আইএমএফ মিশনের সঙ্গে বৈঠক

ভর্তুকির বকেয়া চলতি অর্থবছরেই পরিশোধ করতে চায় সরকার

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
বিদু্যৎ ও সারে সরকারের ভর্তুকির অর্থ গত অর্থবছর থেকে বকেয়া হতে শুরু করে। বিশেষ বন্ড ইসু্যর মাধ্যমেও এ বকেয়া পুরোপুরি শোধ করা সম্ভব হয়নি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকেও বকেয়া পরিশোধের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরের মধ্যেই ভর্তুকির বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে আইএমএফকে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থছাড়ের আগে ৩ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছে আইএমএফের মিশন। এবারের মিশনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থাটির গবেষণা শাখার উন্নয়ন সামষ্টিক অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জ্জিও। এরই মধ্যে মিশনটির কর্মকর্তারা অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ (এনবিআর) সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যেখানে ভর্তুকির বকেয়া অর্থ পরিশোধ, মূল্যস্ফীতি, বিদু্যতের মূল্যবৃদ্ধি, রাজস্ব আহরণসহ সামষ্টিক অর্থনীতির বিভিন্ন দিক উঠে আসে বলে বৈঠক সূত্রে জানা যায়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নেওয়া সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসার বিষয়টি নিয়ে আইএমএফ উদ্বেগ জানিয়েছে। এ বিষয়ে তারা কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে। বিদু্যৎ ও সারে ভর্তুকির বকেয়া পরিশোধের জন্য সংস্থাটির পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে কয়েক ধাপে বকেয়া পরিশোধ পরামর্শ দিয়েছে তারা। অবশ্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চলতি অর্থবছরের মধ্যেই এ বকেয়া পরিশোধ করা হবে বলে আইএমএফকে জানানো হয়েছে। গত অর্থবছরে ৩৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি বকেয়া ছিল। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সম্প্রতি সংশোধিত বাজেটে আগের বছরে বকেয়া ও চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ মিলিয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির দায় পরিশোধের জন্য রাখা হয়েছে। সরকার চাইছে এ অর্থবছরের মধ্যেই বকেয়া পরিশোধ করে দিতে। গত জুনে বাংলাদেশের জন্য ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদনের পর আইএমএফের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিদু্যৎ ও সারের ভর্তুকি পরিশোধের জন্য বন্ড ইসু্য না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। সে সময় নতুন করে বকেয়া পুঞ্জীভূত হওয়া এড়ানোর পাশাপাশি জমে থাকা বকেয়া পাঁচ বছরের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে বাজেট থেকে পরিশোধ করার পরিকল্পনা করা হবে বলে আইএমএফের কাছে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে বাংলাদেশ। লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে রাজস্ব আহরণ করতে না পারার কারণে আইএমএফের পক্ষ থেকে ভর্তুকির দায় কমাতে বিদু্যতের মূল্যবৃদ্ধির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে বিদু্যতের দাম বাড়ানো হলে সেটি মূল্যস্ফীতিকে আরও উসকে দেবে এমন শঙ্কার কারণে সরকার এখনই বিদু্যতের দাম বাড়াতে রাজি নয়। রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারায় আইএমএফ এটিকে ইন্ডিকেটিভ টার্গেটস (আইটি) বা নির্দেশক লক্ষ্যমাত্রার পরিবর্তে কোয়ান্টিটেটিভ পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়া (কিউপিসি) বা পরিমাণগত সক্ষমতার মানদন্ড হিসেবে শ্রেণিবিন্যাস করতে চাইছে। তাছাড়া বিদ্যমান যেসব স্ট্রাকচারাল বেঞ্চমার্ক (এসবি) বা কাঠামোগত মাপকাঠি রয়েছে সেগুলো নতুন করে নির্ধারণ করে দেবে সংস্থাটি। \হআগামীকাল আইএমএফ মিশন অর্থ বিভাগের সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করবে। বৈঠকে মিশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য আরও কী কী নতুন শর্ত দেওয়া হবে সেটি ঠিক হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সামষ্টিক অর্থনীতির সংকট মোকাবিলায় ২০২২ সালের শেষের দিকে আইএমএফের দ্বারস্থ হয় বাংলাদেশ। এরই মধ্যে ঋণ কর্মসূচির আওতায় তিন কিস্তিতে ২২৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিয়েছে বহুজাতিক দাতা সংস্থাটি। ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে। গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্র্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে আইএমএফের কাছে নিয়মিত ঋণ কর্মসূচির বাইরে আরও অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা চেয়েছে। ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নের বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বর্তমানে সংস্থাটির মিশন বাংলাদেশে রয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাড়তি সহায়তা চাওয়ার বিষয়টিও মূল্যায়ন করবে এ মিশন। প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী বোর্ডের সভায় বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে এ ঋণ পাবে বাংলাদেশ। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালীন বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। গত বছরের ফেব্রম্নয়ারিতে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং গত বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ গত জুনে তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ছাড় করেছে সংস্থাটি। সব মিলিয়ে তিন কিস্তিতে ঋণের ২২৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ।