক উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিযোগী দেশগুলোর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হলেও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। কোরিয়া ইতোমধ্যে সামনে চলে এসেছে। ব্রাজিল যাচ্ছে। ভিয়েতনামও যাওয়ার পথে। উদ্যোক্তারা জানান, এলসিস্বল্পতার কারণে তারা কাঁচামাল আমদানি করতে পারছেন না। এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, 'নীতিগত সংস্কারের অভাবে দেশের রপ্তানি খাতে পোশাকবহির্ভূত পণ্যের পরিমাণ কমেছে। লজিস্টিক সাপোর্ট ও নতুন প্রযুক্তি গ্রহণসহ কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে এসব খাতে সঠিক সহায়তা প্রয়োজন।'