ভোক্তা অধিদপ্তরে ই-কমার্স সংক্রান্ত অভিযোগের ৯১ শতাংশই নিষ্পত্তি হয়নি

প্রকাশ | ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের গত তিন বছরে দায়ের করা ই-কমার্স সংক্রান্ত ৬৩ হাজারের বেশি অভিযোগ জমা আছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ছয় হাজার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯১ শতাংশ অভিযোগই নিষ্পত্তি হয়নি। আর সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ইভ্যালি ডটকমের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযোগের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৮৮৩। ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ভোক্তা অধিদপ্তর বলছে, ২০২১ সালের নভেম্বর থেকে গত ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত সংস্থাটিতে ই-কমার্স সংক্রান্ত ৬৩ হাজার ৩৮০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৯১৯টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছে সংস্থাটি। এখনো ৫৭ হাজার ৪৬১টি অভিযোগ অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। শতকরা হিসাবে প্রায় ৯১ শতাংশ অভিযোগ এখনো নিষ্পত্তি করতে পারেনি ভোক্তা অধিদপ্তর। জানা যায়, ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযোগের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ই-কমার্স খাত। বেশির ভাগ অভিযোগ নির্ধারিত সময়ে পণ্য সরবরাহ না করা, দাম বেশি নেয়া, প্রতিশ্রুত সেবা না দেয়া, মানহীন পণ্য বা সেবা দেয়া ইত্যাদি বিষয়ে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অভিযোগ দোকানপাট, বিপণিবিতান ও বাজারে পণ্য বিক্রি নিয়ে। এছাড়া টেলিযোগাযোগ সেবা নিয়েও গ্রাহকদের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এত বিপুল পরিমাণ অভিযোগ অনিষ্পন্ন থাকার কারণ জানতে চাইলে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলীম আখতার খান বলেন, 'ই-কমার্সের বেশির ভাগ অভিযোগই অর্থসংক্রান্ত। কিন্তু ভোক্তা অধিদপ্তর অর্থসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কাজ করে না। পরবর্তী সময়ে মানবাধিকার বিবেচনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এটা ট্যাকল দেয়। মন্ত্রণালয় আমাদের বলেছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো যখন তাদের পেমেন্ট গেটওয়ে চালু করবে, তখন টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে তোমরা সহায়তা করবে। ফলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো এখন কোনো টাকা দিচ্ছে না। আবার এটা নিয়ে যে আমরা নোটিস করব, এ সেবা দেয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। আমাদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্র ১০টি। এর মধ্যে ই-কমার্সের অর্থসংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তি আমরা করতে পারব না।' ভোক্তা অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২৯টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে ৬৩ হাজার ৩৮০টি অভিযোগ জমা পড়েছে ভোক্তাদের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ইভ্যালি ডটকমের বিরুদ্ধে। ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৮৮৩। এরপর দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ই-অরেঞ্জ ডটকম। সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ৮ হাজার ১০টি। তৃতীয় সর্বোচ্চসংখ্যক অভিযোগ পড়েছে কিউকম ডটকমের বিরুদ্ধে। সংস্থাটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ৬ হাজার ৫১৩টি। এরপর যথাক্রমে আলেশামার্ট ডটকমের বিরুদ্ধে ৬ হাজার ৭৬টি, দালাল পস্নাস ডটকমের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৪২০টি, আলাদিনের প্রদীপ ডটকমের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৩৯৯টি এবং সিরাজগঞ্জশপ ডটকমের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৩২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। উলেস্নখ্য, গত ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান, গ্রাহক ও বিক্রেতাদের পাওনা অর্থসংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তালিকা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেল। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান, গ্রাহক ও বিক্রেতাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে, যেসব ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের কাছে গ্রাহক ও বিক্রেতাদের অর্থ পাওনা রয়েছে, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা চলতি বছরের ১৪ নভেম্বরের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দাখিল করার জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনুরোধ করা হলো। তাছাড়া যেসব গ্রাহক অর্থ পরিশোধ করে ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য পাননি এবং বিক্রেতারা ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানকে পণ্য সরবরাহ করে বিক্রয়মূল্য বুঝে পাননি, তাদের চলতি বছরের ১৪ নভেম্বর মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে শুধু অনলাইন পোর্টালে (যঃঃঢ়ং://ফহপৎঢ়.ঢ়ড়ৎঃধষ.মড়া.নফ/) অভিযোগ দায়েরের পরামর্শ দেয়া হলো।