নতুন বছরে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে ঝুঁকি কমার প্রত্যাশা

প্রকাশ | ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

অর্থ-বাণিজ্য রিপোর্ট
বিদায়ী বছর জুড়েই অস্থিরতা দেখা গেছে পুঁজিবাজারে। প্রায় ১ লাখ বিও হিসাব কমার পাশাপাশি আইপিও খরা ছিল বাজারে। বিনিয়োগ হারিয়েছি পথেও বসেছেন অনেকেই। এছাড়াও অব্যাহত পতনে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন কমেছে উলেস্নখযোগ্য হারে। তবু নতুন বছওে ভালো কিছুর প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালে বড় অঙ্কের বাজার মূলধন কমার পাশাপাশি মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। তবে গড় লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। আর এতেই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকিও অনেকটাই কমে এসেছে। মূলত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি নির্ণয় করা হয় মূল্য আয় অনুপাত (পিই) দিয়ে। সাধারণত ১০-১৫ পিইকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ঝুঁকি মুক্ত ধরা হয়। আর কোনো পিই ১০-এর নিচে চলে গেলে, তাকে অবমূল্যায়িত বা বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ ধরা হয়। বাজার পর্যালোচনায় দেখাগেছে ২০২৪ সালের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর সার্বিক মূল্য আয় অনুপাত দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৫০ পয়েন্টে। এ হিসাবে এখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ ঝুঁকি নেই বললেই চলে। বছরের শুরুতে ডিএসই'র পিই ছিল ১৩ দশমিক ১২ পয়েন্ট। অর্থাৎ এক বছরে পিই কমেছে ১৩ দশমিক ৬২ পয়েন্ট। এদিকে ২০২৪ সাল শেষে ৬ লাখ ৬২ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। যা বছরের শুরুতে ছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। বাজার মূলধন কমার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ কমেছে। ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ ঝুঁকি নির্ণয়ের ক্ষেত্রে পিই একটি গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডিকেটর। তবে পিই একমাত্র ইন্ডিকেটর নই। অনেক সময় পিই বেশি থাকলেও কোম্পানির গ্রোথ ভালো হলে তা বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় হতে পারে। তিনি বলেন, সার্বিক শেয়ারবাজারের পিই ১০ এর নিচে নেমে গেলে সেটাকে বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বিবেচনা করা যেতে পারে। অতীত ইতিহাস দেখা গেছে, বাজারের সার্বিক পিই ১০ এর নিচে বেশিদিন থাকেনি। পিই ১০ এর নিচে নামলে, তা আবার ১০ ওপরে উঠে আসে। তবে বাজারের সার্বিক পিই দিয়ে সব কোম্পানিকে মূল্যায়ন করা যায় না। সুতরাং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ভালো প্রতিষ্ঠান বাছাই করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোম্পানির গ্রোথ, লভ্যাংশসহ সার্বিক আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিম্ন পিই নিঃসন্দেহে বাজারে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময়। তবে পিই একমাত্রই ইন্ডিকেটর না। গত ১৫ বছরের দুঃশাসনের কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। সেই আস্থা বর্তমান কমিশন এখনো ফিরিয়ে আনতে পারেনি। নিম্ন পিই বাজারে আস্থা সংকটের ইঙ্গিতও বহন করে। ২০২৪ সালের শুরুতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ছিল ৬ হাজার ২৪৬ পয়েন্ট। সেখান থেকে সূচকটি কমে বছর শেষে ৫ হাজার ২১৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এক বছরে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ১ হাজার ৩০ পয়েন্ট। ২০২৪ সালে শেয়ারবাজারে মোট ২৩৫ দিন লেনদেন হয়েছে। বছরটিতে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ৬৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ফলে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩২ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগের বছর ২০২৩ সালে ২৪৪ কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয় ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। দৈনিক গড় লেনদেন হয় ৫৭৮ কোটি ১১ লাখ টাকা। এদিকে ২০২৪ সালজুড়ে শেয়ারবাজারে আইপিও খরাও ছিল। এ বছর মাত্র ৪টি কোম্পানির আইপিও আসে। তার আগের বছর ২০২৩ সালেও মাত্র চারটি কোম্পানির আইপিও আসে। পর পর দুই বছর এত কম আইপিও আসতে আর দেখা যায়নি। এছাড়াও ২০২৪ সালের প্রথমদিন শেয়ারবাজারে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি। আর ২০২৪ সালের শেষ কার্যদিবস শেষে বিও হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৪৫১টি। অর্থাৎ এক বছরে বিও হিসাব কমেছে ৯১ হাজার ১০০টি।