২০২৫ সালে পাঁচ অনুঘটকের ওপর নির্ভর করবে বৈশ্বিক পুঁজিবাজার

প্রকাশ | ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
চলতি বছরে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে লেনদেন রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে। এতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে জেনারেটিভ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (জেনএআই) উত্থান ও কোভিড-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার। বিশ্লেষকদের মতে, এ ইতিবাচক প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে ২০২৫ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি আরো সম্প্রসারণ হতে পারে এবং পুঁজিবাজারে সে ইতিবাচক প্রভাব অব্যাহত থাকতে পারে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সভরেন ডেট বা সরকারি ঋণ, বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি, ডলার সরবরাহ, 'ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন' কোম্পানির ভবিষ্যৎ এবং একীভূতকরণ ও অধিগ্রহণ (এমঅ্যান্ডএ) চুক্তি। খবর ইউরো নিউজ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি ব্রম্নকস ম্যাকডোনাল্ডের পূর্বাভাস অনুসারে, নতুন বছরে নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি এবং কম সুদহার বাজার পারফরম্যান্সকে চালিত করবে।এ সময় মার্কিন বাজারে ইতিবাচক গতি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। ক্রফোর্ড ফান্ড ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজিং পার্টনার ক্রিস ক্রফোর্ড বলেন, '২০২৫ সালে করছাড়ের সম্প্রসারণের কারণে এটি সম্ভব হতে পারে।' অন্যদিকে বিনিয়োগ পস্নাটফর্ম এজে বেল শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক বছর আশা করছে। বিশেষ করে বিনিয়োগকারীরা যদি সঠিক কৌশল অবলম্বন করে, তবে 'বিগ টেক' খাতে সম্প্রসারণের সাক্ষী হবে বাজার। এজে বেলের বিনিয়োগ পরিচালক রাস মোল্ড সতর্ক করে জানান, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে বাজার দ্রম্নত বদলে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তিনি বলেন, '?বিনিয়োগকারীদের মার্কিন শিল্পপতি জে পল গেটির একটি উক্তি স্মরণে রাখা উচিত। তিনি একবার বলেছিলেন, "?দ্রম্নত পরিবর্তনের সময় অভিজ্ঞতা আপনার সবচেয়ে বড় শত্রম্ন হতে পারে।'' কারণ যারা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তখন তারা পিছিয়ে পড়েন।' রাস মোল্ডের মতে, যতক্ষণ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত, স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ও নিম্ন সুদহার আশানুরূপ হবে, ততক্ষণ এ প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। এর মধ্যে কোনো একটি প্রভাবক পরিবর্তন হলে তা বাজারের ধারাবাহিকতা ব্যাহত করবে। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিটকয়েনের মূল্য আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এবং প্রথমবারের মতো ১ লাখ ডলারের ঘর পেরিয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ক্রিস ক্রফোর্ড বলেন, 'বিটকয়েনের সাম্প্রতিক উত্থান এখনই শেষ হয়নি। ২০২৫ সালে আর্থিক পরামর্শক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর পোর্টফোলিওতে বিটকয়েন আরো বেশি অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।' তবে আর্থিক বাজারকে ঋণ এবং শক্তিশালী ডলারের মতো ঝুঁকিগুলোর প্রতি সতর্ক থাকতে হবে, যা বাণিজ্য ও প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ২০২৫ সালে বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে সামনে রয়েছে সরকারি ঋণ। বড় অর্থনীতিগুলো ক্রমবর্ধমান ঋণের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে বলে ধারণা অর্থনীতিবিদদের। ব্রম্নকস ম্যাকডোনাল্ডের পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫ সালে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। এ বছর যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে ঋণ-জিডিপি অনুপাত হবে যথাক্রমে প্রায় শতভাগ ও ১১২ শতাংশ। অর্থাৎ দেশগুলোর জাতীয় ঋণ বার্ষিক অর্থনৈতিক আউটপুটের সমান বা বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে ঋণ-জিডিপি অনুপাত ১২৩ শতাংশ এবং এটি আরো বাড়তে পারে। রাস মোল্ড বলেন, 'ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিগুলো সরকারের ঋণ বৃদ্ধির হারকে গতিশীল করতে পারে। দেশটি এরই মধ্যে রেকর্ড ৩৬ ট্রিলিয়ন বা ৩৬ লাখ কোটি ডলার ঋণ করেছে। এ ঋণের বার্ষিক সুদ ১ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।' বিশ্লেষকরা বলছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতি চীন ও ইউরোজোন, বিশেষ করে জার্মানির প্রবৃদ্ধিকে পিছিয়ে দিতে পারে। অবশ্য ক্রিস ক্রফোর্ড বলছেন, একটি বড় বাণিজ্যযুদ্ধের সম্ভাবনা অতিরঞ্জিত বলে প্রমাণিত হতে পারে।